এই হারকেও অস্বাভাবিক মনে করেন না নাজমুল
‘ক্রিকেটে এটা হতেই পারে।’
কথাটা বলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন। বলেছেন গতকাল নিউইয়র্কে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে এর একটু আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। গতকাল রাতের এই ম্যাচ না দেখে থাকলে জেনে রাখুন, দক্ষিণ আফ্রিকা আগে ব্যাট করে ১১৩ রান তুলেছিল। নিশ্চয়ই মনে হচ্ছে, পিচ যেমনই হোক, এই ম্যাচ কীভাবে জিততে পারল না বাংলাদেশ! বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য ওই কথাই বললেন—ক্রিকেটে এমন কিছু অস্বাভাবিক নয়।
জিততে শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২০ রান। ক্রিজে মাহমুদউল্লাহ–তাওহিদ হৃদয়, দুজনেই থিতু। এখান থেকে ম্যাচটা ৬ বলে ১১ রানের সমীকরণে নেমে আসাই তো অস্বাভাবিক! শেষ ওভারে একজন স্পিনারকে একটি বাউন্ডারিও কেউ মারতে পারেননি। জাকের আলী ও মাহমুদউল্লাহর মতো ‘বিগ হিটার’রা উইকেট দিয়ে এসেছেন। নাজমুলের কণ্ঠে ঠিক এই হতাশাটাই ঝরল, ‘সবাই নার্ভাস ছিল। কিন্তু জাকের থাকায় আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। শেষ পর্যন্ত না হলেও ঠিক আছে।’
সঞ্চালক মাইক হেইসম্যান জানতে চেয়েছিলেন, ২ পয়েন্ট হাতছাড়া হলো কি না? বাংলাদেশ অধিনায়কের উত্তর, ‘হ্যাঁ। এই ম্যাচটা আমাদের জেতা উচিত ছিল। প্রায় জিতেই যাচ্ছিলাম। কিন্তু শেষ কয়েকটি ওভারে তারা ভালো বোলিং করেছে।’ নাজমুল এটুকু বলে একটু থেমে আরেকবার ওই কথাটি বলেই শেষ টানলেন, ‘ক্রিকেটে এটা হতেই পারে।’
‘ডি’ গ্রুপ থেকে টানা ৩ ম্যাচ জিতে সুপার এইটের নিশ্বাস দূরত্বে পৌঁছে গেছে প্রোটিয়ারা। ১৯.৫ ওভারে কেশব মহারাজের ফুল টস বলে মাহমুদউল্লাহর সোজা ছক্কা মারার চেষ্টা, শেষ পর্যন্ত তা বাতাসে ভাসতে ভাসতে লং অনে মার্করামের তালুবন্দী। ধারাভাষ্যকার আতহার আলীর ভাষায়, সীমানার ইঞ্চিখানেক দূরত্বে থাকতে ক্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এইডেন মার্করামের মতে, তখন যেকোনো কিছুই হতে পারত, ‘১৯.৫ ওভারে যেকোনো কিছুই হতে পারত। (বল) আরও ২ মিটার বাইরে পড়তে পারত।’ শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর এক ম্যাচ জিততে পেরে খুশি মার্করাম, ‘এমন ম্যাচে শেষ ওভারে তো চাপ থাকেই। কখনো পারবেন, কখনো পারবেন না। তবে ম্যাচটি রোমাঞ্চকর ছিল।’
দক্ষিণ আফ্রিকার অল্প রানে গুটিয়ে যাওয়ার পেছনে বড় অবদান পেসার তানজিম হাসানের। ১৮ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পথে প্রোটিয়া টপ অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। স্বাভাবিক ব্যাটিং করতে না পারা দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ ভরসা ছিলেন ডেভিড মিলার। ৩৮ বলে ২৯ রান করা মিলারকে দারুণ এক টপ স্পিনে ১৯তম ওভারে বোল্ড করেন বাংলাদেশের লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। ওই আউটেই প্রোটিয়াদের ইনিংসের মোড় ঘুরেছে মনে করে হেইসম্যান রিশাদের ব্যাপারে জানতে চেয়েছিলেন নাজমুলের কাছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘সে সর্বশেষ কয়েক সিরিজেই দারুণ বোলিং করেছে। অনুশীলনেও কঠোর পরিশ্রমী। আমরা ১০–১৫ বছর ধরেই লেগ স্পিনারের অভাব বোধ করেছি। আশা করি, সে নিজের ফর্ম ধরে রাখতে পারবে।’
বিশেষজ্ঞরা আগেই বলেছিলেন, নাসাউয়ের উইকেট বড় রানের জন্য নয়। কিন্তু এই উইকেটেই ৪৪ বলে ৪৬ করে ম্যাচসেরা হাইনরিখ ক্লাসেন। ম্যাচ জিতে নিজের খুশির কথা জানালেন ক্লাসেন, ‘হৃদ্যন্ত্রের জন্য (ম্যাচটি) হয়তো অতটা উপকারী (চাপ) নয়। তবে জিততে পেরে স্বস্তি লাগছে। উইকেট স্ট্রোক খেলার জন্য ভালো না হলেও মিলার আগের ম্যাচে দেখিয়েছে এখানে কীভাবে ব্যাট করতে হয়।’
এই মাঠে বাংলাদেশও ভারতের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে। উইকেটের চরিত্র কেমন, সেটা মোটামুটি জানাই ছিল। আর লক্ষ্যও ছিল কম। তবু হলো না। হবে কবে!