এশিয়া কাপের শিরোপা নয়, সাকিবের চাওয়া ধারাবাহিক উন্নতি
কোনো একটি নির্দিষ্ট টুর্নামেন্টে ভালো করা নয়, বরং উন্নতির ধারাবাহিকতাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন সাকিব আল হাসান। এশিয়া কাপ বা একটি সিরিজে চ্যাম্পিয়ন না হয়ে বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে ফেবারিট হিসেবে যেতে পারাটাই তাঁর লক্ষ্য, এমন জানিয়েছেন বাংলাদেশের নতুন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক। অধিনায়কত্ব নেওয়ার পেছনে কী কারণ ছিল, সেটি সরাসরি না বললেও এ দায়িত্ব নিয়ে বাড়তি তাড়না আছে বলে জানিয়েছেন সাকিব।
সাকিবের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রথম খেলবে এশিয়া কাপেই, যে টুর্নামেন্টে আগে ফাইনাল খেলার অভিজ্ঞতা আছে সাকিবের। যদিও টি-টোয়েন্টি সংস্করণে বাংলাদেশের রেকর্ড ভালো নয়, সেটি বারবার মনে করিয়ে দিয়েছেন তিনি। সাকিব চিন্তা করতে চান দীর্ঘমেয়াদেই, ‘লক্ষ্য আসলে উন্নতির গ্রাফটা যতটা (উঁচু করা যায়)… (এ কারণে) প্রক্রিয়াটা গুরুত্বপূর্ণ।’
টি-টোয়েন্টি দল নিয়ে ভাবনা কী, সেটি উদাহরণ দিয়েও বুঝিয়েছেন তিনি, ‘ধরেন, এশিয়া কাপে অনেক ভালো করলেন, চ্যাম্পিয়নই হলেন। কিন্তু বিশ্বকাপে ভালো করতে পারলেন না। তাহলে কিন্তু উন্নতির ধারাটা ঠিক হলো না। (আবার ধরেন) ২০২৪ সালে হয়তো বিশ্বকাপে আমরা সেরা দল, ২০২৬ সালেও হয়তো শেষ চারে যাওয়ার মতো। তখন আমরা ভালো দল। কিন্তু এশিয়া কাপ জিতলাম, পরে নিউজিল্যান্ডে সব হারলাম, বিশ্বকাপে হারলাম, আবার সিরিজ জিতলাম একটা—ও রকম হওয়ার চেয়ে এটা হওয়া অনেক ভালো। ভারত ২০০৭ সালের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপই জেতেনি। কিন্তু প্রতিবারই ফেবারিটের তালিকায় আছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।’
অধিনায়ক বা দল হিসেবে বিশ্বকাপ ধরে ধরে পরিকল্পনা করা উচিত কি না, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে আপাতত বিশ্বকাপের আগে যে সময় আছে, সেটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে বলেছেন সাকিব, ‘এখন যেটা ফোকাসের জায়গা, সেটা আগামী দুই-আড়াই মাস। এ সময়ে আমরা যতটা উন্নতি করতে পারি। আমাদের অনেক চোটের সমস্যা আছে। এখন যে সময় যাচ্ছে, যে পরিমাণ খেলা হচ্ছে, এটা সব সময় হবে। এই প্রতিকূলতার মাঝেও আমরা কীভাবে উন্নতি করতে পারি, সেটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’
আপাতত যা হাতে আছে, সেগুলোই কাজে লাগাতে বলছেন বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, ‘আমি বলছি না যে খেলাটার ধরন পুরোপুরি বদলে ফেলতে হবে। আমরা চাইলেই আমাদের শরীর হুট করে বড় করে ফেলতে পারব না। কিন্তু আমাদের যে রিসোর্স আছে, আমরা যেন তা ব্যবহার করতে পারি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমার কাছে তেল নেই। এখন তেল দিয়ে কী করতে পারি, সেটা ভেবে লাভ নেই। আমার কাছে গ্যাস আছে, তা দিয়ে কী কী কাজ করতে পারি, সেটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ। আমি বিশ্বাস করি, আমরা ভালো দল। আমরা যদি রিসোর্স ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি...আমি যদি একবার-দুইবার-তিনবার করে দেখাতে পারি, তাহলে বুঝতে হবে যে আমাদের সে সামর্থ্য আছে।’
সাকিব বারবারই বলেছেন ধারাবাহিকভাবে পারফরম্যান্স করে যাওয়ার কথা, ‘এটা হচ্ছে, আমরা কতটা ধারবাহিকভাবে করতে পারি, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। যেটা আমরা শেষ কিছুদিন করতে পারছি না। সেটা করতে পারলে জেতা শুরু করব। যদি হেরেও যাই, তাহলে শেষ ওভারে গিয়ে হেরে গেলাম। প্রতিটা ম্যাচ প্রতিযোগিতা করলাম। যেন মানুষ বোঝে যে আমাদের মধ্যে উন্নতির ছায়া আছে। এখনকার মতো না যে আগেই হেরে যাচ্ছি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসের ১০ ওভার হতে না হতেই হেরে যাচ্ছি। যতটা কাছে যাওয়া যায় প্রতিপক্ষের, ততটাই উন্নতির ছায়া দেখতে পারে আমাদের মধ্যে।’
টি-টোয়েন্টিতে তাঁদের ঘিরে মানুষের প্রত্যাশা কম, সেটিও মনে করেন তিনি, ‘বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে গত ১৬-১৭ বছরে তেমন কিছু করতে পারিনি। এখন টি-টোয়েন্টিটা এমন একটা জায়গায় চলে এসেছে, যেখানে অনেক ফোকাস করা, ইনভেস্ট করা-এই জায়গায় ধারবাহিকভাবে যেন ভালো করতে পারি সে চেষ্টা করা। আমি যা দেখছি, ৫-১০ বছর এই সংস্করণটা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি পরিচিত হবে।’
টি-টোয়েন্টিতে দীর্ঘমেয়াদে ধারাবাহিকতার কথা বললেও এশিয়া কাপে বাংলাদেশের লক্ষ্যটা আদতে কী থাকবে? সাকিব বাস্তবতা মানছেন এখানেও, ‘সুপার ফোরে খেলা উচিত। তবে প্রতিবারই লক্ষ্য নিয়ে যাই বড়, সেটি অর্জন করতে পারি না। আপনারাই তখন বলা শুরু করেন, বড় বড় কথা বলে গেলাম, গিয়ে কাজটা করতে পারলাম না। আমাদের লক্ষ্য-পরিকল্পনা আমাদের কাছেই থাক। ড্রেসিংরুমে আমরা জানি কীভাবে করব। আমার মনে হয় না, এগুলো এত বলার দরকার আছে।’