‘স্টুপিড! স্টুপিড! স্টুপিড!’—পন্তকে কেন এ কথা বললেন গাভাস্কার
ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে নিজেদের হ্যান্ডলে ছেড়েছে অস্ট্রেলিয়ার এবিসি স্পোর্ট। মেলবোর্নে গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে সুনীল গাভাস্কারের পাশে বসে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন হার্শা ভোগলে। ঋষভ পন্তের আউটের বর্ণনা দিয়ে গাভাস্কারের মুখের দিকে তাকালেন ভোগলে। ততক্ষণে পাথরশক্ত মুখ করে থাকা ভারতীয় কিংবদন্তিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, খুব চটে আছেন। ভোগলে তাকাতেই মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে গাভাস্কার তিনটি শব্দে শুরু করলেন, ‘স্টুপিড! স্টুপিড! স্টুপিড!’ প্রতিটি উচ্চারণের সঙ্গে গলার জোর শুধু বেড়েছে।
উচ্চারণগুলি রাগের। আর তা যে পন্তের জন্য সেটাও পরিষ্কার। মেলবোর্ন টেস্টে আজ তৃতীয় দিনের খেলা দেখে থাকলে তখনকার পরিস্থিতি না জানালেও চলে। তবু যেটুকু না বললেই নয়— ৫ উইকেটে ১৬৪ রানে আজ তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করেছিলেন পন্ত ও রবীন্দ্র জাদেজা। দিনের খেলার প্রথম ঘণ্টা পার করে দেওয়ার কাছাকাছিই ছিলেন দুজন। ৩৭ বলে ২৮ রানে ভালোই ব্যাট করছিলেন পন্ত। কিন্তু ভারতের প্রথম ইনিংসে ৫৬তম ওভারের (দিনের ১০ম) স্কট বোল্যান্ডের প্রথম দুটি বল খেলার পর পন্ত কী ভেবেছিলেন কে জানে!
বোল্যান্ডের তৃতীয় বলে পন্ত নিজের ট্রেডমার্ক শটটি খেলার চেষ্টা করলেন। অফ স্টাস্পে সরে গিয়ে ফাইন লেগের ওপর দিয়ে বোল্যান্ডকে তুলে খেলতে চাইলেন। বল একটু পেছনের লেংথে পড়ায় সেই যাত্রায় পারেননি। বল লাগে শরীরে। পন্তও ভারসাম্য হারিয়ে পড়ে যান। সেটাও নতুন কিছু না। পন্তের নিজস্ব ভঙ্গিমার ওই শটে পড়ে যাওয়াও একটা বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ম্যাচের পরিস্থিতি ও ভারতের ওই মুহূর্তে কী দরকার সেটা হয়তো ভাবেননি পন্ত।
বোল্যান্ড রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে চতুর্থ বলটি রাখেন অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথে। পন্ত এবারও অফ স্টাম্পে সরে এসে স্কুপ করার চেষ্টা করেন। বল ব্যাটে লাগলেও ঠিকঠাকমতো হয়নি। কানায় লেগে বল চলে যায় উল্টো দিকে থার্ডম্যানে বাউন্ডারি অঞ্চলে। সেখানে সহজ ক্যাচ নেন নাথান লায়ন। তখনই ভোগলে আউটের বর্ণনা দিতে না দিতে গাভাস্কার ‘স্টুপিড’, ‘স্টুপিড’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পন্ত ও জাদেজা ছিলেন ভারতের ইনিংসে ব্যাটসম্যানদের শেষ স্বীকৃত জুটি। তাঁদের কাছ থেকে বড় কিছু দরকার ভারতের। কিন্তু অমন অপরিণামদর্শী শটে জুটিটি ৩২ রানের ভাঙার পর স্বাভাবিকভাবেই যেকোনো ভারতীয় সমর্থকের চটে যাওয়ার কথা। যদিও পরে অষ্টম উইকেটে ওয়াশিংটন সুন্দর ও নীতীশ কুমারের ১২৭ রানের জুটি ভারতকে ফলো–অন থেকে বাঁচিয়েছে। আটে নেমে সেঞ্চুরিও তুলে নেন নীতীশ। কিন্তু পন্তের আউট হওয়ার সময়ে পরিস্থিতি একদমই অন্যরকম ছিল।
