২০ বছর পেরিয়ে নতুন রানআপ আনছেন ৪১–এর অ্যান্ডারসন
৪১ পেরিয়েছেন গত জুলাইয়ে। দীর্ঘদিনের বোলিং সঙ্গী স্টুয়ার্ট ব্রডও বলেছেন বিদায়। তবে এখনই নিজের শেষ নিয়ে কিছু ভাবছেন না জেমস অ্যান্ডারসন। ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ১৮৩টি টেস্ট খেলে ৬৯০ উইকেট নেওয়ার পর অ্যান্ডারসন এবার বদলে ফেলেছেন নিজের রানআপই!
সর্বশেষ অ্যাশেজটা অ্যান্ডারসনের কেটেছে একেবারেই সাদামাটা, ৪ ম্যাচে মাত্র ৫ উইকেট। এরপর বিরতি নিয়েছিলেন, সেখান থেকে ফিরেই কাজ করেছেন রানআপ নিয়ে। সেটি করতে তিনি ব্যবহার করেছেন ম্যানচেস্টার সিটির এমিরেটস স্টেডিয়ামের পাশের একটি ট্র্যাক। যেখানে সাড়ে ৪ পাউন্ড ফি দিয়ে দৌড়াতে পারেন যে কেউ।
ইংলিশ পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অ্যান্ডারসন বলেছেন, কেন ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে এসে রানআপ বদলানোর কথা ভাবলেন তিনি, ‘আমার রানআপই মূল ব্যাপার, এটিকে আরেকটু ভালো করার চেষ্টাই করছি। যেটি ঠিক ছিল না, আমার রানআপের গতি। অনেক বছর ধরেই ক্রিজে গিয়ে যে দ্রুতগতিতে ঝাঁকি মারতাম, সেটির ওপর নির্ভর করতে পারছিলাম না। ফলে রানআপে নিজের মোমেন্টাম নিয়ে কাজ করে গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। মনে হচ্ছে কাজে দিচ্ছে ভালোভাবেই, বল ভালোভাবে আসছে। এখন মাঠে এর প্রয়োগ করতে হবে।’
এত লম্বা ক্যারিয়ারে নিজের অনুশীলনের প্রক্রিয়াটাও আরেকবার ব্যাখ্যা করেছেন টেস্ট ইতিহাসে সফলতম পেসার, ‘অনুশীলনে অদল–বদল আমার কাজে দিয়েছে ভালোভাবেই। একই জিনিস বারবার যেন না করি, সেটি নিশ্চিত করেছি। যেমন দৌড়ানোর কৌশল ও গতি নিয়ে আমাকে আসলে অন্যদের তুলনায় একটু বেশি কাজ করতে হয়, যে বয়সে এসে পৌঁছেছি। আমাকে আসলে সব ক্ষেত্রেই প্রস্তুত হয়ে যেতে হবে ভারতে ভালো একটা ছন্দ নিয়ে যেতে।’
এ মাসের শেষে ভারতের মাটিতে শুরু হতে যাওয়া ৫ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ অ্যান্ডারসনের ক্যারিয়ারে হয়ে আসছে নতুন চ্যালেঞ্জ হয়েই। তবে অ্যান্ডারসন প্রস্তুত, ‘অ্যাশেজের দিকে খোলা মনে ফিরে দেখার চেষ্টা করেছি। বাজে বোলিং করেছি বলে মনে হয়নি, তবে একই সঙ্গে এটাও বলতে হবে—হুমকিও তৈরি করতে পারিনি সেভাবে।’
কেন এমন—সেটিও ব্যাখ্যা করেছেন তিনি, ‘বল সুইং করেনি। পিচগুলোও ঠিক আমার জন্য উপযুক্ত ছিল না। তবে কন্ডিশন যেখানে পক্ষে নেই, সেখানে অতীত থেকেই উইকেট নেওয়ার মূল্য আমার কাছে অনেক। ভারত এমন একটা জায়গা, যেখানে কন্ডিশন পেসারদের পক্ষে থাকবে না। কিন্তু সেখানে আগেও গিয়েছি, সফলও হয়েছি। ফলে সবকিছু মিলিয়ে এমন একটা অবস্থানে যেতে চাচ্ছি, যাতে ছন্দে থাকতে পারি।’
অ্যান্ডারসন যতই ছন্দে থাকতে চান না কেন, ক্যারিয়ারের এমন পর্যায়ে শেষের প্রসঙ্গ ঘুরেফিরেই আসবে। ব্রডের অবসরে সে আলোচনা একটু বেশিই। অ্যান্ডারসন নিজেও বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি প্রসঙ্গে একটু ‘নার্ভাস’ ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ইসিবি তাকে এক বছরের চুক্তির প্রস্তাব দেয়, যেটি গ্রহণও করেছেন তিনি। কিন্তু শেষের ভাবনা আসেনি এখনো, ‘শুনে নিষ্ঠুর মনে হতে পারে, তবে আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে (ব্রডের অবসরের পরও)। শেষের কোনো ভাবনা আমার মনে আসেনি। অনেক লোকই আমার কাছে এসে দারুণ একটি ক্যারিয়ারের জন্য অভিনন্দন জানাচ্ছে। কিন্তু আমার তাদের ব্যাখ্যা করে যেতে হচ্ছে, (ক্যারিয়ারটা) স্টুয়ার্টের ছিল, আমার নয়।’
দলকে এখনো অনেক কিছু দেওয়ার আছে, অ্যান্ডারসন বলছেন এমন, ‘যদি এমন মনে না করতাম, তাহলে যা করছি তা করতাম না। আমার এখনো মনে হয়, ইংল্যান্ডকে ম্যাচ জেতানোর মতো স্কিল আমার আছে। যতক্ষণ তা মনে হবে, ততক্ষণ শুধু বয়সের কারণে শেষ করার কোনো কারণ দেখি না। এ মৌসুমে যে অনুশীলন করেছি, তাতে মনে হয়েছে বয়স একটি সংখ্যামাত্র। ক্রিকেট খেলাটাই সংখ্যার এবং লোকে সব সময়ই আমার বয়সটি দেখবে পর্দায়—যখনই বোলিং করতে আসি না কেন। তবে আমার কাছে এটি অপ্রাসঙ্গিক। ক্রিকেটার হিসেবে আপনার কেমন বোধ হচ্ছে, সেটি ব্যাপার। আর আমি জানি, আমি এখনো মাঠে ডাইভ দিতে পারি, বল হাতে (ম্যাচের মোড়) ঘুরিয়ে দিতে পারি—যেমনটি গত ২০ বছরে করেছি।’
এরপর অ্যান্ডারসন যোগ করেছেন, ‘গত ৫-৬ বছর আমার ক্যারিয়ারের সেরা বলে মনে হয়। অ্যাশেজ যদিও যতটা চেয়েছিলাম ততটা ভালো যায়নি, ক্যারিয়ারজুড়েই অনেক সিরিজ আছে, যেখানে আমি ভালো বোলিং করিনি। আবার যাতে না ঘটে, কঠোর পরিশ্রম করে সেটিই নিশ্চিত করতে হবে।’