রিশাদের আগে সর্বশেষ কবে বাংলাদেশের লেগ স্পিনার ৩ উইকেট নিয়েছেন
২৪টি ডেলিভারির মধ্যে ১০টিতে কোনো রান দেননি। বাকি ১৪টি ডেলিভারির মধ্যে বাউন্ডারি মাত্র দুটি—একটি করে চার ও ছক্কার মার। বাকি ১২টি ডেলিভারির মধ্যে ৩টি খরচ হয়েছে উইকেট নিতে। রইল আর মাত্র ৯টি ডেলিভারি। এবার অন্য প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের কোনো লেগ স্পিনারকে শেষ কবে টি-টোয়েন্টির ডেথ ওভারে স্লিপ নিয়ে বোলিং করতে দেখেছেন?
বুকের ছাতিটা একটু চওড়া হতে হয় বৈকি। আর কে না জানে টি-টোয়েন্টি সাহস ও বুদ্ধিমত্তার খেলাও। রিশাদ হোসেন সে খেলায় লেটার মার্কসই পেলেন। ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচে এমন দৃশ্যই দেখা গেল। এমনকি লেগ স্লিপ (১৫তম ওভার) নিয়েও বোলিং করেছেন। বাংলাদেশের কোনো লেগ স্পিনারের সামনে প্রতিপক্ষ চাপে ভুগছে—এমন দৃশ্য সমর্থকদেরও নিশ্চয়ই মন ভরিয়ে দিয়েছে। রিশাদের ৩ উইকেট নেওয়া দেখে কেউ কেউ স্মৃতির ঝাঁপিও খুলতে পারেন। মনে করার চেষ্টা করতে পারেন, বাংলাদেশের কোনো লেগ স্পিনার শেষ কবে ন্যূনতম ৩ উইকেট নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ম্যাচে?
বাংলাদেশ ক্রিকেটে লেগ স্পিনারের আকাল বলেই প্রসঙ্গটি উঠছে। তবে রিশাদের আগে বাংলাদেশের কোনো লেগ স্পিনারের ৩ উইকেট নেওয়ার ঘটনা খুব বেশি পুরোনো নয়। তিন সংস্করণ মিলিয়ে ২০২০ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৩ ওভারে ৩৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন লেগ স্পিনার আমিনুল ইসলাম। জাতীয় দলের হয়ে মাত্র ১০টি টি-টোয়েন্টি খেলা এই লেগ স্পিনার ২০২১ সালে নভেম্বরে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছেন সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ।
তবে রিশাদের আজকের ক্যারিয়ারসেরা বোলিং ছাপিয়ে যাবে আমিনুলের সেই বোলিং ফিগারকে। ৪ ওভারে ২২ রানে ৩ উইকেট নেন রিশাদ। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কোনো বিশেষজ্ঞ লেগ স্পিনারেরও এটাই প্রথম ম্যাচ।
তবে রিশাদ ম্যাচে কতটা প্রভাব রেখেছেন সেটি এসব সংখ্যায় পুরোপুরি বোঝানো যায় না। ৭ ওভারে ২ উইকেটে ৫২—শ্রীলঙ্কা এমন পরিস্থিতিতে থাকতে অষ্টম ওভারে আক্রমণে আনা হয় রিশাদকে। মাত্র ৭ রান দিয়ে ভালো শুরুও করেন। বাঁক ও বাউন্স পাওয়ায় বোঝা যাচ্ছিল, এই উইকেটে রিশাদ বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। ১১তম ওভারে দিলেন ৯ রান, কিন্তু তখনো রিশাদের স্পিনে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের মোড় ঘুরতে শুরু করেনি।
মোড়টা ঘুরেছে ১৫তম ওভারে। রিশাদ প্রথম বলেই চারিত আসালঙ্কাকে ‘টোপ’ দিয়েছিলেন ছক্কা মারার। সীমানা পার করতে না পেরে ক্যাচ দেন। পরের বলে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকেও আউট করলেন স্লিপে ক্যাচে পরিণত করে। না, হ্যাটট্রিক হয়নি, তবে তার পর থেকে রিশাদকে বুঝেশুনেই খেলার চেষ্টা করেছে শ্রীলঙ্কা। ওই ওভারে ৩ রানে ২ উইকেট নেওয়া রিশাদকে ১৭তম ওভারে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রথম বলেই ক্ল্যাসিক লেগ স্পিনে ধনঞ্জয়াকে ডি সিলভাকে ক্রিজ থেকে মোহগ্রস্তের মতো বের করে আনেন রিশাদ। বল বাঁক নেওয়ায় ফলাফল—লিটন দাসের স্টাম্পিংয়ের শিকার ধনঞ্জয়া। এই ওভারে ৩ রানে ১টি উইকেট নেন রিশাদ।
রিশাদ নিজের স্পেল শেষ করার পর দর্শকদের করতালি পেয়েছেন। ধারাভাষ্যকারেরা বলছিলেন, উচ্চতার ব্যবহারে বাউন্স পেলেও বাঁকটা চমকে দেওয়ার মতো। ৩.৪ ডিগ্রি বাঁক পেয়েছেন রিশাদ, যা এই মাঠে চলতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে স্পিনারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি! ফ্লাইট ও গতিবৈচিত্র্যেও দারুণ ছিলেন রিশাদ। শ্রীলঙ্কার ৯ উইকেটে ১২৪ রানে থেমে যাওয়ার পেছনে তাঁর ভূমিকাটা ছিল অসামান্য।