২০০০ ছক্কা পেরিয়ে গেল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
ছক্কা!
টি-টোয়েন্টিতে ব্যাটসম্যানদের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত রান। সংস্করণটাই যেহেতু দ্রুত রান তোলার, তাই সুযোগ পেলেই কিংবা সুযোগ করে নিয়ে ছক্কা মারতে চান ব্যাটসম্যানরা। কখনো সফল হন, কখনো হন না।
পাতুম নিশাঙ্কা আজ নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচে ছক্কা মারায় সবার আগে সফল। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে টিম প্রিঙ্গলকে ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা মারেন লঙ্কান ওপেনার। সেই সঙ্গে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছক্কার পরিসংখ্যানও পাল্টে যায়—১৯৯৯!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০০০তম ছক্কাটি কে মারবেন? নিশাঙ্কা, নাকি উইকেটে অন্য প্রান্তে তাঁর সঙ্গী কুশল মেন্ডিস? এ প্রশ্নের জবাব পেতে অপেক্ষায় ছিলেন দর্শকেরা। বাঁহাতি স্পিনার প্রিঙ্গলকে নবম ওভারে স্লগ সুইপে ডিপ স্কয়ার লেগের ওপর দিয়ে ছক্কা মেরে দর্শকদের অপেক্ষা ঘোচান মেন্ডিস। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটি ছিল ২০০০তম ছক্কা। জিলংয়ে আজ প্রথম রাউন্ডে শ্রীলঙ্কা-নেদারল্যান্ডস ম্যাচটি শুধু এ কারণেও অনেকে মনে রাখবেন।
৪৪ বলে ৭৯ রান করা মেন্ডিস পরে আরও চারটি ছক্কা মারেন। অধিনায়ক দাসুন শানাকাও একটি ছক্কা মারায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস পর্যন্ত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে মোট ছক্কাসংখ্যা দাঁড়ায় ২০০৫। এ পর্যন্ত আট আসর মিলিয়ে কোন দল কতগুলো ছক্কা মেরেছে, নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে!
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত ২১টি দল ছক্কা মেরেছে। সবচেয়ে কম ছক্কা মারা দল কেনিয়া। ২০০৭ সালে উদ্বোধনী আসরে তারা ছক্কা মেরেছিল মাত্র দুটি। কেনিয়া এরপর আর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পায়নি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে খেলা নেপাল ৩ ম্যাচে মেরেছে সমানসংখ্যক ছক্কা। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের ছক্কাসংখ্যাকে এক অঙ্কে রাখা দুই দেশ এরাই।
ছক্কাসংখ্যাকে দুই অঙ্কে উন্নীত করতে পেরেছে ১০টি দেশ—আরব আমিরাত (১০), পাপুয়া নিউগিনি (১৩), হংকং (১৬), ওমান (১৯), নামিবিয়া (৩২), জিম্বাবুয়ে (৪২), আয়ারল্যান্ড (৪৮), স্কটল্যান্ড (৫১), নেদারল্যান্ডস (৫১) ও আফগানিস্তান (৯৪)। এর মধ্যে আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান ও জিম্বাবুয়ে টেস্ট খেলুড়ে।
বাকি ৯ টেস্ট খেলুড়ে দেশের সবাই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজেদের ছক্কাসংখ্যা ৩ অঙ্কে উন্নীত করেছে। এই দৌড়ে সবাইকে পেছনে ফেলেছে কোন দল, তা একটু ভাবলেই আর পরিসংখ্যানের দ্বারে যেতে হবে না। মানে, এই সংস্করণে একেবারে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলা ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ক্যারিবিয়ানরা এখনো নিজেদের আসল চেহারাটা দেখাতে পারেনি। তাই বলে ছক্কা মারায় দুবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে কেউ পাল্লা দিতে চাইলে আটঘাট বেঁধেই নামতে হবে। এ পর্যন্ত ২১৪ ছক্কা মেরে সবার ওপরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। মাত্র তিনটি কম ওভার বাউন্ডারি নিয়ে তাদের কাঁধে নিশ্বাস ফেলছে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত এ দুই দলই শুধু নিজেদের ছক্কাসংখ্যা ২০০-এর ওপাশে নিয়ে যেতে পেরেছে।
১৯৫ ছক্কা নিয়ে তিনে পাকিস্তান। ইংল্যান্ড তাদের চেয়ে একটি ছক্কা কম মেরে চতুর্থ। ১৮২ ছক্কা নিয়ে পাঁচে শ্রীলঙ্কা। ১৭১ ছক্কা মারা নিউজিল্যান্ড ছয়ে। আইসিসি টি-টোয়েন্টি র্যাঙ্কিংয়ে এ মুহূর্তে শীর্ষে থাকা ভারত কিউইদের চেয়ে এক ছক্কা পিছিয়ে। ১৬৩ ছক্কা নিয়ে এরপরই দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এই ৯ দলের মধ্যে তলানিতে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১২৪ বার বোলারকে সীমানার ওপারে আছড়ে ফেলেছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ছক্কাসংখ্যা বিচারে এগিয়ে গত বছরের বিশ্বকাপ। ওমান ও আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৪০৫টি ছক্কা দেখা গেছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১৪ ছক্কা নিয়ে দুইয়ে ভারতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ আসর। ৩০০ ছক্কা নিয়ে তৃতীয় ২০১৪ সালে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ‘ব্লকবাস্টার’ ইভেন্টটি।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ২০১০ সালে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছক্কা দেখা গেছে ২৭৮টি। ২৬৫টি ছক্কা দেখা গেছে ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। এর পাঁচ বছর পর শ্রীলঙ্কায় ছক্কা দেখা গেছে আরও ৪২টি কম। ২০০-এর কম ছক্কা দেখা গেছে একটি বিশ্বকাপেই। সেটি ২০০৯ ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ—১৬৬টি ছক্কা। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ছক্কাসংখ্যা ৯ ম্যাচে ৫৫।
গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছক্কা অনেক বেশি হওয়ার কারণও আছে। সেবার ম্যাচ হয়েছে ৪৫টি। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একটি সংস্করণে এখন পর্যন্ত এটাই সর্বোচ্চসংখ্যক ম্যাচের টুর্নামেন্ট। ৩৫টি করে ম্যাচ হয়েছে ২০১৪ ও ২০১৬ সালে। অন্য চার আসরে সমান ২৭টি করে ম্যাচ হয়েছে।
টি-টোয়েন্টিতে ছক্কা যদি হয় দ্রুত রান তোলার সবচেয়ে বড় ‘অস্ত্র’, তাহলে ব্যাটসম্যানদের দ্বিতীয় সেরা ‘অস্ত্র’ হলো চার। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের বিশ্ব আসরে ছক্কার প্রসঙ্গ যখন এল, তখন চারের সংখ্যাও জেনে নেওয়া যাক।
এখন পর্যন্ত চার মারায় সবার ওপরে শ্রীলঙ্কা। ৫৯০টি চার মেরেছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। পরের পাঁচটি স্থান পাকিস্তান (৫০৭), ইংল্যান্ড (৪৯৪), ভারত (৪৬৪), অস্ট্রেলিয়া (৪৩৪) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের (৪৩০)।
এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা (৪২৩), নিউজিল্যান্ড (২৯৯) ও বাংলাদেশ (৩৫৮)। অর্থাৎ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চার মারার তালিকাতেও নয়ে বাংলাদেশ। শীর্ষ দশের শেষ নামটি আফগানিস্তান। দলটি চার মেরেছে ২০৫টি।