কারস্টেন ভারতের কোচ হওয়ায় অবসর নিতে চেয়েছিলেন টেন্ডুলকার
ভারতীয় দলের প্রধান কোচের চাকরিটা যেমন চ্যালেঞ্জের, একই সঙ্গে বিশাল চাপের। ক্রিকেটপাগল ১৪০ কোটি মানুষের প্রত্যাশার চাপ বহন করা তো আর যেনতেন ব্যাপার নয়। আর দল যদি হয় তারকায় ঠাসা, তাহলে ধারাবাহিক সাফল্য এনে দিতে না পারলে টিকে থাকায় দায়!
গ্রেগ চ্যাপেলের কপালে যেমন এমন কিছু জুটেছিল। ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব থেকে ভারত বিদায় নিলে চাকরি হারাতে হয় তাঁকে। ওই বছরের ডিসেম্বরে গ্যারি কারস্টেন যখন দায়িত্ব নেন, ভারত তখন আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরা এক দল। সে দলকেই কারস্টেন তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। এনে দিয়েছেন ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা।
তবে ভারতের প্রধান কোচ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকান কারস্টেনের পথচলা শুরু থেকেই সহজ ছিল না। তাঁর কোচ হওয়ার খবরে ড্রেসিংরুমে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি নাখোশ ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। অবসর নিতেও নাকি মনস্থির করে ফেলেছিলেন ভারতের ‘ব্যাটিং জিনিয়াস’।
সম্প্রতি ইউটিউবে ‘দ্য ফাইনাল ওয়ার্ড ক্রিকেট পডকাস্ট’ অনুষ্ঠানে কোচিং ক্যারিয়ারের এ রকম অজানা অনেক বিষয় খোলাসা করেছেন কারস্টেন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক অস্ট্রেলিয়ান সাংবাদিক অ্যাডাম কলিন্সকে বিশ্বকাপজয়ী কোচ বলেছেন, ‘ভারতীয় দলের দায়িত্ব নেওয়ার পর অনেক খুঁত চোখে পড়েছে। সে সময় প্রত্যেক খেলোয়াড়কে জানা ও বোঝা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছিল। ওরা দলের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারবে কি না, আনন্দসহকারে ক্রিকেট খেলতে পারবে কি না—এসব নিয়েও ভাবতে হয়েছে।’
শচীন টেন্ডুলকার আর কারস্টেনকে সমসাময়িক ক্রিকেটারই বলা যায়। ২০০৪ সালে কারস্টেন যখন খেলোয়াড়ি জীবনকে বিদায় বলেন, টেন্ডুলকার তখন ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে। ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে ভারতের বিদায়ের পর সেই টেন্ডুলকারই অবসর নিতে চেয়েছিলেন। কারস্টেন তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করলেও ‘অবসরের ভূত’ কিছুতেই মাথা থেকে নামাতে চাইছিলেন না।
এ ব্যাপারে ৫৫ বছর বয়সী কোচ বলেছেন, ‘আমি কোচ হওয়ায় টেন্ডুলকার ভীষণ অখুশি ছিল। খেলাটাকে সে উপভোগ করছিল না। যদিও সে জানত, ক্রিকেটকে তখনো অনেক কিছু দেওয়ার বাকি। আবার ওর এটাও মনে হচ্ছিল যে অবসর নেওয়া উচিত। তখন ওর সঙ্গে কথা বলা জরুরি হয়ে পড়েছিল। ওকে বোঝালাম, দলের জন্য তোমাকে বিশাল অবদান রাখতে হবে।’
দল যতই তারকায় ভরপুর হোক, কোচ-অধিনায়কের সম্পর্ক ও বোঝাপড়া ভালো না হলে সাফল্য ধরা দেয় না। মাঝেমধ্যে সাফল্য এলেও ড্রেসিংরুমে গুমোট পরিবেশ পরিস্থিতি জটিল করে তোলে। তবে মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো অধিনায়ক থাকায় কারস্টেন ছিলেন সৌভাগ্যবান। ‘মহাতারকা সংস্কৃতি’ আর ব্যক্তিগত মাইলফলকের চিন্তাধারা বদলে দলের জয়ে অবদান রাখতে পারা পারফরমার তৈরি করেছিলেন কারস্টেন-ধোনি জুটি।
কারস্টেনের মস্তিষ্কপ্রসূত কৌশল আর মাঠে ধোনির নেতৃত্বে তা বাস্তবায়ন ভারতকে এনে দিয়েছে একের পর সাফল্য। দলকে টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের চূড়ায় তুলেছেন, উপমহাদেশের বাইরে সিরিজ জেতাতে শিখিয়েছেন আর পরম আকাঙ্ক্ষার বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন।
নেতৃত্বগুণই ধোনিকে টেন্ডুলকারের চেয়ে আলাদা করে তুলেছে বলে মনে করেন কারস্টেন, ‘যেকোনো কোচ এমন খেলোয়াড় প্রত্যাশা করে, যে দলের জন্য খেলবে, নিজের নাম কামানোর জন্য নয়। ভারত এমন একটা জায়গা, যেখানে মহাতারকাদের নিয়ে উন্মাদনা অনেক বেশি। ব্যক্তিগত প্রয়োজন মেটাতে আপনি নিজেই হারিয়ে যাবেন। তবে ধোনি ছিল দুর্দান্ত নেতা। সে সব সময় দল নিয়ে ভাবত, ট্রফি জিততে চাইত, সাফল্য পেতে উদ্গ্রীব ছিল। ব্যাপারগুলো সে কখনো লুকিয়ে রাখেনি। ওর এই গুণ অনেককে কক্ষপথে ফিরিয়ে আসে। শচীনও (টেন্ডুলকার) আবার ক্রিকেট উপভোগ করতে শুরু করে।’
ধোনির সঙ্গে তাঁর জুটিকে ‘একসঙ্গে অবিশ্বাস্য ভ্রমণ’ আখ্যায়িত করেছেন কারস্টেন, ‘এমএস (ধোনি) ও আমি অধিনায়ক-কোচের এমন জুটি গড়ে তুলেছিলাম, যা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। চূড়ান্ত সাফল্য দিয়েই (বিশ্বকাপ জয়) আমরা এই অবিশ্বাস্য ভ্রমণ শেষ করেছি।’