শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটে পদত্যাগের হিড়িক, জয়াবর্ধনের পর দায়িত্ব ছাড়লেন প্রধান কোচ সিলভারউড
২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও প্রথম পর্ব থেকে বিদায় নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ‘ডি’ গ্রুপে লঙ্কানরা এবার দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের সঙ্গে পেরে ওঠেনি। এমন ভরাডুবির পর গতকাল রাতে পদত্যাগ করেন দলটির পরামর্শক মাহেলা জয়াবর্ধনে।
কিংবদন্তি জয়াবর্ধনের সরে দাঁড়ানোর ১২ ঘণ্টা পেরোতে না পেরোতেই এবার পদত্যাগ করলেন শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচ ক্রিস সিলভারউড। আজ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট (এসএলসি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিলভারউডের চাকরি ছাড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। যদিও বোর্ড জানিয়েছে, ব্যক্তিগত কারণে শ্রীলঙ্কায় আর থাকতে চান না ৪৯ বছর বয়সী এই ইংলিশ কোচ।
সিলভারউডের পদত্যাগের ঘোষণায় তাঁর বক্তব্য এভাবে প্রকাশ করেছে এসএলসি, ‘একজন আন্তর্জাতিক কোচ হওয়া মানে প্রিয়জনদের কাছ থেকে দীর্ঘ সময় দূরে থাকা। পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে জানাচ্ছি যে, আমার বাড়িতে ফেরার সময় এসেছে। আমি পরিবারের সঙ্গে দারুণ কিছু সময় কাটাতে চাই।’
দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে সিলভারউড আরও বলেছেন, ‘শ্রীলঙ্কার কোচ হিসাবে কাটানো সময়কালে আমাকে সমর্থন দেওয়ার জন্য খেলোয়াড়, কোচ, প্রশাসনিক স্টাফ ও এসএলসির ব্যবস্থাপনা বিভাগকে ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের সহযোগিতা না পেলে কোনো কিছুতেই সফল হওয়া সম্ভব হতো না। শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটের অংশ হওয়া আমার জন্য সত্যিই গর্বের। এখান থেকে আমি অনেক ভালো লাগার স্মৃতি নিয়ে যাব।’
২০২২ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচ হন সিলভারউড। সে বছর দেশটির টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যে তাঁর অধীনেই মেন্ডিস-শানাকারা এশিয়া কাপ জেতে সবাইকে চমকে দেয়। গত বছরও ঘরের মাঠে এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলে। এ ছাড়া দেশে ও বিদেশে একাধিক দ্বিপক্ষীয় সিরিজ জেতে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে ওয়ানডে সিরিজ ও বাংলাদেশের মাটিতে দুটি টেস্ট সিরিজ জয়।
শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের জন্য সিলভারউডের অবদানকে ‘মূল্যবান’ মনে করছে এলএলসি। বোর্ডের পক্ষে থেকে তাঁকে ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনাও জানানো হয়েছে।
পদত্যাগের কারণ হিসাবে সিলভারউড ব্যক্তিগত বিষয় সামনে আনলেও জয়াবর্ধনে কোনো কারণ জানাননি। ২০২২ সালে নিজ দেশের বোর্ডের সঙ্গে প্রথমবারের মতো চুক্তিবদ্ধ হন সাবেক এই অধিনায়ক। এ বছরের জানুয়ারিতেই নতুন চুক্তিপত্রে সই করেন। সেই চুক্তি নবায়নের ৬ মাস যেতে না যেতেই জয়াবর্ধনের পদত্যাগের সিদ্ধান্ত কিছুটা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে।
শ্রীলঙ্কা দলের পরামর্শক হলেও জয়াবর্ধনেকে প্রাথমিকভাবে দেশটির ক্রিকেটের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক পরিবর্তন তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। বিভিন্ন ঘরোয়া প্রতিযোগিতায় ভালো করা ক্রিকেটারদের হাই পারফরম্যান্স (এইচপি) সেন্টারে নিয়ে আসা, সেখানে খেলোয়াড়দের নিয়ে বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত জোগাড় করা ও তাঁদের কর্মক্ষমতা বাড়ানোর ওপর মনোযোগ দেওয়াই ছিল জয়াবর্ধনের কাজ। চুক্তি নবায়নের পর জয়াবর্ধনের কাছে তাঁর ভূমিকা আরও স্পষ্ট করা হয়।
তবে ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফো মনে করছে, জয়াবর্ধনে চেয়েছিলেন জাতীয় দলের সঙ্গে থাকতে। দল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ওয়েস্ট ইন্ডিজেও যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এসএলসি সম্প্রতি আরেক পরামর্শক হিসাবে সনাৎ জয়াসুরিয়াকে নিয়োগ দেয় এবং জয়াসুরিয়াকেই টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলের সঙ্গে পাঠায় জয়াবর্ধনে সম্ভবত এ কারণে মন ক্ষুণ্ন হন এবং পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন।
মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানে জয়াবর্ধনে ও সিলভারউডের পদত্যাগে এটা নিশ্চিত, লঙ্কান ক্রিকেটে পরিবর্তনের হাওয়া লেগে গেছে।