৩০ বছর পর ১ রানের টেস্ট জয় দেখল ক্রিকেট–বিশ্ব
টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্য সম্ভবত একেই বলে! নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় টেস্টটা যেন ৫০০ পৃষ্ঠার দীর্ঘ এক থ্রিলার উপন্যাস, যেখানে শুরুর গল্প ও আর শেষের পরিণতিতে কোনো মিলই পাওয়া যাবে না!
প্রথম ইনিংসে ফলো-অনে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ২২৬ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে স্বাগতিকেরা। কিন্তু কেইন উইলিয়ামসন ও টম ব্লান্ডেলের অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে রানের পাহাড়ে ওঠে কিউইরা। ইংল্যান্ডকে জয়ের লক্ষ্য দেয় ২৫৮ রান। টেস্ট ক্রিকেটটাকে টি-টোয়েন্টি বানিয়ে ফেলা ইংল্যান্ডের জন্য আজ শেষ দিনের একটা সময়ে এসে সেই লক্ষ্যকেই মনে হচ্ছিল এভারেস্টের মতো!
শেষ পর্যন্ত সেই এভারেস্ট আর জয় করতে পারেনি বেন স্টোকসের দল। নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্ট হেরে গেছে ১ রানে। প্রায় দেড় শ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এই ব্যবধানের জয় এই দ্বিতীয়বার দেখল বিশ্ব। এমন ঘটনা ক্রিকেট–বিশ্ব প্রথম দেখেছে ১৯৯৩ সালে। সেবার অ্যাডিলেডে ১ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
১ উইকেটে ৪৮ রান নিয়ে ইংল্যান্ড চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করার পরই রোমাঞ্চের অপেক্ষা করছিল ক্রিকেট-বিশ্ব। পঞ্চম দিন জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ২১০ রান, হাতে ছিল ৯ উইকেট। পঞ্চম দিনে ব্যাট করতে নেমে ৩২ রান তুলতেই ৫ উইকেটে ৮০ রান।
আগের দিন জ্যাক ক্রলির পর আজ একে একে আউট হয়ে ফেরেন ওলি রবিনসন, বেন ডাকেট, ওলি পোপ ও হ্যারি ব্রক। এ ধাক্কা সামলে নেন জো রুট ও বেন স্টোকস। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে ১২১ রানের জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে পৌঁছে দেন ২১০ রানে। এ পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ডের ঘুরে দাঁড়ানো জয়টা হাতের মুঠোয় মনে হচ্ছিল। পরের ১৪ রানের মধ্যে আবার ইংলিশদের তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ম্যাচের গতিপথটা ফের বদলে দেয় নিউজিল্যান্ড। ৩৩ রান করা স্টোকসকে প্যাভিলিয়নের পথ দেখান ওয়াগনার। সঙ্গী হারিয়ে মন টিকল না জো রুটেরও! ১১৩ বলে ৯৫ রানে দারুণ এক ইনিংস খেলা রুটকেও ফেরান শেষ দিন দুর্দান্ত বল করা ওয়াগনার।
দলীয় ২১৫ রানে স্টুয়ার্ট ব্রডও ফিরে যান। রোলারকোস্টার এ ম্যাচের রোমাঞ্চ যেন শেষই হচ্ছিল না। জ্যাক লিচকে সঙ্গে নিয়ে কিউইদের তোপ সামলে বেন ফোকস টেনে নিতে থাকেন দলকে।
জয় থেকে মাত্র ৭ রান দূরে থাকা অবস্থায় ফোকসও কাটা পড়েন টিম সাউদির বলে। সেখান থেকে ৭ রানের যাত্রাটা ইংল্যান্ডের জন্য অসম্ভবই মনে হচ্ছিল। ২৫৬ রানে ওয়াগনার জেমস অ্যান্ডারসনকে ফিরিয়ে দিলে সেই অসম্ভব আর সম্ভব হয়নি। রোমাঞ্চকর এক জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে নিউজিল্যান্ড।