বিশ্বকাপজয়ী আকবর আলীরা এখন কে কোথায়
২০২০ সালের এই দিনে অনূর্ধ্ব–১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই জয়ের তৃতীয় বার্ষিকীতে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাফল্যের স্মৃতিচারণা করতে ইচ্ছা তো করবেই। সেই দলের কে কোথায় আছেন, কেমন করছেন—তা জানতেও।
২০১৩ সালে বেরিয়েছিল উন্মুক্ত চাঁদের বই—দ্য স্কাই ইজ দ্য লিমিট। আগের বছর অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী ভারত দলের অধিনায়কের সেই বইয়ের উপজীব্য তখন পর্যন্ত তাঁর ক্রিকেট–জীবন। সে সময় চাঁদকে ভাবা হচ্ছিল ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ, বিরাট কোহলি যাঁর সম্পর্কে বলেছিলেন ‘ভেরি স্পেশাল প্লেয়ার’। আজ ৯ বছর পর উন্মুক্ত চাঁদ ভারতের হয়ে খেলার স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এবার খেলতে এসেছেন বিপিএলেও।
তিন বছর আগে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে চাঁদের মতোই এক দিন এনে দিয়েছিলেন আকবর আলীরা। দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোনো শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেট দল। চাঁদের মতো আলাদা করে বাংলাদেশের কেউ সে অর্থে ‘বড়’ তারকা হয়ে যাননি। যদিও সেই বিশ্বকাপ দলের চারজনের এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়ে গেছে, বাকিদের প্রায় সবাই ঘরোয়া ক্রিকেটে শীর্ষ পর্যায়েই খেলছেন।
বিশ্বকাপ জয়ের পর দেশে ফেরা আকবরদের মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সংবর্ধনা দিয়েছিল বিসিবি, সংবাদ সম্মেলনে অনূর্ধ্ব-২১ নামের নতুন দলের আওতায় আনার কথা ছিল তাঁদের। করোনাভাইরাস যে পরিকল্পনায় বাদ সেধেছে। তবে হাইপারফরম্যান্স (এইচপি), ‘এ’ দলে এখনো সেই দলের সদস্যরা নিয়মিতই।
বিশ্বকাপজয়ীদের মধ্যে সবার আগে আন্তর্জাতিক অভিষেক বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলামের—২০২১ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। একমাত্র তাঁরই তিন সংস্করণেই অভিষেক হয়ে গেছে। দুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে ফেলেছেন, ছিলেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্ট জয়ী দলেও। যদিও সম্প্রতি জায়গাটা একটু নড়বড়ে হয়ে গেছে, আছে চোটের সমস্যাও। শরীফুল ছাড়া টেস্ট অভিষেক হয়েছে শুধু মাহমুদুল হাসানের। অভিষেকে শূন্য রানে আউট হলেও দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে দুর্দান্ত একটি সেঞ্চুরি করেছিলেন এই ওপেনার। তবে সম্প্রতি টেস্ট দলে জায়গা হারিয়ে ফেলেছেন তিনিও।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পাওয়া বাকি দুজন শামীম হোসেন ও পারভেজ হোসেন। ২০২১ সালে অভিষেকের পর দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শামীম। এরপর থেকেই জাতীয় দলের বাইরে। আরেক বাঁহাতি পারভেজ গত বছর জিম্বাবুয়েতে টি-টোয়েন্টি অভিষেকে ২ রান করার পর আর সুযোগ পাননি।
অধিনায়ক আকবর আলীকে একবার ডাকা হয়েছিল জাতীয় দলে, ২০২১ পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। জাতীয় লিগে রংপুর, বিসিএলে উত্তরাঞ্চলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আকবর, সর্বশেষ তাঁর নেতৃত্বে বিসিএল ওয়ানডেতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে উত্তরাঞ্চল। এবারের বিপিএলে খেলছেন সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে।
