বাংলাদেশ–নিউজিল্যান্ড: রফিকের স্মৃতি এবং চিদাম্বরমের উইকেট কি সত্যিই স্পিন–বান্ধব
চেন্নাইয়ের চিদাম্বরম স্টেডিয়ামের উইকেট স্পিন–বান্ধব—বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত সত্য হিসেবে ধরেই গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ড দলের খেলোয়াড়েরা কথা বলেছেন এ নিয়ে। কিউই অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন বলেছেন, ‘এটা (স্পিন) বড় ভূমিকা রাখে। আমরা সবাই জানি, চেন্নাইয়ে স্পিনাররা অতিরিক্ত সুবিধা পান।’
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন বলেছেন, ‘ভারত-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচে দেখেছি উইকেট স্পিনারদের যথেষ্ট সাহায্য করছে। যদি উইকেট এমন থাকে, তাহলে সেটা আমাদের স্পিনারদের সাহায্য করবে।’
বিশ্বকাপে এই মাঠে ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের পরিসংখ্যান পরে টানা যাবে। আগে ওয়ানডেতে চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে স্পিনার ও পেসারদের পারফরম্যান্স দেখে নেওয়া যাক। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে এই মাঠে প্রথম ওয়ানডে খেলা হয়। ২৬ বছরের ব্যবধানে এই মাঠে সর্বশেষ ওয়ানডেও খেলেছে ভারত ও অস্ট্রেলিয়াই—সেটা এবারের বিশ্বকাপে গত রোববার, যে ম্যাচে ৬ উইকেটে জিতেছে ভারত। এই ২৬ বছরে চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ২৪টি ওয়ানডেতে স্পিনারদের শিকার মোট ১২৯ উইকেট। পেসারদের শিকার ২০৫ উইকেট।
চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আজ রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়ার প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এখানকার উইকেট একটু মন্থর, যে কারণে স্পিনে বাঁকের পাশাপাশি অন্যান্য সুবিধাও পেয়ে থাকেন স্পিনাররা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যেমন ভালো বাঁক পেয়েছিলেন রবীন্দ্র জাদেজা। ভারতের এই স্পিনার একটু জোরের ওপর বল করেন। তাতে বলের বাঁক কমার কথা থাকলেও স্টিভেন স্মিথকে যে ডেলিভারিতে আউট করেছিলেন, সেটি এই বিশ্বকাপেই অন্যতম সেরা বল হতে পারে! অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে জাদেজা, রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও কুলদীপ যাদব মিলে মোট ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ১৯৯ রানে অলআউট হয়।
বিশ্বকাপ শুরুর দিন চিদাম্বরমের উইকেট নিয়ে স্টেডিয়ামের এক অফিশিয়াল সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছিলেন, ‘এটা কালো মাটির পিচ। ব্যাটসম্যানদের জন্যও সুবিধা থাকবে।’ কিন্তু বাস্তবতা হলো এই মাঠে সর্বশেষ ২৪ ওয়ানডে ইনিংসে কোনো দলই ন্যূনতম ৩০০ রানের দেখা পায়নি। চেন্নাইয়ের ঘরের ছেলে ভারতের সাবেক পেসার বালাজিও বিশ্বকাপের শুরুতে বলেছিলেন, ‘এখানে ব্যাট-বলে সমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। অক্টোবর বছরের ভালো সময়। তখন পিচের অবস্থা বেশ ভালো থাকে।’
এ মাঠে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ ৬ ওয়ানডেতে ১২ ইনিংস মিলিয়ে মোট ৮২ উইকেট পড়েছে। এর মধ্যে ৫৪ উইকেট পেসারদের। স্পিনারদের শিকার ২৮ উইকেট। পেসাররাও এই উইকেটে সাহায্য পান। নতুন বলে মুভমেন্টের কারণে সর্বশেষ ৫ ওয়ানডেতেই ইনিংসের শুরুর দিকে উইকেট পেয়েছেন পেসাররা। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেই যেমন ওপেনার মিচেল মার্শকে তৃতীয় ওভারেই ফেরত পাঠিয়েছিলেন ভারতের পেসার যশপ্রীত বুমরা। আর ভারতের ইনিংসে ২ ওভারের মধ্যে টপ অর্ডার তিনজনকে তুলে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা। যদি গত বছরের হিসাব করা হয়, তবে সেখানেও স্পিন ও পেসের মধ্যে সাফল্যের ব্যবধান খুব বেশি নয়। গত এক বছরে চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ২টি ওয়ানডেতে ১৭ উইকেট স্পিনারদের, ১৫ উইকেট পেসারদের। আর সর্বশেষ পাঁচ বছরের হিসাব বলছে, এখানে ৩ ম্যাচে পেসারদের শিকার ২৪ উইকেট, স্পিনাররা নিয়েছেন ১৭ উইকেট।
চিদাম্বরমে ২৬ বছরের ওয়ানডে ইতিহাসে কিন্তু স্পিনার ও পেসার মিলিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট একজন বাংলাদেশির—মোহাম্মদ রফিক! ৩ ম্যাচে ৮ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক এই স্পিনার। পেসারদের মধ্যে ৩ ম্যাচে সর্বোচ্চ ৭ উইকেট ভারতের সাবেক পেসার ও বর্তমান প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকারের। মজার ব্যাপার, রফিকের নেওয়া ৮ উইকেটের ২টি বাংলাদেশের হয়ে। ১৯৯৮ সালে ত্রিদেশীয় সিরিজে কেনিয়ার বিপক্ষে ৪৫ রানে ২ উইকেট নিয়েছিলেন রফিক। বাকি ৬ উইকেট এশিয়া একাদশের হয়ে আফ্রিকা একাদশের বিপক্ষে দুই ম্যাচ মিলিয়ে। ২০০৭ সালে অনুষ্ঠিত দুটি ওয়ানডের প্রথমটিতে ২ উইকেট নেওয়ার পর শেষ ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন রফিক।