হারমানপ্রীতের আচরণ আপত্তিকর ও কুৎসিত, মনে করেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়ক
একটা জায়গায় হারমানপ্রীত কৌরকে সফলই বলতে হবে। বাংলাদেশ ও ভারত নারী দলের মধ্যে এমন জমজমাট একটা তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পর আলোচনা বেশি হওয়ার কথা ছিল মাঠের পারফরম্যান্স নিয়ে। বিশেষ করে প্রথমবারের মতো ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ জেতা বাংলাদেশ দলকে নিয়ে, যারা দারুণ শক্তিশালী ভারত দলের বিপক্ষে সিরিজ ১-১ ড্রও করেছে। সমালোচনা হওয়ার কথা ছিল ফেবারিট ভারতীয় দলের এমন হোঁচট খাওয়া নিয়েও। কিন্তু এসব কিছুই হচ্ছে না, কারণ সব আলোচনাই হচ্ছে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীতকে নিয়ে। সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ শেষে তাঁর অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ নিয়ে।
ক্রিকেট–বিশ্বে সমালোচনার ঝড় বইছে। হারমানপ্রীতের নিজের দেশ ভারতের পুরুষ ও নারী দলের সাবেক খেলোয়াড়েরা অনেকেই তাঁর আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। সেই তালিকায় এবার যোগ হলো হারমানপ্রীতের পূর্বসূরি ডায়ানা এডুলজির নামও। মিরপুরে সেদিন ম্যাচ শেষে হারমানপ্রীতের আচরণ আপত্তিকর ছিল বলে মন্তব্য করেছেন ভারত নারী ক্রিকেটের কিংবদন্তি, সাবেক অধিনায়ক এডুলজি। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে লেখা এক কলামে এডুলজি এমনও বলেছেন যে ব্যাট হাতে নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতেই হয়তো এমন কুৎসিত আচরণ করেছেন হারমানপ্রীত।
২২ জুলাই মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের শেষ ম্যাচে আউট হওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে না পেরে ক্ষুব্ধ হয়ে ব্যাট দিয়ে স্টাম্প ভাঙেন হারমানপ্রীত। খেলা শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ওই ম্যাচের আম্পায়ারিংকে ‘প্যাথেটিক’ বলেও মন্তব্য করেন। এরপর ট্রফি নিয়ে বাংলাদেশ দলের ফটোসেশনের সময় কটাক্ষ করেন নাহিদা সুলতানাদের।
ম্যাচ শেষে হারমানপ্রীত বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য আম্পায়ারদেরও ডাকছে, এই ইঙ্গিত করছে যে আম্পায়াররাও বাংলাদেশ দলের অংশ ছিল এবং বাংলাদেশের হয়েছে খেলেছে, এটা ছিল খুবই আপত্তিকর। আমি খুবই বিরক্ত হয়েছি মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টাই ম্যাচের পর ওই দৃশ্যগুলো দেখেভারত নারী ক্রিকেটের কিংবদন্তি, সাবেক অধিনায়ক ডায়ানা এডুলজি
আইসিসি এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও জানা গেছে, স্টাম্প ভাঙা ও আম্পায়ারিংয়ের সমালোচনা করায় হারমানপ্রীতকে ম্যাচ ফির মোট ৭৫ শতাংশ জরিমানা করা হয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে ৪ ডিমেরিট পয়েন্ট। এর ফলে পরবর্তী একটি টেস্ট কিংবা দুটি ওয়ানডে বা দুটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিষিদ্ধ হবেন হারমানপ্রীত।
তবে শাস্তি যা–ই হোক, ভারত অধিনায়কের এমন আচরণ খেলাটির জন্য মোটেই ভালো উদাহরণ নয় বলে মনে করেন এডুলজি। নিজের কলামে তিনি লিখেছেন, ‘ম্যাচ শেষে হারমানপ্রীত বাংলাদেশ দলের সঙ্গে ছবি তোলার জন্য আম্পায়ারদেরও ডাকছে, এই ইঙ্গিত করছে যে আম্পায়াররাও বাংলাদেশ দলের অংশ ছিল এবং বাংলাদেশের হয়েছে খেলেছে, এটা ছিল খুবই আপত্তিকর। আমি খুবই বিরক্ত হয়েছি মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টাই ম্যাচের পর ওই দৃশ্যগুলো দেখে। আমি অনেক দিন ধরেই ক্রিকেট দেখি, কিন্তু ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত যে আচরণ করেছে, সেটা কখনো কাউকে করতে দেখিনি। বাংলাদেশে যা হয়েছে, সেটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত।’
ব্যাট হাতে নিজের ব্যর্থতার কারণেই হারমানপ্রীত সীমা ছাড়ানো এমন অখেলোয়াড়সুলভ আচরণ করেছেন বলে মনে করেন এডুলজি, ‘আমি জানি হারমানপ্রীত বদমেজাজি খেলোয়াড় নয়। হয়তো সে রান করতে পারেনি বলে এমন কুৎসিত আচরণ করেছে। সেদিন পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বারবার প্রতিবাদ করতে গিয়ে সে সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’
শুধু হারমানপ্রীত নন, ভারত দলই প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারছে না বলে মনে করেন এডুলজি। সে জন্য ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে পরামর্শ এডুলজির, ‘বিসিসিআই ওদের সম্ভাব্য সবকিছুই দিচ্ছে। সমস্যা হচ্ছে, খেলোয়াড়েরা নিজেদের তারকা ভেবে খেলছে, ক্রিকেটে মনোযোগ দিচ্ছে না। এটাই সময় বিসিসিআইয়ের এদিকে মনোযোগ দেওয়ার। এ রকম আচরণ মেনে নেওয়া যায় না।’