‘এমন কান্নাভেজা বিদায় কেন হবে তামিমের, তাকে আমরা ফুল দিয়ে বিদায় জানাব’
তপন দত্ত একসময় ফুটবল ও ক্রিকেট দুটোই খেলতেন। খেলেছেন তামিম ইকবালের বাবা ইকবাল খানের সঙ্গেও। তামিম ইকবালের ক্রিকেটের হাতেখড়ি অনেকটা তাঁর হাত ধরেই। আজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলার সংবাদ সম্মেলনেও তামিম শৈশবের গুরুকে স্মরণ করলেন। অন্য সবার মতো গুরু তপন দত্তও অবাক তামিমের আকস্মিক অবসরের সিদ্ধান্তে।
তপনও মনে করছেন বাংলাদেশ দলকে আরও অনেক কিছু দেওয়ার ছিল তামিমের। হুট করে শিষ্যের এমন সিদ্ধান্তে তিনি ব্যথিত। তামিমের অবসরের ঘোষণার সময় তপন নগরের রুমঘাটার বাসায় ছিলেন। এক ছাত্র তাঁকে প্রথম তামিমের বিদায়ের সংবাদটি দেন। এরপর তিনি টিভি খুলে তামিমের অশ্রুভেজা বিদায়ের ঘোষণাটা দেখেন। প্রিয় ছাত্রের কান্নায় তাঁর চোখের কোণেও জল জমেছে।
তপন বলেন, ‘তার (তামিম) এমন বিদায় কাম্য নয়। চোখে জল ভালো লাগেনি। আমি অবাক হয়েছি। তার আরও দুবছর জাতীয় দলে খেলা উচিত ছিল। সামনের বিশ্বকাপ তো বটেই। আরও অনেক কিছু দেওয়ার সামর্থ্য তামিমের আছে।’
তপন দত্তের সঙ্গে কথা হচ্ছিল তাঁর বাসায়। বিদায়বেলায় তামিমের তপন–স্মরণের পর তপন দত্তের বাসায় গণমাধ্যমকর্মীদের আনাগোনা বেড়েছে। বাসাটির শোকেসে শোভা পাচ্ছে নানা ক্রেস্ট ও ট্রফি। একটি ছবিতে চোখ আটকে গেল। ক্রিকেট দলের ছবি। ছবিটি ১৯৮০ সালে চট্টগ্রাম জেলা ক্রিকেট দলের। ওই দলের সদস্য ছিলেন তামিমের বাবা প্রয়াত ইকবাল খান ও তপন দত্ত। তামিম ও নাফিস ইকবালের ক্রিকেটার হওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই তপন দত্ত ফিরে গেলেন প্রায় তিন দশক আগে।
‘১৯৯৬ সালে আমি ক্রিকেট কোচিং শুরু করি। তখন ইকবাল খান বললেন, নাফিস ও তামিমকে যেন একটু ক্রিকেট শেখাই। ৯৭ সালের দিকে তাদের ক্রিকেট কোচিং শুরু করি। তখন তামিমদের চাচা আকবরও আসতে। তামিম ৯ বছর বয়স থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত আমার সঙ্গে শিখেছে।’ স্মৃতির পাতা হাতড়ে বলতে লাগলেন তপন।
তপন দত্ত মনে করেন, সোজাসাপ্টা কথা বলেন তামিম। ক্রিকেট মিশে আছে তাঁর রক্তে। স্টেডিয়ামপাড়ায় বাবা–চাচাদের দেখে দেখে ক্রিকেটের প্রতি তামিম–নাফিসদের অনুরাগ। তপন বলেন, ‘তাকে দিয়ে ডিফেন্স করানো শেখাতে গলদঘর্ম হয়েছে আমার। সে শুধু চার–ছক্কা মারতে চাইত। কিছুটা দুষ্টু প্রকৃতিরও ছিল। তবে তার মনটা অনেক ভালো, আবেগপ্রবণ।’
তামিমের এই সিদ্ধান্তের মধ্যেও কি আবেগ কাজ করেছে, নাকি অন্য কোনো কারণ? এমন প্রশ্নের কোনো উত্তর তপনের জানা নেই। তামিমের সঙ্গে তপন দত্তের শেষ কথা হয় এপ্রিলে আয়ারল্যান্ডের বাংলাদেশ সফরের সময়। এরপর আর কথা হয়নি বলে তিনি জানান। তপন দত্ত বলেন, ‘তামিমের সঙ্গে আমার মাঝেমধ্যে কথা হয়। কিন্তু সে এসব বিষয় নিয়ে কিছু আমাকে বলেনি। অবসরের কথাও বলেনি।’
নাফিস, তামিমের মতো নাজিম উদ্দিনও তপন দত্তের ক্রিকেট একাডেমির ছাত্র ছিলেন। জাতীয় ক্রিকেটে চট্টগ্রামের আর তেমন প্রতিনিধি এখন নেই বললেই চলে। অনেকের মতো ষাটের কাছাকাছি বয়সের তপন দত্তও মনে করেন, তামিমের এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা দরকার।
তপন দত্ত বলেন, ‘আমার সঙ্গে কথা হলে তাকে অবশ্যই ফিরে আসতে বলব। এমন কান্নাভেজা বিদায় কেন হবে তামিমের! তাকে আমরা ফুল দিয়ে বিদায় জানাব। বীরের বেশে।’