সেই পরিস্থিতির দাবি না মিটিয়ে পন্ত নিজের ইচ্ছামতো শট খেলে আউট হওয়ায় রাগে গজরাতে গজরাতে গাভাস্কার বলেছেন, ‘দুজন ফিল্ডার থাকতেও শট খেলেছে। আগের শটটি মিস করেছে এবং দেখুন ক্যাচটি কোথায় ধরেছে, ডিপ থার্ডম্যান ক্যাচটি নিয়েছে। এটা হলো, (পন্ত) নিজের উইকেট ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আসা!’ ভোগলে এরপর কিছু একটা বলার চেষ্টা করতে গিয়ে থেমে যান। কারণ, গাভাস্কার বলে যাচ্ছিলেন, ‘তোমাকে (পন্ত) পরিস্থিতিটা ভালো করে বুঝতে হবে। এটা আমার স্বাভাবিক খেলা—এমন বলার সুযোগ নেই। আমি দুঃখিত, এটা তোমার স্বাভাবিক খেলা না।’
গাভাস্কার এরপর জোর দিয়ে বলেন, ‘এটা একটা বোকামো (স্টুপিড) শট। এটা দলকে আরও বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া।’ ভোগলে এরপর বলেন, ‘আমার মনে হয়, ড্রেসিংরুমে এটা নিয়ে খুব বেশি কথা হবে না।’ গাভাস্কারের রাগ তখনও প্রশমন হয়নি। সোজাসাপ্টা বলেন, ‘তার (পন্ত) ড্রেসিংরুমে যাওয়া উচিত নয়।’ হাত দিয়ে দেখিয়ে বলেন, ‘তার অন্য (অস্ট্রেলিয়া) ড্রেসিংরুমে যাওয়া উচিত।’
গাভাস্কার এরপর মধ্যাহ্নভোজ বিরতির সময় স্টার স্পোর্টসকে বলেছেন, ‘(বলটা) লেগ সাইডে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু গিয়েছে অফ সাইডে। বলতে পারেন কিছু দুর্ভাগ্য। কিন্তু ডিপ পয়েন্ট ও ডিপ স্কয়ার লেগে দুজন ফিল্ডার থাকতে তখন ওটা খুব বাজে শট সিলেকশন।’
গাভাস্কার এর আগে চ্যানেলটিকে বলেছিলেন, যখন ফিল্ডার থাকবে না সেখানে, তাঁর অমন শট মেনে নেওয়া যায়। কারণ, সেটা ‘খুব ভালো সুযোগ নেওয়া হয়।’
পন্ত তাঁর ক্যারিয়ারে এমন অপ্রথাগত ও আক্রমণাত্মক শটে রানও পেয়েছেন। কিন্তু গাভাস্কারের মতে, পন্ত অমন শট খেলতে পারেন ভেবেই দুজন ফিল্ডারকে সেখানে রাখা হয়েছিল। এক্ষেত্রে পন্ত মোটেও বিচক্ষণতার পরিচয় দেননি, ‘মনে হয়েছে, রান করতে সে শুধু ওই একটি পথই জানে। তাই সে যদি প্রচলিত শটে রান করতে না পারে, যদি এগিয়ে গিয়ে লং অন দিয়ে জোরে মেরে রান করে কিংবা শুধু এসব শট খেলার কথা ভাবে—তাহলে এর অর্থ টেস্ট পর্যায়ে সব সময় সফল হতে পারবে না। আবার এটাও ভাবতে হবে, সে কখনো কখনো কিছু রানও করে দেবে। যদি সেটাই হয়, তাহলে সে পাঁচে ব্যাট করতে পারবে না, আরও নিচে নামতে হবে।’