টেন্ডুলকারের যে রেকর্ড ভাঙতে চাইবেন না মুশফিক
শচীন টেন্ডুলকারকে রেকর্ডের বরপুত্র বললে মোটেও অত্যুক্তি হয় না। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটিংয়ে ছোটখাটো থেকে বড় বড় অনেক রেকর্ডই ভারতীয় কিংবদন্তির। সর্বোচ্চ রান, সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি, সর্বোচ্চ ফিফটি—এমন অনেক রেকর্ডই টেন্ডুলকারের। তবে তাঁর এমন একটি রেকর্ড আছে যেটি কেউ টপকে যেতে চাইবেন না! মুশফিকুর রহিমের জন্য ঠিক এ কারণেই আপনার খারাপ লাগতে পারে। মুশফিক চাইলেও যে রেকর্ডটি সম্ভবত এড়াতে পারবেন না!
সেটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হারের রেকর্ড। হারতে কারই-বা ভালো লাগে! আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে মুশফিকুর রহিম আবার সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হেরেছেন।
বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে মুশফিকের অভিষেকই সবার আগে—২০০৫ সালে। ১৮ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ইতিহাসে তিন সংস্করণ মিলিয়ে মুশফিকই ম্যাচ খেলেছেন সবচেয়ে বেশি—৪৪২। তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ দলের হার মুশফিকেরই সবচেয়ে বেশি দেখার কথা। ঘটেছেও ঠিক সেটাই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২৪৭ ম্যাচ হেরেছেন মুশফিক—বাংলাদেশ দলের হয়ে এত বেশি ম্যাচ হারেননি আর কেউ।
কিন্তু যদি প্রশ্ন করা হয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে? মুশফিক সেখানেও অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেকের চেয়ে এগিয়ে। সরল ভাষায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারা ক্রিকেটারদের মধ্যে শীর্ষ তিনে আছেন মুশফিক। তালিকাটা এমন—শচীন টেন্ডুলকার (২৫৬), মাহেলা জয়াবর্ধনে (২৪৯) ও মুশফিকুর রহিম (২৪৭)। টেন্ডুলকার ও জয়াবর্ধনের হারের পরিসংখ্যান একটি চোখ রাঙানিও দিচ্ছে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক ম্যাচ হারের রেকর্ডটা কিন্তু মুশফিকের হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
বাংলাদেশ দলের হয়ে আর মাত্র ১০ ম্যাচ হারলেও অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডটি যোগ হবে মুশফিকের ঝুলিতে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ম্যাচ হারের শীর্ষ দশে আছেন আরও দুজন বাংলাদেশি ক্রিকেটার—২২৮ ম্যাচ হেরেছেন সাকিব আল হাসান এবং তামিম ইকবাল হেরেছেন ২২৫ ম্যাচ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ম্যাচ হারের পরিসংখ্যানে সাকিব ৯ম, তামিম ১০ম।
বাংলাদেশের হয়ে হেরে যাওয়া ২৪৭ ম্যাচে ৩০২ ইনিংসে ২৯বার ক্রিজে অপরাজিত ছিলেন মুশফিক। ২৯.১৭ ব্যাটিং গড়ে ৯ সেঞ্চুরিসহ ৪২টি ফিফটিও করেছেন। কোনো রান না করে আউট হয়েছেন ২৪বার। এবার সবচেয়ে বেশি ম্যাচ হারা ভারতের কিংবদন্তি টেন্ডুলকারের পরিসংখ্যানে তাকানো যাক।
হেরে যাওয়া ২৫৬ ম্যাচের মধ্যে ৩১২ ইনিংসে ৪ বার ক্রিজে অপরাজিত ছিলেন টেন্ডুলকার। ৩৪.৬৫ গড়ে ২৫ সেঞ্চুরিসহ ৫৩টি ফিফটিও পেয়েছেন টেন্ডুলকার। কোনো রান না করে আউট হয়েছেন ১৯ বার। আর এই তালিকায় দ্বিতীয় লঙ্কান কিংবদন্তি জয়াবর্ধনে।
শ্রীলঙ্কার হয়ে তাঁর হেরে যাওয়া ২৪৯ ম্যাচে ২৯৪ ইনিংসে ২৬.০৬ ব্যাটিং গড়ে ৮ সেঞ্চুরি ও ৪৭টি ফিফটি পেয়েছেন জয়াবর্ধনে। টেন্ডুলকারের মতোই ১৯ বার আউট হয়েছেন কোনো রান না করেই। মুশফিক অবশ্য এই শীর্ষ তিনে একটি জায়গায় দ্বিতীয়—রানে। হেরে যাওয়া ২৪৭ ম্যাচে মুশফিকের রানসংখ্যা ৭৯৬৪, জয়াবর্ধনের হেরে যাওয়া ২৪৯ ম্যাচে তাঁর রানসংখ্যা ৭৫৮১। টেন্ডুলকারের হেরে যাওয়া ২৫৬ ম্যাচে তাঁর রানসংখ্যা ১০৬৭৩। হেরে যাওয়া ম্যাচের হিসাবে আর কেউ টেন্ডুলকারের মতো এত রান করতে পারেননি।
এবার জয়ের পরিসংখ্যানে তাকানো যাক। বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ জয়ের রেকর্ড সাকিব আল হাসানের। ১৭৪ ম্যাচ জিতেছেন বর্তমান বাংলাদেশ অধিনায়ক। মুশফিক কিন্তু তাঁর চেয়ে বেশি পিছিয়ে নেই।
১৭৩ ম্যাচ জিতে দুইয়ে মুশফিক। এরপর যথাক্রমে মাহমুদউল্লাহ (১৫৫), তামিম ইকবাল (১৪৩) ও মাশরাফি বিন মুর্তজা (১১৮)। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ম্যাচজয়ীদের তালিকায় অন্তত ১০০ ম্যাচ জেতা ক্রিকেটার এই পাঁচজনই। ৯৪ জয় নিয়ে ষষ্ঠ মোস্তাফিজুর রহমান।
তবে একটি ব্যাপার উল্লেখ না করলে হার-জিতের পার্থক্যটা সেভাবে বোঝা যায় না। সেটি হলো তিন সংস্করণ মিলিয়ে মোট ম্যাচের সংখ্যা—মুশফিক খেলেছেন ৪৪২ ম্যাচ, সাকিব খেলেছেন ৪২১ ম্যাচ, মাহমুদউল্লাহ ৩৮৯ ম্যাচ, তামিম ৩৮৫ ম্যাচ এবং মাশরাফি ৩০৮ ম্যাচ খেলেছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ের রেকর্ড অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অধিনায়ক রিকি পন্টিংয়ের। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৫৬০ ম্যাচের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ৩৭৭ ম্যাচই জিতেছেন পন্টিং। ৩৩৬ জয় নিয়ে এই তালিকার দুইয়ে ৬৫২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা জয়াবর্ধনে। ৩০৭ জয় নিয়ে তিনে টেন্ডুলকার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান ও সেঞ্চুরির মালিক টেন্ডুলকার ভারতের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে মোট ৬৬৪ ম্যাচ।