আজ আড়াই শ ছোঁবেন মুশফিক
বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন কে? উত্তরটি যেহেতু বেশির ভাগেরই জানা, তাই এই প্রশ্নে খেলেছেন নয়, খেলছেন বলাই শ্রেয়। কারণ, মুশফিকুর রহিম তো এখনো খেলছেন। আজও মাঠে নামবেন। আজকের ম্যাচ তাঁকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে একটি মাইলফলক। মুশফিকের নিশ্চয়ই তা জানা আছে!
আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে আছে। আজকের ম্যাচটি বাংলাদেশের জন্য সিরিজ বাঁচানোর লড়াই। এর পাশাপাশি মুশফিকের নিজের জন্যও ম্যাচটা যেহেতু মাইলফলক ছোঁয়ার, তাই তাঁর ভালো করার প্রেরণার অভাব হবে না।
প্রশ্ন হলো কোন সে মাইলফলক? ২৫০তম ম্যাচ। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ২৫০তম ওয়ানডে খেলবেন মুশফিক। ১৭ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে মনে রাখার মতো এক মাইলফলকই তাঁর সামনে। তা ওয়ানডেতে এমন মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচে এর আগে কেমন করেছেন মুশফিক?
প্রথম ম্যাচটা তো সবার জন্যই মাইলফলকের। ২০০৬ সালে হারারেতে মুশফিকের সেই অভিষেক ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে জিতেছিল বাংলাদেশ। খালেদ মাসুদ সে ম্যাচে উইকেটকিপার থাকায় ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছিলেন। বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জেতায় আর ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পাননি।
মজার বিষয়, মুশফিকের ক্যারিয়ারে ৫০তম ওয়ানডেতেও ৮ উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। শুধু কি তা–ই, মুশফিকের ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল ৬ আগস্ট, ৫০তম ম্যাচটিও খেলেছিলেন ২০০৯ সালের সেই আগস্টেই, এবার দুই দিন পর ৯ আগস্ট। কাকতাল আছে আরও। প্রতিপক্ষ সেই জিম্বাবুয়েই আর ভেন্যু? সেটাও জিম্বাবুয়েতে! বুলাওয়ে। সে ম্যাচেও মুশফিক ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পাননি। তত দিনে উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্বটা পেলেও ব্যাটিং অর্ডারে উঠে আসতে পারেননি। সেদিন ব্যাটিং অর্ডারে ছয়ে ছিলেন মুশফিক।
মুশফিক ক্যারিয়ারের ১০০তম ওয়ানডে খেলেছেন বাংলাদেশের মাটিতে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২০১১ সালের অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে। তত দিনে ব্যাটিং অর্ডারে চারে উঠে আসায় আর সে ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাটিং করায় ভালো কিছু করার সুযোগ পেয়েছিলেন। মুশফিক সুযোগটা কাজে লাগিয়েছিলেন।
বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ম্যাচ (শীর্ষ পাঁচ):
ইনিংসের প্রথম দুই ওভারের মধ্যে ইমরুল কায়েস, তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ আশরাফুল ফিরে যাওয়ার পর ভীষণ চাপে পড়েছিল বাংলাদেশ। পঞ্চম ওভারে আউট হন সাকিব আল হাসানও। মড়ক লাগার সেই ইনিংসেই অলক কাপালি, নাঈম ইসলাম ও নাসির হোসেনকে নিয়ে মেরামতের কাজে নেমে পড়েছিলেন ২৪ বছর বয়সী মুশফিক। ১০৯ বলে তাঁর ৬৯ রানের ইনিংসটিকে তাই লো স্ট্রাইক রেটের দোষে দুষ্ট করলে অন্যায়ই হয়। সময়ের প্রয়োজনে ওই ইনিংস খেলতে হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। এ যাত্রায়ও সেই ৮ উইকেট! তবে, এবার ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচটি জিতে নেয় ৮ উইকেটে।
মুশফিকের ক্যারিয়ারের ১৫০তম ওয়ানডেটিও বাংলাদেশের মাটিতে। ২০১৫ সালের জুনে বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ভারত। মাশরাফি বিন মুর্তজার অধিনায়কত্বে সেই সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজের প্রথম ম্যাচটি ছিল মুশফিকের ক্যারিয়ারের ১৫০তম ওয়ানডে। মুশফিক সেদিন ১৯ বলে ১৪ করে আউট হলেও ৭৯ রানের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। আর ২০০তম ওয়ানডে?
সেটি ২০১৯ সালে বাংলাদেশ দলের নিউজিল্যান্ড সফরে। ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৩৬ বলে ২৪ রান করে আউট হয়েছিলেন মুশফিক। বাংলাদেশের ২২৬ রান তাড়া করে নিউজিল্যান্ড জিতেছিল কয় উইকেটে? সেই ৮-ই!
বাংলাদেশের হয়ে অন্তত ২০০ ওয়ানডে খেলেছেন মোট পাঁচ ক্রিকেটার। নিশ্চয়ই ধরে ফেলেছেন! হ্যাঁ, ‘ফ্যাব ফাইভ’—মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল (২৪১), সাকিব আল হাসান (২৩৩), মাহমুদউল্লাহ (২১৮) ও মাশরাফি বিন মুর্তজা (২১৮)। নামগুলো সর্বোচ্চসংখ্যক ম্যাচ খেলার ক্রম অনুযায়ী সাজানো।
বর্তমান দলে মুশফিকের সঙ্গে আছেন সাকিব। বাংলাদেশের এই তারকা অলরাউন্ডারও ২০০৮ সালে ক্যারিয়ারের ৫০তম ওয়ানডে সেভাবে রাঙাতে পারেননি। ডারউইনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪৩ বলে ১৯ রান করার পর ২টি উইকেট পেয়েছিলেন।
অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল সেই ৮ উইকেটেই। ২০১০ সালে সাকিবের ক্যারিয়ারের ১০০তম ওয়ানডেতে জিতেছিল বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, ৬ উইকেটে। ব্যাটিংয়ে ভালো করতে না পারলেও ৪ উইকেট নিয়েছিলেন সাকিব। তাঁর ১৫০তম ওয়ানডেতেও ফিরে আসে সেই ৮ উইকেটের গেরো! মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে সাকিব ২টি উইকেট নিলেও ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ পাননি। ম্যাচটা বাংলাদেশ জিতেছিল ৮ উইকেটে।
মুশফিকের মতো সাকিবের ২০০তম ওয়ানডেও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ২০১৯ বিশ্বকাপে। সেই বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সাকিব নিজের সেই মাইলফলকের ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছিলেন ৬৪ রান এবং বল হাতে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। কিন্তু বাংলাদেশ হেরেছিল ২ উইকেটে।