ভারত ইনিংস ঘোষণা করবে, বোঝা যাচ্ছিল সেটি। প্রশ্ন ছিল, সে ঘোষণা আসবে কখন। শুবমান গিল সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন আগেই, অপেক্ষা ছিল চেতেশ্বর পূজারার সেঞ্চুরির। সেটি হয়ে যাওয়ার পরই ২ উইকেটে ২৫৮ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে ভারত, ততক্ষণে অবশ্য শেষ ঘণ্টার খেলা শুরু হয়ে গেছে।
৫১৩ রানের প্রায় অসম্ভব লক্ষ্যের সামনে দাঁড়িয়ে দিন শেষে বাংলাদেশের প্রাপ্তি দুই ওপেনার নাজমুল হোসেন ও জাকির হাসানের ইতিবাচক ব্যাটিং। ১২ ওভারে ৪২ রান তুলে অবিচ্ছিন্ন তাঁরা। নাজমুল অপরাজিত ২৫ রানে, জাকিরের রান ১৭। দুজনই মেরেছেন তিনটি করে চার। তাতে অবশ্য এ টেস্টে বাংলাদেশের অবস্থানটা খুব একটা দৃঢ় হচ্ছে না।
নিজেদের ইতিহাসের ২১৫ রানের বেশি তাড়া করে কখনোই টেস্ট জেতেনি বাংলাদেশ। ড্র করা ম্যাচে চতুর্থ ইনিংসে তারা সর্বোচ্চ ব্যাটিং করেছে ১৪২ ওভার। এ টেস্ট বাঁচাতে বাংলাদেশকে এখনো খেলতে হবে অন্তত ১৮০ ওভার। আর জিততে হলে প্রয়োজন এখনো ৪৭২ রান।
আজ সকালে আগের দিনের স্কোরের সঙ্গে ১৭ রান যোগ করতে বাংলাদেশ হারায় শেষ ২ উইকেট। ইবাদতকে ফিরিয়ে পঞ্চম উইকেট নেন কুলদীপ যাদব, শেষ পর্যন্ত এ বাঁহাতি বোলিং শেষ করেন ৪০ রানে ৫ উইকেটের ক্যারিয়ার-সেরা ফিগার নিয়ে। মিরাজকে ফেরান অক্ষর প্যাটেল।
প্রথম ইনিংসে ২৫৪ রানে এগিয়ে থেকে ব্যাটিংয়ে নামা ভারত প্রথম ১৫ ওভারে তোলে ৩৬ রান। মধ্যাহ্নবিরতির পর অবশ্য গতি বাড়ায় তারা। প্রথম ৭ ওভারে আসে ৫টি চার। তবে শর্ট বলের পরিকল্পনায় সফল হন খালেদ আহমেদ, তাঁকে হুক করতে গিয়ে ডিপ ফাইন লেগে তাইজুলের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন রাহুল। ভারত অধিনায়ক আরেকবার ভালো শুরুর পরও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হলেন। রাহুলের উইকেটে ভাঙে ৭০ রানের জুটি, এ বছর যেটি ওপেনিংয়ে ভারতের সর্বোচ্চ।
পিঠের ব্যথায় ইবাদত হোসেন মাঠেই ছিলেন না আজ, কাঁধের ব্যথায় বোলিং করতে পারেননি সাকিবও। চা-বিরতির পর প্রথম ওভারেই বোলিংয়ে দেখা যায় লিটন দাসকে, এর আগে যিনি কখনোই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে বোলিং করেননি। করেন টানা ২ ওভার। অবশ্য দ্বিতীয়টিতে তাঁকে ছক্কা মারেন গিল। পরে বোলিংয়ে আসেন নাজমুল হোসেনও। ভারত ইনিংস ঘোষণা করবে, সে অপেক্ষাতেই যেন বোলিং করছিল বাংলাদেশ। তাদের শরীরী ভাষায় বলছিল সেটি।
তবে লিড বাড়ানোর সঙ্গে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ছিল ব্যক্তিগত অর্জনের হাতছানিও। সেটি প্রথমে কাজে লাগান গিল। চা-বিরতির আগেই ফিফটি পেয়েছিলেন। ভাগ্যের সহায়তাও পান তিনি। রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান, একবার তাঁর বিপক্ষে ইয়াসির আলীর বলে রিভিউ নিলেও সেটি বাংলাদেশের কাজে আসেনি তখন ডিআরএস সিস্টেম কাজ না করায়।
অবশ্য মিরাজকে রিভার্স সুইপে চার মেরে ৯৯ রানে যান গিল, এরপর ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে এসে আরেকটি চারে পৌঁছে যান ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে। তাঁর লাগে ১৪৭ বল। মাইলফলকে যাওয়ার পরই মিরাজকে ছয় মেরেছিলেন, তাঁকেই আবার তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে বদলি ফিল্ডার মাহমুদুল হাসানের হাতে ধরা পড়েন।
পরের মাইলফলকটি ছিল পূজারার। মিরাজকে চার মেরে ম্যাচে দ্বিতীয় ফিফটি পেয়ে যান তিনিও। ৮৭ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর পরের ফিফটিটি পেতে পূজারার লেগেছে মাত্র ৪৩ বল। প্রথম ইনিংসে ১০ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করা পূজারা সেটি পেয়ে গেলেন ঠিক পরের ইনিংসেই। ইনিংসের ৬২তম ওভারের চতুর্থ বলে তাইজুল ইসলামকে ওয়াইড লং অন দিয়ে চার মেরে সে সেঞ্চুরি পান পূজারা। ২০১৯ সালের জানুয়ারির পর এই প্রথম তিন অঙ্কের দেখা পেলেন।