বারবার যেভাবে ফিরে আসেন এনামুল
খবরটা ছড়িয়ে পড়ে গতকাল রাতেই। অসুস্থতায় এশিয়া কাপ খেলা হচ্ছে না লিটন দাসের। তাঁর জায়গায় শ্রীলঙ্কা যাচ্ছেন এনামুল হক। নামটা শুনে অনেকে নিশ্চয়ই অবাক হয়েছেন। অবাক হওয়ার যথেষ্ট কারণও আছে। এ মাসের শুরু থেকে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপ সামনে রেখে যে ৩২ জন ক্রিকেটারকে বাছাই করা হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে এনামুলের নাম ছিল না। সে সংখ্যাটা পরে নামিয়ে আনা হয় ২২-এ। এরপর সেখান থেকে ১৭ জন ক্রিকেটারকে নিয়ে সাজানো হয় এশিয়া কাপের দল।
এর বাইরে ৯ জন ক্রিকেটারকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে নিয়মিত অনুশীলনের মধ্যে রাখা হয়। প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের চাওয়া, জাতীয় দলের কেউ চোটে পড়লে এখান থেকেই বিকল্প ক্রিকেটার বাছাই করা হবে। এর কোথাও এনামুল ছিলেন না। তিনি ছিলেন চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে চলমান বাংলাদেশ টাইগার্স ক্যাম্পে।
লিটন সুস্থ হতে সময় নেওয়ায় একজন ডানহাতি উইকেটকিপার ব্যাটসম্যানের দরকার পড়ে জাতীয় দলে। বিসিবির বিকল্প তালিকায় ডানহাতি উইকেটকিপার কেউ না থাকায় এনামুলকে ডাকা হয়। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন প্রথম আলোকে এ ব্যাখ্যাই দিয়েছেন, ‘একজন উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান দরকার ছিল যে ডানহাতি। আমাদের হাতে এনামুলই ছিল।’
ভাগ্যক্রমে জাতীয় দলের দুয়ার খুলে যাওয়া এনামুলও নিশ্চয়ই অবাক। কারণ, গতকাল তিনি বাংলাদেশ টাইগার্সের ক্যাম্পে অনুশীলন করছিলেন। আজ দুপুরে সেই এনামুলই রওনা দিয়েছেন শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে। যাওয়ার আগে যে কথাগুলো বলে গেলেন, তাতে মনে হলো এনামুলও নিজের ভাগ্যকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন।
যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে এনামুল বলেন, ‘আমার বেশি কিছু বলার নেই। শুধু এটুকুই বলব, প্রচুর ভালোবাসা ও দোয়া ছিল। যে কারণে আজকে হয়তো বাংলাদেশ দলে আবার সুযোগ পেয়েছি। আপনারা দোয়া করবেন। আমি ইনশা আল্লাহ চেষ্টা করব সেরাটা দেওয়ার।’ এনামুল এটাও বলেছেন, ‘টাইগার্স ক্যাম্পে যেহেতু ছিলাম, (জেমি) সিডন্সের কোচিংয়ে ছিলাম। ভালো প্রস্তুতি হয়েছে। বাকিটা দেখি। সুযোগ যদি আসে, চেষ্টা করব। আপনারা দোয়া রাখবেন।’
এনামুলের এই অভিজ্ঞতা অবশ্য নতুন নয়। ২০১২ সালে ওয়ানডে অভিষেকের থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন জাতীয় দলের নিয়মিত ওপেনার। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের তিনটি সেঞ্চুরির তিনটিই এসেছে সে সময়। স্বাভাবিকভাবেই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন ওপেনিংয়ে বাংলাদেশের প্রথম পছন্দ। কিন্তু স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে বাউন্ডারি সীমানায় ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধে চোট পান তিনি। এর পর থেকে জাতীয় দলে তিনি অনিয়মিত।
২০১৮ সালে ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে আবার জাতীয় দলে জায়গা হয় এনামুলের। একই বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরেও সুযোগ হয় তাঁর। কিন্তু সে বছর ৭ ইনিংস খেলে মাত্র ৮৮ রান করেন এনামুল। একের পর এক ব্যর্থতায় বাদ পড়া এনামুলের সুযোগ হয় পরের বছর বাংলাদেশ দলের শ্রীলঙ্কা সফরে। সেই সফরে এক ম্যাচ খেলে ১৪ রান করেন তিনি।
এরপর এনামুলের জাতীয় দলে ফিরতে হয়েছে বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। ২০২২ সালের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ১৫ ইনিংসে ৮১.২৮ গড়ে ১১৩৮ রান করেন আবাহনীর এই ওপেনার। যেকোনো লিস্ট ‘এ’ টুর্নামেন্টে এক মৌসুমে এটিই সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আগের রেকর্ডটি ছিল টম মুডির। ১৯৯১ ইংল্যান্ডের সানডে লিগে তিনি ১৫ ম্যাচে করেছিলেন ৯১৭ রান। তালিকার সেরা পাঁচে এর পরে আছেন জিমি কুক, জ্যাক রুডলফ ও কার্ল হুপার।
ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফরম্যান্সের পুরস্কার হিসেবে ২০২২ সালের জিম্বাবুয়ে সফরে ডাক পড়ে এনামুলের। তবে ওপেনার হিসেবে নয়, তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে। দুই বছর পর জাতীয় দলে ফিরেই তিনি ৬২ বলে ৭৩ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। সেই ম্যাচে আবার চোটে পড়েন লিটন। চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে সিরিজ থেকেই ছিটকে পড়েন বাংলাদেশ দলের নিয়মিত ওপেনার। তাই পরের দুই ম্যাচে উদ্বোধনে সুযোগ হয় এনামুলের। দ্বিতীয় ম্যাচে ২০ রানে আউট হলেও সিরিজের শেষ ম্যাচে ৭১ বলে ৭৬ রানের আরও একটি দারুণ ইনিংস খেলে এই ৩০ বছর বয়সী।
কিন্তু এনামুলের দুর্ভাগ্য, একই বছর ডিসেম্বরে ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে সিরিজটা একেবারেই ভালো যায়নি। মিরপুর ও চট্টগ্রামে অনুষ্ঠেয় সেই সিরিজের তিন ম্যাচে এনামুলের রান ছিল ১৪, ১১ ও ৮। যে কারণে পরের ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পরবর্তী সিরিজে তাঁকে আর রাখা হয়নি। তবে এনামুল ঠিকই লড়ে গেছেন। এ বছরের ঢাকা লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি, আবাহনীর হয়ে ১৬ ইনিংসে ৫৯ গড়ে সর্বোচ্চ ৮৩৪ রান এনামুলের।
এমন পারফরম্যান্সের পর বিকল্প আলোচনায় থাকার কথা ছিল এনামুলের নাম। কিন্তু এরপর বাংলাদেশ ওয়ানডে সিরিজ খেলেছে আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে। কিন্তু দুই সিরিজেই এনামুলকে রাখা হয়নি। এবার এশিয়া কাপ যখন দুয়ারে, তখন সেই এনামুলের ভাগ্য খুলে গেল। এখন সে সুযোগ এনামুল কতটা কাজে লাগাতে পারেন, সেটিই দেখার অপেক্ষা।