সূচি
দল পরিচিতি
শ্রীলঙ্কা: অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারবে তো
বহুজাতিক টুর্নামেন্টের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার সম্পর্কটা অন্য রকম। সেটা মহাদেশীয় লড়াই এশিয়া কাপ হোক কিংবা বিশ্বকাপ। এ বছরের এশিয়া কাপের কথাই ধরুন, চোটের কারণে শ্রীলঙ্কার মূল বোলিং আক্রমণের কেউ খেলতে পারলেন না। কিন্তু এক দল অনভিজ্ঞ ক্রিকেটার নিয়েও ঠিকই চমকে দিল শ্রীলঙ্কা। এটাকে যদি অঘটন বলেন, তাহলে গত বছরের এশিয়া কাপকে কী বলবেন? চোটের সমস্যা ছিল গতবারও। সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা যখন টালমাটাল, তখন টি–টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ক্রিকেট বিশ্বকে চমকে দেয় দাসুন শানাকার দল।
এবারের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ফেবারিটের তালিকায় হয়তো শ্রীলঙ্কার নাম থাকবে না। তবে বরাবরই বড় মঞ্চে চমক দেখানোর সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে এই দলটার। ভেবে দেখুন, কোন বিশ্বকাপেই–বা ফেবারিট তকমা নিয়ে গিয়েছিল লঙ্কানরা? ১৯৯৬ সালে তো নয়ই। অথচ অর্জুনা রানাতুঙ্গা–অরবিন্দ ডি সিলভাদের সেই দলটাই চমক জাগিয়ে বিশ্ব জয় করেছিল। ২০০৩ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত আইসিসি টুর্নামেন্ট মানেই শ্রীলঙ্কা হয় সেমিফাইনালিস্ট, না হয় ফাইনালিস্ট। এ সময় তাদের শোকেসে যুক্ত হয়েছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও চ্যাম্পিয়নস ট্রফি।
তারকা ক্রিকেটারদের বিদায়ে ২০১৯ বিশ্বকাপটা খারাপ গেলেও লঙ্কানরা যে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, এশিয়া কাপের পারফরম্যান্সেই তা স্পষ্ট। ২০২১ সালে শুরু হওয়া লঙ্কা প্রিমিয়ার লিগের (এলপিএল) সৌজন্যে বেশ কিছু নতুন ক্রিকেটার এসেছে দলে। মহীশ তিকশানা, দুনিত ভেল্লালাগে, ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, মাতিশা পাতিরানা—প্রত্যেকেই আলোচনায় এসেছেন এলপিএলের সৌজন্যে। এঁদের মধ্যে তিকশানা, পাতিরানা তো আইপিএল–তারকা বনে গেছেন রাতারাতি। দুজনই চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে আইপিএল জিতেছেন। চোটের কারণে হাসারাঙ্গার ছিটকে পড়াটা শ্রীলঙ্কার জন্য বড় এক আঘাত। তবে বাকিরা আছেন, সঙ্গে এবারের এশিয়া কাপের পারফরম্যান্সের যোগ হয়েছে ‘নতুন বিস্ময়’ দুনিত ভেল্লালাগের নাম।
ব্যাটিংয়ে কুশল মেন্ডিস, সাদিরা সামারাবিক্রমা, চারিত আসালাঙ্কারা এখন লঙ্কান ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা। মেন্ডিসের কথা আলাদা করে বলতেই হয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুর দিকে অধারাবাহিক মেন্ডিস কয়েক বছর ধরে শ্রীলঙ্কার আস্থার নাম। সামারাবিক্রমা ও আসালাঙ্কা দলটার মিডল অর্ডারের স্তম্ভ।
সামারাবিক্রমা হয়ে উঠেছেন বিপদের বন্ধু। এবারের এশিয়া কাপেই বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা তাঁর দুটি ইনিংস ছিল মনে রাখার মতো। বিশ্বকাপেও নিশ্চয়ই তাঁর কাছে এমনই আশা থাকবে। তরুণ পাতুন নিশাঙ্কার নামটাও আসবে। তরুণ এই ওপেনার পেস বোলিংটা ভালো খেলেন। বিশ্বকাপ খেলা হবে অক্টোবর-নভেম্বরে, এ সময় ভারতের উইকেটগুলো থাকবে সতেজ। নতুন বলে যে পেসারদের দাপট থাকবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়। নিশাঙ্কা এ ক্ষেত্রে কার্যকর হয়ে উঠবেন। লোয়ার মিডল অর্ডারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও অধিনায়ক শানাকার বিস্ফোরক ব্যাটিং তো আছেই। আর তারুণ্যনির্ভর লঙ্কান ব্যাটিংটাকে আগলে রাখার জন্য আছেন অভিজ্ঞ দিমুথ করুনারত্নে।
সাঙ্গাকারা-জয়াবর্ধনেদের পরবর্তী প্রজন্ম অনেকটাই দাঁড়িয়ে গেছে। যে দেশ মাত্র এক বছরের ব্যবধানে দেউলিয়াত্ব ঘুচিয়ে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে, সে দেশের প্রাণের খেলা ক্রিকেটও ঘুরে দাঁড়িয়ে আরেকটি বিশ্বকাপ জিততেই পারে। অসম্ভব মনে হচ্ছে? দেখাই যাক।...আরও