এই মাহমুদুলকেই দেখতে চায় বাংলাদেশ
ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ার। কিন্তু অর্জন অবিশ্বাস্য! বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে মাহমুদুল হাসানের ক্যারিয়ার এই দুই লাইনে ব্যাখ্যা করা যায়। এখন পর্যন্ত দেশের হয়ে ৮ টেস্ট খেলেছেন। এর মধ্যে মাউন্ট মঙ্গানুইতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন ২২৮ বল খেলে।
সেই টেস্টে মাহমুদুল যখন ৭৮ রানে আউট হন, নিউজিল্যান্ডের চার পেসারে সাজানো বোলিং আক্রমণ ততক্ষণে ক্লান্ত। পরের ব্যাটসম্যানরা সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যান ৪৫৮ রানে। যেখান থেকে ম্যাচজুড়ে দাপট দেখাতে পেরেছে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত জিতে গড়েছে ইতিহাসও।
টেস্ট ক্রিকেটে সেই ৭৮ ছিল মাহমুদুলের তৃতীয় ইনিংস। ৭৮ তো সংখ্যামাত্র, নতুন বলে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতা নিউজিল্যান্ডের পেসারদের বিপক্ষে মাহমুদুলের সেই প্রতিরোধের দাম ৭৮ চেয়ে বহুগুণ বেশি।
মাহমুদুলের পরের ইনিংসও ইতিহাস। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের ডারবান টেস্টে যখন একের পর এক ব্যাটসম্যান আসা–যাওয়ায় ব্যস্ত, তখন বাংলাদেশ পেয়ে যায় মাহমুদুল নামের ক্লান্তিহীন লড়াকুকে।
৩২৬ বল খেলার পথে ক্রিজে ছিলেন ৪৪২ মিনিট। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মাহমুদুল যখন আউট হলেন, তাঁর নামের পাশে জ্বলজ্বল করছিল ১৩৭ রান। সেটি টেস্ট ক্রিকেটে মাহমুদুলের প্রথম সেঞ্চুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ানও মাহমুদুল।
দেশের বাইরের কন্ডিশনে ধারাবাহিকতা অবশ্য দেশের মাটিতে ধরে রাখতে পারেননি। পরের ১০ ইনিংসে মাহমুদুলের ফিফটি মাত্র ১টি। শুধু টেস্ট ক্রিকেট নয়, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট, লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেও রান পাচ্ছিলেন না। ইনিংস যায়, ইনিংস আসে—কিন্তু ছয় মাস ধরে কোথাও রানের দেখা পাচ্ছিলেন না মাহমুদুল। গত বছর মে মাসের পর বিভিন্ন সংস্করণে ১৮ ইনিংস খেলেছেন। তাতে ফিফটি মাত্র একটি।
অবশেষে বিপিএলে এসে রানের দেখা পেলেন মাহমুদুল। খুলনা টাইগার্সের হয়ে কাল ৪৩ বলে ৬৪ রানের অপরাজিত ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলেন। এবারের বিপিএলে তাঁর দ্বিতীয় ফিফটি। সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও উঠেছে মাহমুদুলের হাতে। বিপিএলও শেষ করেছেন খুলনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হিসেবে (৯ ম্যাচে ২৫৩ রান)। লিগ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে খুলনা।
সংস্করণ যেটাই হোক, মাহমুদুলের ছন্দে ফিরতে দরকার ছিল একটা ইনিংস। বিপিএলে সেটা পেয়ে যাওয়ার পর আর পেছনে ফিরতে হয়নি। টেস্ট, প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটের রানখরা কাটিয়ে ছন্দে ফেরার গল্পটা শোনা গেল মাহমুদুলের মুখেই, ‘আত্মবিশ্বাস ফিরে পেতে একটা ইনিংসই যথেষ্ট। আমি ওই একটা ইনিংসের খোঁজে ছিলাম। সেটা পাওয়ার পর চেষ্টা করছি পুরো বিপিএলে তা ধরে রাখার।’
টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিষেক, আর টেস্টের সাফল্যে মাহমুদুলের নামের পাশে ‘টেস্ট ব্যাটসম্যান’ তকমাটা বসে যায়। কিন্তু ২০ ওভারের খেলায়ও যে মাহমুদুলের দক্ষতা আছে, সেটি পরপর দুই বিপিএলে বুঝিয়ে দিলেন মাহমুদুল। সংস্করণভেদে মানিয়ে নেওয়ার দক্ষতাটা যে আছে, মাহমুদুল নিজেই সে দাবি করলেন, ‘লঙ্গার ভার্সন আর শর্টার ভার্সন কিছু না। মাইন্ড সেটটা গুরুত্বপূর্ণ। যখন যে খেলা, সেটা নিয়ে চিন্তা করলে আপনি সব সংস্করণেই ভালো করতে পারবেন।’
টি-টোয়েন্টিতে দ্রুত রান তোলা ও টেস্টের ধৈর্যের পরীক্ষায় মাহমুদুল পাস করেছেন। আর ৫০ ওভারের খেলাটা বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের হাতের তালুর মতো মুখস্থ। মাহমুদুলও তা–ই। তিনি ২০২০ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী দলের সদস্য। সেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাহমুদুলের সেঞ্চুরিটি কার না মনে আছে! ঘরোয়া লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ২১ ম্যাচ খেলেছেন। তাতে একটি সেঞ্চুরি। সে জন্যই হয়তো এক সংস্করণের বাক্সে বন্দী হওয়ার ভয়ও কাজ করে না এই তরুণের, ‘ভয় কাজ করে না। ভয় পেলে তো আর ক্রিকেট খেলা যাবে না (হাসি)।’