জয় থেকে ৩ উইকেট দূরে বাংলাদেশ
তাইজুল-মিরাজরা জোরালো আবেদন করছেন। কখনো বল খুঁজে নিচ্ছে নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানদের প্যাড, না হয় ব্যাট-প্যাড, শর্ট লেগ না হয় সিলিতে থাকা ফিল্ডার লাফিয়ে ক্যাচ লুফে নিচ্ছেন। আম্পায়ার আঙুল তুলছেন। দেখতে দেখতে স্কোরবোর্ডে উইকেট–সংখ্যা ১, ২, ৩ থেকে ৭-এ এসে ঠেকেছে। বাংলাদেশও প্রতিটি উইকেটের সঙ্গে একটু একটু করে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণের ঘোর তৈরি হচ্ছিল, নিউজিল্যান্ডকে টেস্টে হারানোর স্বপ্ন।
গত বছরের জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে এই কিউইদেরই টেস্টে হারানোর রোমাঞ্চের বাতাস বইতে শুরু করেছে চা–বাগানে ঘেরা সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। একবার তো কিউইদের নিজেদের আঙিনায় হারানো হলো। এবার ঘরের মাঠে হারানোর পালা। যেখানে ২০১৬ সালে ইংল্যান্ড ও ২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর পর বড় দলের বিপক্ষে কোনো জয় পায়নি বাংলাদেশ।
এবার স্মরণীয় টেস্টের অধ্যায়ে ২০২৩ সালের সিলেট টেস্টটাও জায়গা করে নেওয়ার পালা। চতুর্থ ইনিংসে ৩৩২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে নিউজিল্যান্ড দিন শেষ করেছে ৭ উইকেটে ১১৩ রান নিয়ে। জয়ের জন্য আগামীকাল শেষ দিন বাংলাদেশের দরকার ৩ উইকেট, নিউজিল্যান্ডের ২১৯ রান।
লক্ষ্য যখন ৩৩২ রান, টপ অর্ডার থেকে একটা বড় জুটি তো লাগেই। বাংলাদেশ আজ নিউজিল্যান্ডকে সেই জুটি গড়তে দেয়নি। নতুন বল কাজে লাগিয়ে তিন নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানকে আউট করে চা-বিরতিতে গিয়েছে বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় সেশন শেষে নিউজিল্যান্ডের রান ছিল ৩ উইকেটে ৩৭। প্রথম ওভারেই নিউজিল্যান্ড ওপেনার টম ল্যাথামকে আউট করেন শরীফুল ইসলাম। অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে হালকা মুভমেন্টে বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন বাঁহাতি ওপেনার। কোনো রানই করতে পারেননি ল্যাথাম।
পরের উইকেটের জন্য বাংলাদেশকে অপেক্ষা করতে হয় ৯ ওভার। তাইজুল ইসলাম ইনিংসের দশম ওভারে প্রথম ইনিংসে শতক করা কেইন উইলিয়ামসনকে আউট করেন। দারুণ আর্ম বলে এলবিডব্লিউ করেন অভিজ্ঞ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানকে। ২৪ বল খেলে ১১ রানে থামে উইলিয়ামসনের ইনিংস। এ নিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে তৃতীয়বার উইলিয়ামসনের বিপক্ষে বল করে তিনবারই তাঁর উইকেট নিলেন তাইজুল।
পরের উইকেটটি নেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ইনিংসের ১৩তম ওভারে মিরাজ বল শুরুর আগে মুশফিকুর রহিমের পরামর্শে ডিপ ফাইন লেগে থাকা নাঈম হাসানকে শর্ট ফাইন লেগে আসতে বলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। ওভারের চতুর্থ বলে ঠিক সেই জায়গাতেই ক্যাচ দেন হেনরি নিকোলস। ভালো জায়গা থেকে ফ্লাইট দেওয়া বলে সুইপ করতে গিয়ে নিকোলস ধরা পড়েন। তিনি করেন ২ রান।
দিনের শেষ সেশনের শুরুতে আরও একবার নিউজিল্যান্ড ব্যাটিংয়ে আঘাত হানেন তাইজুল। মিরাজের সঙ্গে তাইজুলের যুগলবন্দীতে স্বাচ্ছন্দ্যে খেলতে পারছিলেন না ডেভন কনওয়ে। সুইপ, রিভার্স সুইপ খেলে চাপ সরানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ২৪তম ওভারে তাইজুলের বল মিড-অফের দিকে ব্লক করতে গিয়ে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে প্যাডে লেগে যায় শর্ট লেগে থাকা শাহাদাতের হাতে। আউট হওয়ার আগে ৭৬ বলে তিন চারে কনওয়ে করেন ২২ রান।
টম ব্লান্ডেলের ইনিংসও বড় হতে দেননি তাইজুল। ২৮তম ওভারে তাইজুলের মিডল স্টাম্প থেকে নিখুঁত টার্ন ও বাড়তি বাউন্সে বেরিয়ে যাওয়া বলটি খেলতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে বসেন ব্লান্ডেল। সামনের পায়ে খেলার বল পেছনের পায়ে খেলতে গিয়ে ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়ে নুরুল হাসানের গ্লাভসে। ১৬ বল স্থায়ী ইনিংস থামে ৬ রানে। মাত্র ৬০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে নিউজিল্যান্ড তখন বড় বিপদে।
ড্যারেল মিচেল আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে বিপদ কাটানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু হতে দেননি আরেক স্পিনার নাঈম হাসান। গ্লেন ফিলিপসকে অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে থেকে টার্ন করে ভেতরে আসা বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন নাঈম। আম্পায়ার আউট না দিলেও রিভিউ নিয়ে ফিলিপসকে ড্রেসিংরুমে ফেরায় বাংলাদেশ।
জয়ের জন্য বাংলাদেশের তখন দরকার আরও ৪ উইকেট। তাইজুল সংখ্যাটাকে ৩-এ নামিয়ে আনেন ৪৪তম ওভারে। ৯ রান করা কাইল জেমিসনকে আর্ম বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ৭ রান করা ইশ সোধিকে নিয়ে দিনের বাকি সময়টা পার করেন মিচেল। ৮৬ বল খেলে মিচেল অপরাজিত ৪৪ রানে। প্রথম ইনিংসের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও এখন পর্যন্ত ৪ উইকেট পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম।
এর আগে প্রথম সেশনে ৩ উইকেটে ২১২ রান করা বাংলাদেশ অলআউট হয় ৩৩৮ রানে। নাজমুলের ১০৫ রানের পর অর্ধশত করেছেন মুশফিকুর রহিম (৬৭) ও মেহেদী হাসান মিরাজ (৫০*)। নিউজিল্যান্ডকে ৩৩২ রানের লক্ষ্য দেয় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের হয়ে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নিয়েছেন এজাজ প্যাটেল।