নাজমুলের অধিনায়কত্ব, নাজমুলের ইনিংস কেমন লাগল মুমিনুলের
অধিনায়কত্বের দায়িত্ব অনেকের ব্যাটে বোঝা হয়ে চেপে বসে। আবার এমন কেউ কেউ আছেন, যাঁদের কাছে বোঝার বদলে এটি হয়ে ওঠে অনুপ্রেরণা। অধিনায়ক হিসেবে একটা টেস্ট শেষ হওয়ার আগেই কাউকে এর কোনো এক দলে ফেলে দেওয়াটা হয়তো ঠিক নয়। তবে প্রভাত থেকে দিনের পূর্বাভাস তো পাওয়াই যায়। নাজমুল হাসানের জন্য অধিনায়কত্ব যে বোঝার বদলে বাড়তি অনুপ্রেরণা, তা বুঝতেও মনে হয় এক টেস্টই যথেষ্ট।
টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকে বাংলাদেশের আর কারও সেঞ্চুরি ছিল না এতদিন। নাজমুল হাসান টেস্ট অধিনায়কত্বটা উদযাপন করেছেন সেই সেঞ্চুরি দিয়ে। সেটিও টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে, যখন ম্যাচের গতিপথ কোন দিকে যাবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা। এর আগে ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে অভিষেকেও বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেছেন। সব মিলিয়ে নাজমুল অধিনায়কত্ব ব্যাপারটা উপভোগই করেন বলে মনে হচ্ছে।
দল তো ভালোই খেলছে। ওই হিসেবে চিন্তা করলে আমার মনে হয় ভালো। কারও সাথে কারও তুলনা করা যাবে না। একেকজনের থিওরি একেকরকম। আমার মনে হয় লিডার হিসেবে ও ভালো। যেটা ভালো বোঝে, সেটাই করে। ভেতরের জিনিসগুলো বোঝে। অনেক ক্যাপ্টেন বোলারের কথা শোনে। ও ওর মতো করে।
অধিনায়কত্ব যাঁর জন্য বিষম এক চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল, সেই মুমিনুল হক কী বলছেন নাজমুলের কালকের ইনিংস নিয়ে? সিলেটে টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে এই প্রশ্নের জবাবে মুমিনুল বললেন, ‘শান্ত (নাজমুল) গত ২-৩ বছর ধরে খুবই ভালো ব্যাটিং করছে। ও খেলা খুব ভালো বোঝে। নিজের খেলাটা সম্পর্কেও খুব ভালো জানে। মাথাটা পরিষ্কার থাকে। হোক টেস্ট, হোক ওয়ানডে; প্রতিপক্ষের পরিকল্পনা খুব ভালো বোঝে। এটা দারুণ একটা ইনিংস ছিল। ওরা যে চাপ সৃষ্টি করেছে, তার মধ্যে খুব ভালো ব্যাটিং করেছে।’
মুমিনুল ‘ইনিংস ছিল’ বলছেন, তবে নাজমুলের ইনিংস এখনো অতীতের খাতায় চলে যায়নি। তৃতীয় দিন শেষে ১০৪ রানে অপরাজিত নাজমুলের সুযোগ আছে ইনিংসটিকে আরও বড় করার। তা তিনি করতে পারবেন কি না, সেটি তো আগামীকালই জানা যাবে। তবে তাঁকে থামানোর পথ খুঁজতে নিউজিল্যান্ডকে যে অনেক গবেষণা করতে হবে, তা বলে দিয়েছেন কিউই ফাস্ট বোলার কাইল জেমিসন। নাজমুলের ইনিংসের প্রশংসা করে জেমিসন বলেছেন, ‘যেভাবে ও ইনিংসটা নিয়ন্ত্রণ করেছে, রানের ধারা অব্যাহত রাখতে যেভাবে ইতিবাচক থেকেছে, সঙ্গে সিঙ্গেলও বের করেছে, এটা দেখতে দারুণ ছিল। আমার মনে হয় না, খুব একটা সুযোগ দিয়েছে (আউট করার)। আমরা যা কিছু চেষ্টা করেছি, সবকিছুই ভালোভাবে সামলেছে।’ এরপরই যোগ করেছেন, ‘আজ রাতে আমাদের ভেবে বের করতে হবে আগামীকাল ওকে ফেরাতে কী করতে পারি।’
টেস্টে সর্বশেষ চার ইনিংসে এটা নাজমুলের তৃতীয় সেঞ্চুরি। সব মিলিয়ে পঞ্চম। যে কারণে এই সেঞ্চুরিটা আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সেই অধিনায়কত্ব কেমন করছেন নাজমুল? সাবেক অধিনায়ক হিসেবে মুমিনুলের যা আরও ভালো বোঝার কথা। যদিও প্রশ্নটার উত্তরে তিনি সাংবাদিকদের বললেন, ‘আপনারা আরও ভালো বুঝবেন। আপনারা বাইরে থেকে দেখেন।’
এরপর অবশ্য নিজের মূল্যায়নটাও বলেছেন, ‘দল তো ভালোই খেলছে। ওই হিসেবে চিন্তা করলে আমার মনে হয় ভালো। কারও সাথে কারও তুলনা করা যাবে না। একেকজনের থিওরি একেকরকম। আমার মনে হয় লিডার হিসেবে ও ভালো। যেটা ভালো বোঝে, সেটাই করে। ভেতরের জিনিসগুলো বোঝে। অনেক ক্যাপ্টেন বোলারের কথা শোনে। ও ওর মতো করে।’
আপনি সিনিয়র হলে নিজে থেকে এগিয়ে আসা উচিত। না এলে কাজের প্রতি অসম্মান করছেন। অধিনায়কের নেওয়া না–নেওয়া ওর ব্যাপার। অনেক সময় অনেক কিছু মিসিং হয়, হ্যাং হয়ে যায়। এটা তাই সিনিয়রদের দায়িত্ব।
২৪তম টেস্ট খেলছেন নাজমুল। বাংলাদেশের এই দলে সিনিয়র অনেক ক্রিকেটার নেই। তারপরও দুজন আছেন, যাঁরা নাজমুলের চেয়ে অনেক বেশি টেস্ট খেলেছেন। মুশফিকুর রহিমের এটি ৮৭তম টেস্ট, বাংলাদেশের পক্ষেই যা সবচেয়ে বেশি। মুমিনুল খেলছেন ৫৮তম টেস্ট। মুমিনুলের চেয়েও বেশি সময় বাংলাদেশের অধিনায়ক ছিলেন মুশফিকুর। মাঠেও নাজমুলকে পরামর্শ দিতে দেখা গেছে এই দুজনকে। মুমিনুল যখন অধিনায়ক ছিলেন, তখন কি সিনিয়রদের কাছ থেকে এমন সহযোগিতা পেয়েছেন?
মুমিনুলের মনে যা–ই থাক, মুখে কূটনৈতিক উত্তরই দিলেন, ’আমার সময় এটা মিসিং ছিল না। (তাছাড়া) আমার সময় সিনিয়ররা সেভাবে ছিলই না।’
তিনি আর মুশফিক যা করেছেন, সিনিয়র হিসেবে এটি তাঁদের দায়িত্ব বলেই মনে করেন মুমিনুল, ‘আপনি সিনিয়র হলে নিজে থেকে এগিয়ে আসা উচিত। না এলে কাজের প্রতি অসম্মান করছেন। অধিনায়কের নেওয়া না–নেওয়া ওর ব্যাপার। অনেক সময় অনেক কিছু মিসিং হয়, হ্যাং হয়ে যায়। এটা তাই সিনিয়রদের দায়িত্ব।’