চট্টগ্রামেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করার আশা
কাল দুপুরে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হুট করেই ব্যস্ততা বেড়ে গেল। নিরাপত্তাকর্মীদের দলটা এতক্ষণ আয়েশি ভঙ্গিতে বসে ছিল। খবর ছড়িয়ে পড়ার পর কয়েকজনকে আড়মোড়া দিয়ে উঠে দাঁড়াতে হলো। খবরটা কী? মাঠে আসবে বাংলাদেশ দল।
আগের সূচি অনুযায়ী সকালবেলা জিম্বাবুয়ের দলের অনুশীলন করতে মাঠে আসার কথা। তাঁরা সময়মতো এসেছেও। মূল দলের অভিজ্ঞদের রেখে বাকিদের নিয়ে মাঠে হাজির জিম্বাবুয়ের কোচিং স্টাফের সদস্যরা। দুপুর পর্যন্ত সবার অ্যাসাইনমেন্ট ওইটুকুই। জিম্বাবুয়ে অনুশীলন করে মাঠ ছাড়লেই আজকের মতো সবার ছুটি।
এর মধ্যে বাংলাদেশ দলের মাঠে আসার খবরে অনেকে একটু হতাশই হলেন। কারণ, সূচিতে বাংলাদেশের অনুশীলনে আসার কথা ছিল না। আগের দিন রাতে সহজ জয়ের পর কাল টিম হোটেলে জিম করেই দিনটা কাটানোর কথা নাজমুল-তাসকিনদের।
আজকেই সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ। তার আগে কেউ ক্লান্ত হয়ে মাঠে নামতে চাইবেন না। সেটা অবশ্য হলো না। কারণ, এত হইচইয়ের পর দেখা গেল, দুপুরের কড়া রোদে মাঠে এসেছেন শুধু সৌম্য সরকার। তাঁর সঙ্গে ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প, বোলিং কোচ আন্দ্রে অ্যাডামস ও ট্রেনার নাথান কেলি। এই দৃশ্য দেখে নিরাপত্তাকর্মীদের হতাশা আরেকটু বাড়ল। একজন তো বলেই বসলেন, ‘একজনের জন্য এত কিছু!’
যার কথা বলা হচ্ছে, সেই সৌম্য চোটের কারণে জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম তিন ম্যাচের দলে নেই। তবে পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজের শেষ দুই ম্যাচ দিয়ে তাঁর খেলায় ফেরার কথা। সেই দুটি ম্যাচের আগে সৌম্যকে পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে কোচিং স্টাফের এই তোড়জোড়। জিম্বাবুয়েকে সিরিজে হারানোর জন্য অবশ্য সৌম্যর প্রত্যাবর্তন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইবে না বাংলাদেশ দল। পাঁচ ম্যাচের সিরিজের প্রথম তিনটি যেহেতু চট্টগ্রামে, এ মাঠেই সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে চাইবেন খেলোয়াড়েরা।
বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ ডেভিড হেম্প অবশ্য এত দূর চিন্তা করতে চাচ্ছেন না। তিনি ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চান, ‘আসলে এই মুহূর্তে চিন্তা করছি না। প্রথম ম্যাচে দারুণ একটি জয় পেয়েছি আমরা। এই পারফরম্যান্স ধরে রেখে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা এখন কেবল একটি ম্যাচ ধরেই এগোতে চাচ্ছি।’ তবে খেলার ধরনটা যেন প্রথম ম্যাচের মতো ইতিবাচক থাকে, সে চাওয়ার কথা আলাদা করে বলেছেন হেম্প, ‘শট খেলার ক্ষেত্রে আসলে আমরা সবাইকে ইতিবাচক থাকতে বলি। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ে সব সময় ইতিবাচক মানসিকতা ধরে রাখতে বলি। এভাবেই আমরা প্লেয়ারদের সাহস জুগিয়ে থাকি। আশা করি সেটা তারা ধরে রাখবে।’
জিম্বাবুয়েও তাদের ম্যাচের ইতিবাচক ব্যাটিং করে ভালো শুরু পেয়েছিল। কিন্তু অতি আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে শেষ পর্যন্ত খেই হারিয়েছে দলটি। যে কারণে চট্টগ্রামের দারুণ ব্যাটিং কন্ডিশনের সুবিধা নিতে পারেনি দলটি। কাল অনুশীলন শেষে জিম্বাবুয়ের হয়ে অভিষেকের অপেক্ষায় থাকা জোনাথন ক্যাম্পবেলও সে কথা বলছিলেন, ‘প্রথম ম্যাচ থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। মানসিকভাবে আমরা গত রাতে খুবই খারাপ অবস্থায় ছিলাম। একদমই ভালো খেলতে পারিনি। আগামীকাল আমরা ঘুরে দাঁড়াব। আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটারদের অনেকে শূন্য রানে আউট হয়েছে। তারা আগামীকাল দারুণ কিছু করবে এবং আশা করি আমরা জয় নিয়ে বের হব।’
বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন আরও একবার নিজ দলের বোলারদের দিকে তাকিয়ে থাকবেন। তাসকিন আহমেদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জুটি প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৬ উইকেট এনে দিয়েছে। উইকেটশূন্য ছিলেন দারুণ ছন্দে থাকা শরীফুল ইসলাম। রাতের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের টপ অর্ডারে বড় হুমকি হতে পারেন এই বাঁহাতি।
বোলিং আক্রমণে আরেক স্তম্ভের নাম শেখ মেহেদী হাসান। প্রথম ম্যাচে ২ উইকেট নিয়েছেন, রান দিয়েছেন ওভারপ্রতি ৪ করে। স্পিনে দুর্বল জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের জন্য তিনি হবেন ভীতির কারণ। রিশাদ হোসেনকে আটে রেখে ব্যাটিং অর্ডারে বড় কোনো পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। রানখরায় থাকা লিটন দাস পেতে যাচ্ছেন আরও একটি সুযোগ। সুযোগটা তিনি কাজে লাগাতে পারেন কি না, সেটিই দেখার বিষয়।