২০২০ বিশ্বকাপজয়ী দলের তিনজন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসান, পেসার তানজিম হাসান ও ব্যাটসম্যান প্রান্তিক নওরোজকে ছিলেন পরের বিশ্বকাপের দলেও। রকিবুলের অধিনায়কত্বে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা অবশ্য অষ্টম হওয়ার হতাশা নিয়ে দেশে ফেরেন। রকিবুল এবারের বিপিএলে রংপুর রাইডার্সের হয়ে ভালোই খেলছেন। লম্বা চোট কাটিয়ে ফেরা তানজিমের এবার বিপিএল অভিষেক হয়েছে সিলেটের হয়ে। সর্বশেষ জাতীয় লিগে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়েছে প্রান্তিকের।
২০২০ ছিল তৌহিদ হৃদয়ের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। মাঝখানে হারিয়ে যাওয়ার শঙ্কা জাগানো এই ব্যাটসম্যান এবারের বিপিএলে আলো ছড়িয়েছেন। মাঝে চোটের কারণে ২ ম্যাচ না খেললেও গতকাল পর্যন্ত এবার সবচেয়ে বেশি রান তাঁর—সেটিও ১৪৬.৫১ স্ট্রাইক রেটে। সেই দলের বাঁহাতি স্পিনার হাসান মুরাদ নিজের ছাপ রেখেছেন দীর্ঘ সংস্করণে। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশিদের মধ্যে যৌথভাবে সবচেয়ে কম ম্যাচে (২০) প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১০০ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডও গড়েছেন। খেলেছেন এবারের বিপিএলেও।
গতবার বিপিএলে খেললেও এবার দল পাননি শাহাদাত হোসেন। এই ব্যাটসম্যান আপাতত খেলছেন চট্টগ্রামের স্থানীয় লিগে। চোট থেকে সেরে ওঠা তানজিদ হাসান সুযোগ পাননি এবার বিপিএলে। যদিও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিতই রান করছেন। পেসার শাহীন আলম ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ও জাতীয় লিগে খেলেছেন। আপাতত নিয়মিত সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায়। সিনিয়র পর্যায়ে সবচেয়ে কম ১টি ম্যাচ খেলেছেন পেসার অভিষেক দাস। পিঠের চোট এর বড় কারণ। আপাতত প্রথম বিভাগে খেলছেন ব্যাটসম্যান হিসেবে।
চোটের কারণে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল আরেক পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে। সেই চোট জয় করে ভালোভাবেই ফিরেছেন। গত বিপিএলে ৮ ম্যাচে ১৫ উইকেট নিয়ে বেশ আলোড়নই তুলেছিলেন। এবার অবশ্য গতবারের পারফরম্যান্সটা ধরে রাখতে পারেননি।
‘শেখার বাকি অনেক কিছু’
আকবর আলী
আমি আসলে ভুলেই গিয়েছিলাম, আগামীকাল (আজ) ৯ ফেব্রুয়ারি। তবে যখনই এদিনের কথা মনে পড়ে, অবশ্যই অনেক ভালো লাগে। একটা স্বপ্ন দেখেছিলাম, পূরণ হয়েছিল। মনে পড়লেই ভালো লাগে। আমাদের সে ব্যাচে যারা ছিল, সবাই ঢাকা লিগ, এনসিএল, বিসিএলে মোটামুটি আগের চেয়ে বেশি প্রতিষ্ঠিত হয়েছি। ঘরোয়াতে যখন যেখানেই খেলি না কেন, আমরা এখন একটা প্রাধান্য পাই প্রতিটি দলেই।
অবশ্যই সেটি পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই। এটা একটা ভালো বিষয়। আর পরিণতবোধের কথা এলে বলব—যতই খেলব, গেম সেন্স থেকে শুরু করে সবকিছুই বাড়বে। ততই আমাদের খেলাটা সহজ হয়ে আসবে আরও। আমিসহ সবাই প্রতিটা টুর্নামেন্ট থেকেই শিখছি। খেলার সুযোগ পেলেই শেখার চেষ্টা করি। শেখার আসলে অনেক কিছু রয়েছে। শিখছি এবং নিজেদের আরও প্রস্তুত করছি।