অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অভাবনীয় কিংবা অননুমেয় বললেও এশিয়া কাপ ফাইনালকে বোধ হয় জুতসইভাবে বিশেষায়িত করা যাবে না।
একপেশে ফাইনাল হওয়ার উদাহরণ ভূরি ভূরি আছে। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা আজ যা খেলল, ম্যাচ শুরুর মিনিট পাঁচেক আগেও কেউ কি ভেবেছিলেন? সেটাও লঙ্কানদের হাতের তালুর মতো চেনা মাঠ কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে!
মোহাম্মদ সিরাজের বিধ্বংসী স্পেলের সঙ্গে হার্দিক পান্ডিয়া ও যশপ্রীত বুমরার দুর্দান্ত বোলিংয়ে মাত্র ৫০ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা, যা ওয়ানডে ইতিহাসে ১০ম আর লঙ্কানদের ২য় সর্বনিম্ন স্কোর।
এই সংস্করণে সবচেয়ে কম রানে অলআউটের যৌথ রেকর্ডের একটির সঙ্গে জড়িয়ে শ্রীলঙ্কার নাম। তবে যন্ত্রণাটা শ্রীলঙ্কা দিয়েছিল জিম্বাবুয়েকে। ২০০৪ সালে হারারেতে জিম্বাবুইয়ানদের ৩৫ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল লঙ্কানরা। ২০২০ সালে কীর্তিপুরে যুক্তরাষ্ট্রের ইনিংস একই রানে মুড়িয়ে দিয়ে সেই কীর্তিতে ভাগ বসিয়েছিল নেপাল।
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ১২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলা শ্রীলঙ্কা আজ আরও কমে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল। তবে তিনে নামা কুশল মেন্ডিস ১৭ আর টেলএন্ডার দুশান হেমন্ত অপরাজিত ১৩ রান করলে বিব্রতকর সেই রেকর্ড থেকে রক্ষা পায়। স্বাগতিকদের হয়ে দুই অঙ্ক ছোঁয়া ব্যক্তিগত ইনিংস এই দুটিই। বাকি ৯ জনের রান মুঠোফোন নম্বরের ডিজিটের মতো—২, ০, ০, ০, ৪, ০, ৮, ১, ০।
ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বনিম্ন সংগ্রহের বিব্রতকর রেকর্ড থেকে বাঁচলেও কোনো ফাইনালের সর্বনিম্ন স্কোর এখন শ্রীলঙ্কারই। দাসুন শানাকার দলকে ৫০ রানে বেঁধে ফেলে ভারত যেমন ২৩ বছর আগের প্রতিশোধ নিয়েছে, তেমনি বাংলাদেশকে একটি ‘গ্লানি’ থেকে মুক্তি দিয়েছে।
আজকের আগে ফাইনালে সর্বনিম্ন স্কোর ছিল ভারতেরই। ২০০০ সালে শারজা চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে সনাৎ জয়াসুরিয়া-কুমার সাঙ্গাকারাদের দেওয়া ৩০০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ৫৪ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল শচীন টেন্ডুলকার-সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারত। ২৩ বছর আগের বিব্রতকর রেকর্ডটা আজ শ্রীলঙ্কাকে ফিরিয়ে দিল রোহিত শর্মা-বিরাট কোহলিদের ভারত।
আর ওয়ানডে সংস্করণের এশিয়া কাপে এত দিন সর্বনিম্ন রানে অলআউটের রেকর্ড ছিল বাংলাদেশের। সেই ২০০০ সালেই ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ৮৭ রানে গুটিয়ে দিয়েছিল ওয়াসিম আকরাম-শহীদ আফ্রিদিদের পাকিস্তান। লঙ্কানরা আজ ৫০ রানে অলআউট হওয়ায় বিব্রতকর রেকর্ড থেকে মুক্তির আনন্দ হওয়ার কথা আকরাম খান-আমিনুল ইসলামদের।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া মামুলি লক্ষ্যটা মাত্র ৬.১ ওভারেই ছুঁয়ে ফেলেছে ভারত। অষ্টমবারের মতো এশিয়ান ক্রিকেটে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট জিতে নিয়েছে তারা। ভারত ম্যাচটা জিতেছে ২৬৩ বল বাকি রেখে। ম্যাচের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ২১.৩ ওভার। এটাই যে ওয়ানডে ইতিহাসের সংক্ষিপ্ততম ফাইনাল, সেটা বোধ হয় না বললেও চলছে।