চোটের ভালো দিকও খুঁজে পেয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়
খবরটার আসি আসি করেও আসছিল না। গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে স্ট্যান্ডবাই তালিকায় ছিলেন মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। এর পর থেকেই জাতীয় দল গঠনের আলোচনায় নিয়মিত শোনা যাচ্ছিল তাঁর নাম। অবশেষে অপেক্ষার অবসান হলো। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের মাটিতে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের দলে ডাক পেয়েছেন এই বাঁহাতি পেসার।
খবরটা শোনার পরের অনুভূতিটা ভাগাভাগি করতে কার্পণ্য করলেন না মৃত্যুঞ্জয়, ‘অসাধারণ। এটা যেকোনো ক্রিকেটারের জন্য প্রাপ্তি। ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে ১৬ জনের দলে, দেশকে প্রতিনিধিত্ব করব, এটা একটা স্বপ্ন। সবারই এই স্বপ্ন পূরণ হয় না। আমার হচ্ছে। এটা অসাধারণ অনুভূতি।’
দলে ডাক পাওয়ার খবর পেয়েই সাতক্ষীরায় ফোন করেছেন মৃত্যুঞ্জয়। বাবা তাহাজ্জত হোসেন চৌধুরীর স্বপ্ন ছিল, একদিন জাতীয় দলে খেলবে তাঁর ছেলে। পরে সে স্বপ্নটা দেখেছেন মৃত্যুঞ্জয়ও। আজ সে স্বপ্ন পূরণের পথে এক ধাপ এগিয়ে গেল ২১-এর তরুণ, ‘খবরটা পেয়ে বাবাকে ফোন দিয়েছিলাম। খুব বেশি কথা হয়নি। দলে ডাক পাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছি। উনি খুব খুশি হয়েছেন। এরপর তো ভাইদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। রাতে আবার বাবার সঙ্গে কথা হবে।’
দুই বছর ধরেই ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত পারফরমার মৃত্যুঞ্জয়। ২০২১ সালে বিপিএলে ৮ ম্যাচ খেলে ১৫ উইকেট নিয়েছিলেন, এর মধ্যে একটি ছিল হ্যাটট্রিক। ডেথ বোলিংয়ের দারুণ প্রদর্শনী ছিল মৃত্যুঞ্জয়ের বোলিংয়ে।
তখন থেকেই মৃত্যুঞ্জয়ের নাম সবার মুখে মুখে। এবার ক্রিকেট পাড়ার প্রত্যাশা পূরণের পালা, ‘জাতীয় দলের ক্রিকেটার বা কোচদের সঙ্গে যখন কথা হতো, মনে হয়েছে আমাকে নিয়ে তাঁদের প্রত্যাশা অনেক উঁচুতে। ঘরোয়া ক্রিকেটে আমার পারফরম্যান্সের প্রশংসা শুনি তাঁদের কাছে। ওই প্রত্যাশা তাঁদের সব সময় ছিল। এখন আমার সে প্রত্যাশা পূরণ করতে হবে।’
এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও ভালো ছন্দে আছেন মৃত্যুঞ্জয়। গতবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের হয়ে ৮ ম্যাচের ৭ ইনিংসে বোলিং করে ১২ উইকেট নিয়েছেন। এবার জাতীয় দলেও প্রিমিয়ার লিগের ছন্দটা ধরে রাখার পালা, ‘প্রিমিয়ার লিগে ভালো ফর্মে ছিলাম। এটা সাহায্য করবে। আমি ৭ ম্যাচে হয়তো ১২ উইকেট নিয়েছি। শুধু উইকেট নিচ্ছি সে জন্য নয়, বোলিংও ভালো করছি। প্রিমিয়ার লিগে আমি ডমিনেট করতে পারছি, এটা আপনাকে আত্মবিশ্বাস দেবে।’
আয়ারল্যান্ড সিরিজের খেলাগুলো হবে ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ইংল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে মৃত্যুঞ্জয়ের, ‘নাইনটিনে থাকার সময় ইংল্যান্ডে খেলেছিলাম। ছোটখাটো অভিজ্ঞতা হলেও সেটা কাজে লাগবে। আমার পেসও বেড়েছে। এসব কন্ডিশনে যেহেতু বাউন্স আছে, যা যেকোনো পেসারই উপভোগ করবে। কারণ, পেস বরাবরই ব্যাটসম্যানকে ডিসটার্ব করবে। মনে হয় এটা আমার জন্য খুব ভালো হবে।’
তবে মৃত্যুঞ্জয়ের সবচেয়ে বড় শক্তি অন্য জায়গায়। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই চোটের সঙ্গে তাঁর লড়াই। কখনো পিঠ, কখনো কাঁধের চোট ভুগিয়েছে তাঁকে। যেন চোটের সঙ্গেই তাঁর ঘরবাড়ি। ২০২০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা হয়নি এ কারণে। সেই দলটিই শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ জিতেছে।
সে অভিজ্ঞতাই মৃত্যুঞ্জয়কে অন্য ধাতুতে গড়ে তুলেছে, ‘খুবই কঠিন ছিল সময়টা। পেস বোলারের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা কিন্তু চোট। আর এটাই আমার ছোট্ট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছে। আর এটাই আমি পার করে এসেছি। ঘুরে দাঁড়িয়েছি। জোরে বল করতে পারছি। এটা আমার জন্য বড় প্রাপ্তি, যা আমাকে মানসিকভাবে শক্ত করেছে। এখন মনে হয়, এত বড় জিনিস হয়ে গেছে আমার লাইফে, আর কী হবে। এই মানসিকতাটা সব সময় আমাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখে। এত বড় ধাক্কার পর আমি পিছিয়ে পড়িনি, এটা আমাকে মানসিকভাবে অনেক শক্ত করেছে।’
কে জানে, নতুন বলে ইনসুইং, পুরোনো বলে ইয়র্কারের চেয়ে এই মানসিকতাই হয়তো মৃত্যুঞ্জয়কে বাকিদের থেকে আলাদা করবে।