‘চ্যাম্পিয়ন! কেপিবি!’, ‘চ্যাম্পিয়ন! কেপিবি!’— হ্যান্ডমাইকে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ড থেকে স্লোগান দিচ্ছিল এক ছাত্রী। তাঁর সঙ্গে সুর মেলাচ্ছে কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজের শ খানেক ছাত্রছাত্রী। বিআরটিসির দোতালা বাস ভাড়া করে আজ মিরপুর স্টেডিয়ামে এসেছিল তারা। মেঘলা বিকেলে তাদের উৎসবে কিছুক্ষণের জন্য হলেও রঙিন হয়ে উঠল স্টেডিয়াম।
যাদের নিয়ে গ্যালারিতে এত হইচই, সেই কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজ দল পিরোজপুরের সরকারি কেজি ইউনিয়ন হাইস্কুলকে ১৮৭ রানে হারিয়ে প্রাইম ব্যাংক জাতীয় স্কুল ক্রিকেটের শিরোপা জিতেছে। সিফাত শাহরিয়ার সামির ১১৫ বলে ১৪৮ রানের অবিশ্বাস্য ইনিংসে কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৮ উইকেটে করে ২৪৬ রান। জবাবে কেজি ইউনিয়ন ৩৯.৪ ওভারে অলআউট হয়েছে ৯৯ রানে, মোহাম্মদ হোসেন হ্যাটট্রিকসহ নিয়েছে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট।
খেলাটা মিরপুরে হওয়ায় স্মরণীয় একটা দিনই কাটাল দুই দলের ক্রিকেটাররা। জাতীয় দলের তারকা মুশফিকুর রহিম, মেহেদী হাসান মিরাজরা নিজেদের অনুশীলনের ফাঁকে খুদে ক্রিকেটারদের ব্যাট-বলের লড়াই দেখেছেন। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সেলফি তুলেছেন মিরাজ ও নির্বাচক আবদুর রাজ্জাক। মুশফিক খুদে ক্রিকেটারদের গ্লাভস উপহার দিয়েছেন।
তবে উৎসবের আমেজেও ছিল ভয় ধরিয়ে দেওয়ার মতো এক ঘটনা। ৪১ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ঘোর বিপদে পড়া কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজকে দুর্দান্ত শতকে টেনে তোলে সিফাত। ৪৭ বলে অর্ধশত ও ৮৬ বলে শতক। শেষ পর্যন্ত থেমেছে ৪৯তম ওভারে, ১১৫ বলে ৯টি চার ও ৬টি ছক্কায় ১৪৮ রান তার নামের পাশে। প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘ সময়ের ব্যাটিংয়ের পর বোলিংয়ে এসে ৫ বল করেই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয় সিফাত। পরে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে দলের কোচ মোস্তাফিজুর রহমান খেলা শেষে স্বস্তির খবরই দিয়েছেন, ‘আমাদের ফিজিও বলেছে হিটস্ট্রোক হয়েছে। ডাক্তাররা এখনো চেক করছে, হয়তো দুই-তিন ঘণ্টা লাগবে। গরম ছিল প্রচুর, আমি বোলিংটা দিতে চাইনি। এখন ভালো আছে। কথা বলছে, চোখ খুলছে। আমাদের ম্যানেজমেন্ট বলেছে, ওর চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ তারা বহন করবে।’
যে সিফাতের ব্যাটিং নিয়ে এত আলোচনা, সে মূলত বাঁহাতি পেসার। জাতীয় দলের পেসার মোস্তাফিজুর রহমানের মতো কাটারও মারতে পারে। আগের ম্যাচগুলোতে নতুন বলে বোলিং করেছে। কিন্তু ফাইনালে হঠাৎই অন্য সামর্থ্য বেরিয়ে এল। দলের কোচও এতে অবাক, ‘এক শ পার্সেন্ট সারপ্রাইজিং! ওর বোলিংয়ের ক্যারিশমা অনেক ভালো। সব ধরনের বল ও করতে পারে। ব্যাটিংও একদমই পারে না, এমন নয়। যত সময় গেছে, তাকে দেখে মনে হয়েছে অনেক ভালো ব্যাটসম্যান। তবে আমার দৃষ্টিতে সে এত বড় ব্যাটসম্যান নয় (হাসি)।’
এর আগে ইনিংস বিরতিতে নিজের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার পেছনে কোচ মোস্তাফিজুর রহমানের কথা আলাদা করেই বলেছে সিফাত। সতীর্থদের অনুপ্রেরণাও ছিল, ‘যারা সেরা একাদশে ছিল এবং বাইরে ছিল, সবাই সাপোর্ট করেছে। বারবার বলেছে, তুই থাকলে ভালো কিছু করতে পারবি। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ চেয়েছে, ভালো হয়েছে।’ বাঁহাতি পেসার যেহেতু, বাংলাদেশ দলের মোস্তাফিজই সিফাতের প্রিয় ক্রিকেটার, আর ব্যাটিংয়ে ভারতের বিরাট কোহলি।