‘অসম্পূর্ণ কাজ’ শেষ করতে চান আমির
অবসর ভেঙে গত মাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে পাকিস্তান দলে ফিরেছেন মোহাম্মদ আমির। ৩২ বছর বয়সী এই পেসারের চোখে এখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন। বার্তা সংস্থা এএফপিকে আমির জানিয়েছেন, আগামী মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের ‘অসম্পূর্ণ কাজ’ তিনি শেষ করতে চান।
২০১১ সালে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পাঁচ বছর নিষিদ্ধ হওয়া এবং জেল খাটা আমির আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নিজের খেলার সম্ভাবনা দেখছেন এবং সেই সুযোগ পেয়ে তিনি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন। পাকিস্তান এখনো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড ঘোষণা করেনি। গত ২ মে আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য ১৮ জনের স্কোয়াড ঘোষণা করে পাকিস্তান। পিসিবি তখন জানিয়েছিল, এই ১৮ জন থেকে ৩ জন কমিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড সাজানো হবে। আমির আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ড সফরে পাকিস্তান স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন।
লাহোর থেকে ফোনে এএফপিকে আমির বলেছেন, ‘পাকিস্তানের হয়ে আবারও খেলতে পারার অনুভূতিটা দারুণ। আমি অসম্পূর্ণ কাজটা শেষ করতে চাই, আর আমার কাছে স্বল্পকালীন লক্ষ্য হলো বিশ্বকাপ জেতা।’
ওভালে ২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে পাকিস্তান দলে অভিষেক আমিরের। মাঝের এই ১৫ বছরের মধ্যে প্রায় ৯ বছর জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন আমির। স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটানোর পর স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে জাতীয় দলের বাইরে ছিলেন সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়।
আন্তর্জাতিক অভিষেকের এক বছরের মধ্যেই তারকাখ্যাতি পেয়ে গিয়েছিলেন আমির। দুর্দান্ত গতি আর সুইংয়ে ব্যাটসম্যানদের মনে ত্রাসের সঞ্চার করেছিলেন। কিন্তু ২০১০ সালে লর্ডস টেস্টে স্পট ফিক্সিং কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে নিষিদ্ধ হন পাঁচ বছর। তাঁর সঙ্গে নিষিদ্ধ হয়েছিলেন সালমান বাট আর মোহাম্মদ আসিফও। ইংল্যান্ডে ছয় মাস জেলও খেটেছেন আমির। পাকিস্তানের তখনকার অধিনায়ক বাট ও আসিফ যথাক্রমে ৩০ মাস ও ১২ মাস করে জেল খাটেন।
নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ পূর্ণ করে ২০১৬ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরেন আমির। কিন্তু বাজে ফর্মের কারণে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়ায় ২০২০ সালের ডিসেম্বরে অবসরের ঘোষণা দেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য পাকিস্তান স্কোয়াডে সুযোগ পেলে নাসিম শাহ, হারিস রউফ, শাহিন আফ্রিদির সঙ্গে দারুণ পেস আক্রমণ গড়বেন আমির। পিসিবি তাঁকে জাতীয় দলে ফিরিয়ে তাঁর প্রতি যে আস্থা দেখিয়েছে, আমির তার-ই প্রতিদান দিতে চান, ‘পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এবং টিম ম্যানেজমেন্ট আমার প্রতি আস্থা রেখেছে। আমাকে এই আস্থার প্রতিদান দিতে হবে। চার বছর পর (জাতীয় দলে) ফিরেছি, আর জাতীয় দলে খেলার অনুভূতিটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।’
গত মাসে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে চারটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের তিনটিতেই খেলেন আমির। ২-২ ব্যবধানে ড্র হওয়া সেই সিরিজে ৩ উইকেট নেন এই বাঁহাতি পেসার। সেই আমির নিজেকে এখনো পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের অংশ বলেই মনে করেন, ‘সত্যি বলতে ২০১৯ সালের তুলনায় নিজেকে এখন আরও বেশি ফিট মনে হচ্ছে। ফিট না হলে তো নিজের পারফরম্যান্সটা করা যায় না। তাই আমি এখন আরও ভালো করতে প্রস্তুত।’ ডাবলিনে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হবে ১০ মে থেকে। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২২ মে থেকে চার ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে অংশ নেবে বাবর আজমের দল।
১৫ বছর বয়সী আমিরকে আবিষ্কার করেছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরাম। অনেক উত্থান-পতন পাড়ি দেওয়ার পর আমির এখন ক্যারিয়ারের ভালো দিকটাই শুধু মনে রাখতে চান, ‘২০০৯ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয় বিশেষ স্মৃতি। এখনো রোমাঞ্চ লাগে। প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েই চ্যাম্পিয়ন দলের অংশ হয়েছিলাম।’ সে বিশ্বকাপের ফাইনালের ১ উইকেটসহ ৭ ম্যাচে মোট ৬ উইকেট নিয়েছিলেন আমির।
টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্মৃতিচারণা করে আমির বলেছেন, ‘রাওয়ালপিন্ডি বিমানবন্দর থেকে নিজের গ্রামে ফেরার পথে অনেক গাড়ি থেকে বৃষ্টির মতো ফুল ছোড়া হয়েছিল। আমি ভাগ্যবান যে এখনো খেলছি। দলে যখন প্রথম এসেছিলাম, তখন আমিই ছিলাম সর্বকনিষ্ঠ। এবার আরেকটি সুযোগ পাচ্ছি বিশ্বকাপ জয়ের। এটাই আমার এবং দলের লক্ষ্য।’