এক দশক ধরে বৈশ্বিক শিরোপা জিততে পারছে না ভারত। সবশেষ গতকাল লন্ডনের ওভালে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছে রোহিত শর্মার দল। এ নিয়ে গত ১০ বছরে চারবার বৈশ্বিক আসরে রানার্সআপ হয়েছে ভারতীয়রা। ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয়ের পর দলটি হেরেছে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১৭ চ্যাম্পিয়নস ট্রফি এবং ২০২১ ও ২০২৩ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে। এই চার ফাইনালের একটিতেও তারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেনি।
শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চে ভারতের বারবার ব্যর্থ হওয়ার কারণ অনেক হতে পারে। তবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে কাল হারের কারণ হিসেবে বেশির ভাগ সাবেক ক্রিকেটার আইপিএলকেই দুষছেন। ফাইনাল চলার সময়ই ভারতীয় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিসিসিআইকে জাতীয় দল ও আইপিএলের মধ্যে অগ্রাধিকার ঠিক করতে বলেছিলেন রবি শাস্ত্রী। রিকি পন্টিংও দাবি করেন, ভারতের খেলোয়াড়রা আইপিএলে নিয়ে ব্যস্ততার কারণেই টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে পারেনি।
তবে সুনীল গাভাস্কারের মতে, ব্যাটসম্যানদের শট নির্বাচনে ভুল ও সিনিয়রদের দায়িত্বহীনতার কারণে ব্যর্থ হয়েছে ভারত। বারবার একই ভুলের কারণে রোহিত–কোহলিদের শাস্তিও দাবি করেছেন গাভাস্কার।
প্রথম ইনিংসে যেখানে অস্ট্রেলিয়া প্রথম ৪ উইকেট হারিয়ে তুলেছিল ৩৬১ রান, সেখানে ভারত চতুর্থ উইকেট হারিয়ে ফেলে মাত্র ৭১ রানে। এখানেই ভারত পিছিয়ে পড়েছে বলে মনে করেন এই কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান। ভারতীয় সাময়িকী ইন্ডিয়া টুডের ‘স্পোর্টস টুডে’র সঙ্গে আলোচনায় উত্তরসূরিদের তিনি একরকম ধুয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘এত অভিজ্ঞতার পর তোমরা কোনো ধরনের অজুহাত দেখাতে পারো না। শুবমান গিল অসাধারণ ছন্দে ছিল। সে-ই একমাত্র ব্যাটসম্যান যে (প্রথম ইনিংসে) শট না খেলেই আউট হয়েছে। হয়তো বলবে, গিলেরও শট খেলা উচিত ছিল। কিন্তু আমি বোঝাতে চাইছি, সে অন্তত টেস্ট ক্রিকেট খেলতে চেয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে যে বলে আউট হয়েছে, সেটা একটু বেশি বাউন্স করেছে।’
রোহিত-কোহলি-পূজারাদের উদ্দেশে গাভাস্কার বলেছেন, ‘অজুহাত দেখাতে এসো না। তোমাদের একদম সৎ ও স্পটভাষী হতে হবে। তোমরা ভুল করেছ, সেটা মেনে নাও এবং স্বীকার কর। ভুলের কারণে ওদের শাস্তি দিতে চাইলে দেওয়া উচিত। কেউ আমাকে বলুন, শুরু থেকে ওদের ব্যাটিং কৌশল কেমন ছিল। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের সঙ্গে এই অ্যাপ্রোচ কি মানানসই ছিল? টস জিতে আগে ব্যাটিং কিংবা বোলিং যে সিদ্ধান্তই নিক না কেন, দল নির্বাচনে অতিমাত্রায় রক্ষণশীল হয়ে পড়েছিল কি না জানা দরকার। এই প্রশ্নগুলো ওদের করতে হবে।’
গত ১০ বছরে বৈশ্বিক শিরোপা না জিতলেও দুবার এশিয়া কাপ জিতেছে ভারত-২০১৬ ও ২০১৮ সালে। এক দশকে দলটির বড় সাফল্য এই মহাদেশীয় টুর্নামেন্টেই সীমাবদ্ধ। গাভাস্কার মনে করেন, আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টের বড় ম্যাচগুলোয় যাঁরা ভালো করতে পারেন না, তাঁদের বাদ দিয়ে নতুনদের সুযোগ দেওয়া উচিত, ‘এভাবে চলতে থাকলে ভারত এশিয়া কাপ ছাড়া অন্য কিছু জিতবে না। যদি কোনো ব্যাপার নিয়ে লুকোচুরি করা হয়, তাহলে বৈশ্বিক শিরোপা জেতা সম্ভব নয়। এসব ক্ষেত্রে যদি কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তাহলে নিয়ে নাও। নতুন কাউকে সুযোগ দাও। ব্যর্থতার বিষয়ে পরে ভাবা যাবে।’
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালের ব্যর্থতা ভুলতে এক মাস সময় পাচ্ছে ভারত। জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে ভারতীয় দল। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের চার ভেন্যু ছাড়াও খেলা হবে যুক্তরাষ্ট্রে।