কী কারণে অবসর, তা এখনো বলছেন না তামিম
অবসর-কাণ্ডের পর থেকে ছুটিতে আছেন তামিম ইকবাল। সেই ছুটিরই অংশ হিসেবে তিনি এখন আছেন সপরিবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে। সেখান থেকে লন্ডনে গিয়ে কোমরের ব্যথার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন। তারপর দেশে ফেরার কথা ৩১ জুলাই।
দুবাই যাওয়ার আগে ঢাকার দুটি নিউজ ওয়েবসাইটকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তামিম কথা বলেছেন তাঁর অবসরের সিদ্ধান্ত, সে সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে আসা ও ভবিষ্যৎ–ভাবনা নিয়েও। তবে ঠিক কী কারণে অবসরের সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলেন, সেটি স্পষ্ট করেননি তামিম। এ ব্যাপারে তামিম বলেছেন, ‘অবসর নেওয়ার কারণ আছে। অনেক কারণ আছে। সে জন্যই নিয়েছিলাম।’
সিদ্ধান্তটা যে তিনি হুট করে নেননি, সেটাও জানিয়েছেন, ‘আরেকটি ব্যাপার হলো আমার সিদ্ধান্ত হুট করেই নেওয়া ছিল না। বেশ কিছুদিন ধরেই ভাবছিলাম। পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি অন্তত তিন-চার দিন আগে এবং আমার মনে হয়েছে, দ্যাটস ইট। শেষ। এমন একটা কিছু নিয়ে স্ট্রাগল করছিলাম, যা আমি খোলাসা করতে চাই না। এটা ক্রিকেট বোর্ডের জানার ব্যাপার।’
লন্ডন থেকে দেশে ফিরেই ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে বসবেন তামিম। বিসিবির সঙ্গে বৈঠকের ওপরই নির্ভর করছে তামিমের ভবিষ্যৎ, ‘দেশে ফিরে বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধানের (জালাল ইউনুস) সঙ্গে বসব, যিনি আমার সরাসরি বস। ওনার সঙ্গে বসে খুব খোলামেলা ও পরিষ্কার আলোচনা করতে চাই যে কেন অবসর নিয়েছিলাম, আমার মাথায় কী চলছিল… ৬ থেকে ৮ মাস ধরে আমি কেমন অনুভব করছি এবং কেন শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিলাম।’
তামিম এটাও জানিয়েছেন, বিসিবির ‘চেইন অব কমান্ড’ মেনেই জালাল ইউনুসের সঙ্গে কথা বলতে চান তিনি। তাঁর কথা, ‘আমি সব সময় একটা ব্যাপার মেনে চলার চেষ্টা করি এবং যেটিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার বলে মনে করি, তা হলো “চেইন অব কমান্ড”। আমি জাতীয় দলের ক্রিকেটার, অধিনায়ক ছিলাম সেদিন পর্যন্ত, আমার সরাসরি বস হলেন কোচ ও জালাল ভাই। আমার যা কিছু বলার আছে, তাঁদের মাধ্যমেই যেতে হবে।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের সঙ্গে বোর্ড সভাপতির ভালো যোগাযোগ আছে, আমার সঙ্গেও কথা হয়। তবে আমি কোনো সময়ই “চেইন অব কমান্ড” ভাঙতে চাই না। আমার কথা হলো, ভালো-খারাপ যেটাই হোক, আমি আমার সরাসরি বসকে জানাব। কোচ আছেন, এরপর জালাল ভাই আমার আলটিমেট বস। উনি এটা ওপরে নিয়ে যাবেন নাকি বোর্ডে উপস্থাপন করবেন, এটা ওনার ব্যাপার।’
তামিম এই অভিযোগও তুলেছেন, ক্রিকেটার থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অনেকেই চেইন অব কমান্ড অনুসরণ করেন না। তবে তামিম সে পথে এগোতে চান না, ‘যাহোক, আমি ওনার সঙ্গে (জালাল ইউনুস) দেখা করব ও কথা বলব। এরপর তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাঁর ব্যাপার। বাট আই উইল নেভার ক্রস দ্য লাইন অ্যান্ড ডু সামথিং দ্যাট ইজ নট ইথিক্যালি রাইট।’
বোর্ডের সঙ্গে তামিমের বৈঠকের ওপরই যে অনেক কিছু নির্ভর করছে, তা-ও বোঝা গেছে তামিমের কথায়, ‘এখানে ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আমার মিটিংটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি কীভাবে তাঁদেরকে ব্যাখ্যা করতে পারছি, তাঁরা কীভাবে নিচ্ছেন, এটার ওপরই অনেক কিছু নির্ভর করবে।’
সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তামিমের বৈঠকের বিষয়টিও উঠে এসেছে। তামিম অবসর থেকে ফিরতে চাচ্ছিলেন না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁর অবসর ভেঙে ফিরে আসা, ‘আমি ওনাকে আমার সব কথা বলেছি এবং এটাও বলেছি যে না ফিরলে আমার জন্য ভালো। উনি সবই খুব মনোযোগ দিয়ে ও ধৈর্য ধরে শুনেছেন। এরপর ওনার মতো করে আমাকে ব্যাখ্যা করেছেন, বুঝিয়েছেন ও নির্দেশ দিয়েছেন ফেরার।’
তামিমের যে চোট নিয়ে এত আলোচনা, সেই চোট কীভাবে ফিরে এল, তা নিয়েও তামিমের অসন্তোষ আছে। তাঁর কথা, ‘জিম সেশনে একটি এক্সারসাইজ করতে গিয়ে তা আবার ফিরে এসেছে। তাহলে কি প্রশ্ন তোলা উচিত নয়, ওই এক্সারসাইজ আমার জন্য সঠিক ছিল নাকি ভুল? যে এক্সারসাইজ আমার করার কথা নয়, সেটি কেন করছিলাম? যে এক্সারসাইজ করলে এই ইনজুরিতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়, সেটি কেন করানো হয়নি? এই কারণও বের করা উচিত।’
তামিম এটাও বলেছেন, অবসরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা তিনি ৬ জুলাইয়ের সংবাদ সম্মেলনেই দিয়েছেন। এরপর খেলা ছাড়ার ঘোষণা যদি দিতে হয়, তা আর সংবাদ সম্মেলন করে দেওয়া হবে না। তাঁর কথা, ‘আমার বিদায়ের যা ছিল, মনের মধ্যে হয়ে গেছে আমার। এরপর যখনই ক্রিকেট ছাড়ি, সংবাদ সম্মেলন করে হবে না। যে জিনিসটা আমি সেদিন করেছি, এর চেয়ে “অনেস্ট” কিছু আর হতে পারে না। মানুষের চোখের পানি কখনো নাটক হতে পারে না। সেদিন যা হয়েছে, তা ছিল ভীষণ ভীষণ ইমোশনাল। আমার তরফ থেকে “ইটস ডান”। এখন ব্যাপারটি হলো এক ম্যাচ খেলি বা ১০ ম্যাচ বা ২০ ম্যাচ, নিজের সবটুকু দিয়ে খেলব এবং সময় হলে যতটা সিম্পল করে সম্ভব, জানিয়ে দেব।’