শারজায় প্রথম জয়ে সিরিজে সমতা ফেরালেন নাজমুলরা
দল হারছে। ব্যাটিং নড়বড়ে। সঙ্গে যোগ হয়েছে চোট, অসুস্থতা ও খেলোয়াড়দের ভিসা জটিলতা। এত কিছুর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে আবার বাড়তি চাপ। ম্যাচটা হেরে গেলে তিন ওয়ানডের সিরিজও হেরে যেত বাংলাদেশ।
নাজমুল হোসেনের দল অবশ্য সেটা হতে দিল না। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশের করা ৭ উইকেটে ২৫২ রানের জবাবে আফগানিস্তান ৪৩.৩ ওভারে অলআউট হয়ে যায় ১৮৪ রানে। ৬৮ রানের এই জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরাল বাংলাদেশ। আগামী ১২ নভেম্বর একই মাঠে সিরিজের শেষ ম্যাচটি এখন অলিখিত ফাইনালই বলা যায়।
ঐতিহ্যবাহী শারজাতে প্রথম ম্যাচ খেলার প্রায় সাড়ে ৩৪ বছর পর এখানে বাংলাদেশের প্রথম জয়। সময়ের তুলনায় ম্যাচ অবশ্য বেশি নয়। শুধু ওয়ানডে হিসাব করলে এই মাঠে গতকালের ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের সপ্তম। এ ছাড়া তিনটি-টোয়েন্টিও খেলেছে এই মাঠে বাংলাদেশ। জয় ছিল না সেখানেও।
প্রথম ম্যাচের অবিশ্বাস্য ধসের জন্যই কি না, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন কাল টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তানজিদ হাসান ও সৌম্য সরকার ভালো শুরুও এনে দিয়েছিলেন। নাজমুল সেটিকে কাজে লাগিয়ে করেছেন বাংলাদেশ ইনিংসের সর্বোচ্চ ৭৬ রান। শেষের দিকে ওয়ানডে অভিষেক হওয়া জাকের আলীর সঙ্গে প্রথমে নাসুম ও পরে তাসকিনের দুটি জুটি বাংলাদেশকে নিয়ে আড়াই শ’এর ওপারে।
এই রান নিয়ে জিততে হলে বোলারদের ভালো করতেই হতো। নাসুম আহমেদ এক বছর পর জাতীয় দলে ফিরে তা করে দেখিয়েছেন। মেহেদী হাসান মিরাজ, মোস্তাফিজুর রহমান, শরীফুল ইসলাম ও তাসকিন আহমেদও পেয়েছেন উইকেটের স্বাদ।
শুরুটা হয়েছিল তাসকিনের হাত ধরে। প্রথম ম্যাচের মতো কালও ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফেরান তিনি। ১৭ তম ওভারে নাসুম বল হাতে নিয়েই স্কয়ার লেগে ক্যাচ বানান ওপেনার সাদিকুল্লাহকে (৩৯ রান)। ২৯ তম ওভারে মোস্তাফিজের বাউন্সারে পুল শট খেলতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ তোলেন হাশমতউল্লাহ (১৭ রান)।
এই রান নিয়ে জিততে হলে বোলারদের ভালো করতেই হতো। নাসুম আহমেদ এক বছর পর জাতীয় দলে ফিরে তা করে দেখিয়েছেন।
আফগান ইনিংস বড় ধাক্কাটা আসে ৩০ তম ওভারে, নাসুমের নতুন স্পেলের প্রথম ওভারে। এবার শিকার সদ্য ক্রিজে আসা আজমতউল্লাহ ওমরজাই। একই ওভারে গুলবদিন নাইবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন রহমত (৫২ রান)।
আফগানিস্তানের রান তখন ১১৯ রানে ৫ উইকেট। সেখান থেকে দুই অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবী ও গুলবদিনের আরও একটি জুটি ম্যাচ জমিয়ে তোলে। ৩৭ তম ওভারে শরীফুলের বলে গুলবদিন কাভারে ক্যাচ তুলে আউট হলে আরও একবার পাল্লা বাংলাদেশের দিকে হেলে পড়ে। পরের ওভারে নবীকে বোল্ড করেন মিরাজ। সেখান থেকে বেশি দূর এগোয়নি আফগান ইনিংস।
এর আগে তানজিদ হাসানের ১৭ বলে ২২ রানের ইনিংসে ব্যাট হাতে আক্রমণাত্মক শুরু হয় বাংলাদেশের। তবে এমন শুরুর পর যে গতিতে মাঝের ওভারে রান আসার কথা, তা আসেনি। দুই আফগান স্পিনার রশিদ খান ও গজনফরের বিপক্ষে নাজমুল, সৌম্য সরকার ও পরে মেহেদী মিরাজ ছিলেন খুবই সতর্ক।
১৯ তম ওভারে রশিদ খানের বলে ৩৫ রান করা সৌম্য এলবিডব্লু হন। যদিও রিভিউ নিলে আম্পায়ারকে সিদ্ধান্ত বদলাতে হতো। চারে নামা মিরাজকে নিয়ে অবশ্য সে ধাক্কাটা কাটিয়ে উঠেছিলেন নাজমুল। কিন্তু ২২ রান করে রশিদের গুগলিতে থামে মিরাজের ইনিংস।
হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংসটাকে আরেকটু এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন নাজমুল। অন্য দুই সংস্করণে অধারাবাহিক নাজমুল তাঁর ওয়ানডের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে ৭৫ বলে ফিফটি করেন। ৪১ তম ওভারে বড় শট খেলে খোলস থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন নাজমুল। নানগেয়ালিয়া খারোতের বলে লং অফে ক্যাচ তুলে আউট। একই ওভারে একই জায়গায় ক্যাচ তোলেন মাহমুদউল্লাহ। খারোতেকে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ তোলেন হৃদয়ও।
১০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশের সামনে তখন আরও একটি ধসের চোখরাঙানি। দলের এমন ঘোর বিপদেই জাকের-নাসুম জুটিতে ৪১ বলে ৪৬ রান। শেষের দিকে তাসকিনের সঙ্গেও ১৪ বলে আরও ২২ রান যোগ করেন জাকের। গজনফরের বলে মারতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে নাসুম ২৪ বলে ২৫ রান করেছেন। অন্য প্রান্তে জাকেরের ২৭ বলে ৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে ছক্কা ছিল ৩ টি, যার দুটিই গিয়েছে মাঠের বাইরে।