টানা ১২ ইয়র্কারে বোঝা গেল হাসানকে
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ইনিংসে তখনো তিন ওভার বাকি। ৪ উইকেটে দলটির রান ১৪৫। খুশদিল শাহ ও জাকের আলীর ব্যাকলিফট তখন উঁচুতে। কারণ, ওই মুহূর্তে বল মেরে সীমানাছাড়া করাই ছিল লক্ষ্য। খুশদিল খেলছিলেন ১২ বলে ২০ রানে, জাকের ১৪ বলে ২২। দুজনেরই স্ট্রাইক রেট দেড় শর ওপারে।
রংপুর রাইডার্সের হাসান মাহমুদ তাঁর শেষ স্পেলটা করতে এলেন তখনই। ১৮তম ওভারে প্রথম বলেই স্ট্রাইকে থাকা জাকেরের স্টাম্পের গোড়া তাক করে বল ছুড়লেন হাসান। উইকেটকিপার নুরুল হাসানকে নিয়ে এলবিডব্লিউর জোরালো আবেদন করলেন। আম্পায়ারও সাড়া দিলেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে এ যাত্রায় বেঁচে যান জাকির।
পরের বলেও হাসানের উদ্দেশ্য ছিল অভিন্ন। আবার দুর্দান্ত ইয়র্কার। জাকের কোনোরকমে সেটি মিড অনে ঠেলে দৌড়ে এক রান বের করেন। স্ট্রাইকে আসা খুশদিলের জন্যও হাসানের পরিকল্পনা পাল্টায়নি। এবারও ইয়র্কার! বলে কোনোমতে ব্যাট ছুঁইয়ে স্টাম্প বাঁচান এই পাকিস্তানি।
যে ছন্দ নিয়ে ‘ডেথ ওভারে’ গিয়েছে কুমিল্লার ইনিংস, হাসানের করা ১৮তম ওভারের প্রথম তিন বলেই সেই ছন্দ গায়েব। হাসানের নিখুঁত ইয়র্কার তখন কুমিল্লার ভয়ের কারণ। সে ওভারে পরের তিনটি বলও একই লেংথে করলেন হাসান। তাতে এল মাত্র ৩ রান। ক্রিকবাজের ধারাভাষ্যকার হাসানের বলগুলোর ব্যাখ্যায় ভিন্ন ভিন্ন শব্দ ব্যবহার করছিলেন, কখনো ফুল লেংথ ডেলিভারি, কখনো ব্লকহোল। হাসানের ইয়র্কারময় সে ওভার থেকে রান এসেছে মাত্র ৫, কুমিল্লার রান ৪ উইকেটে ১৫০।
৯তম ওভারে বোলিংয়ে এসে আফগান পেসার নাভিন উল হক হাসানের বজ্র আঁটুনি ঢিলে করে দেন এলোমেলো বল করে। ২টি ছক্কা আর ১টি চারে খুশদিল-জাকের জুটি ১৯ রান বের করেন। তাতে হাসানের গড়ে দেওয়া মঞ্চটা হারায় রংপুর।
কিন্তু ২০তম ওভারে হাসান আবারও ‘ইয়র্কার-মেশিন’ নিয়ে হাজির। শেষ ওভারের প্রথম তিনটি বলই ছিল ব্যাটসম্যানের স্পাইক বরাবর। তাতে রান এসেছে মাত্র ২। চতুর্থ বলেও একই পরিকল্পনায় বল করতে গিয়ে লেংথ মিস করেন হাসান, তাতে হাফ ভলি হয়ে যাওয়া বলে ছক্কা মারেন জাকের। হাসান তবু অবিচল, মার খেয়েও নিজের পরিকল্পনা থেকে সরেননি। ফলও মিলল পরের বলেই। এবারও ফুল লেংথের ইয়র্কার, তাতে আউট জাকের। ইনিংসের শেষ বলে স্ট্রাইকে আসেন আন্দ্রে রাসেল। নতুন ব্যাটসম্যানকেও ইয়র্কারে ‘আতিথ্য’ দিয়েছেন হাসান। আর শেষ বলটা এত নিখুঁত ছিল যে রাসেল সেটিতে ব্যাটও ছোঁয়াতে পারেননি।
ডেথ ওভারে হাসানের বোলিং বিশ্লেষণ ছিল এমন—টানা ১২টি ইয়র্কার, রান ১৩, উইকেট ১টি। ৪ ওভারের স্পেলে হাসান ৩১ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। এবারের বিপিএলে লিগ পর্বের ১২ ম্যাচ শেষে হাসানের শিকার ১৫ উইকেট। শীর্ষ উইকেটশিকারিদের তালিকায় হাসান তৃতীয়। বিপিএলজুড়ে তিনি বোলিং করেছেন মিডল থেকে ডেথ ওভারে। বেশির ভাগ উইকেটও এসেছে ডেথ ওভারে। জাতীয় দলের এই পেসারের সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপও ভালো কেটেছে। ৪ ম্যাচে নেন ৬ উইকেট ।
হাসানের স্পেলের সময় বাউন্ডারির পাশে সম্প্রচারকদের সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন। বিপিএলে তরুণ ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্স প্রসঙ্গে বলছিলেন, ‘কিছু খেলোয়াড় আমরা দেখছি অসাধারণ পারফর্ম করছে, ব্যাটিং-বোলিং প্রতিটি বিভাগে। এগুলো আমাদের নজরে আছে। নির্বাচক প্যানেল ভালোমতোই মনিটরিং করছে। আমাদের সামনে ২০২৪ বিশ্বকাপ আছে, ওটার জন্য এখন থেকে প্রস্তুতি শুরু করছি। আমাদের পুলে (জাতীয় দলের আশপাশে) খেলোয়াড়ের সংখ্যা বাড়াচ্ছি। আশা করছি যে একটা ভালো লক্ষ্য নিয়ে ২০২৪ বিশ্বকাপের মিশন সামনে রেখে এগোতে পারব।’