ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে ডাক পাওয়া কে এই জুয়েল

জুয়েল অ্যান্ড্রুসিপিএল

স্বপ্ন বুঝি এভাবেই পূরণ হয়!

তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজ খেলতে এ মাসেই শ্রীলঙ্কা সফরে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সে জন্য আজ দুটি সংস্করণের স্কোয়াড ঘোষণা করেছে তাঁরা। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে শিমরন হেটমায়ার, আন্দ্রে রাসেল, নিকোলাস পুরান ও আকিল হোসেনের ওয়েস্ট ইন্ডিজ টি-টোয়েন্টি দল থেকে সরে দাঁড়ানো হতে পারত স্কোয়াড ঘোষণার বড় খবর। তবে খবর আরও একটি আছে এবং সেটিও কম বয়সী এক ক্রিকেটারের জন্য মোটেও ছোট খবর নয়।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ জাতীয় দলে প্রথমবারের মতো ডাক পেয়েছেন ১৭ বছর ৩০৩ দিন বয়সী এক ‘রত্ন’। আসলে ‘জুয়েল’ নাম হওয়ায় বাংলা অর্থে তাঁকে রত্নও বলতে পারেন। পুরো নাম জুয়েল অ্যান্ড্রু। কিপিং করার পাশাপাশি টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যান।

ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময় হিসেবে দলে জায়গা করে নেওয়া জুয়েল অ্যান্ড্রুর মতো তরুণ খেলোয়াড়দের দেখতে আমরা মুখিয়ে আছি।
ড্যারেন স্যামি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ

ওয়ানডে স্কোয়াডে ডাক পাওয়ায় এখন তাঁকে ঘিরে একটি সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খেলার সুযোগ পেলে এই সংস্করণে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সর্বকনিষ্ঠ খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেকের রেকর্ড গড়তে পারেন জুয়েল। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১৭ বছর বয়সে অভিষেক হয়েছে শুধু ডেরেক সিলি ও কিংবদন্তি অলরাউন্ডার গারফিল্ড সোবার্সের। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৯ এর মধ্যে ১১টি টেস্ট খেলা সিলির টেস্ট অভিষেক ১৭ বছর ১২২ দিন বয়সে। ১৭ বছর ২৪৫ দিন বয়সে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে টেস্ট অভিষেক সর্বকালের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার হিসেবে বিবেচিত সোবার্সের।

কিপিং করলেও ব্যাটিংয়ে বেশি নজর কেড়েছেন জুয়েল
সিপিএল

ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (সিপিএল) ৭ ম্যাচ, ৩টি লিস্ট এ ম্যাচ ও প্রথম শ্রেণির ৮ ম্যাচ খেলেই নজর কেড়েছেন জুয়েল। চোখে পড়েছেন ভিভ রিচার্ডস, ইয়ান বিশপ ও শিবনারায়ণ চন্দরপলদের মতো কিংবদন্তিদের। এবার সিপিএলে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে অভিষিক্ত জুয়েল এই টুর্নামেন্টে তাঁর প্রথম ম্যাচেই সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস প্যাট্রিয়টসের তারকা পেসার আনরিখ নর্কিয়া ও স্পিনার তাব্রেইজ শামসির বিপক্ষে ৫০ রানে অপরাজিত ছিলেন। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ধাপে ধাপে উঠে আসা জুয়েল অনেকের চোখেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ড্যারেন স্যামিও তাঁকে নিয়ে আশাবাদী, ‘ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনাময় হিসেবে দলে জায়গা করে নেওয়া জুয়েল অ্যান্ড্রুর মতো তরুণ খেলোয়াড়দের দেখতে আমরা মুখিয়ে আছি।’

আরও পড়ুন

অ্যান্টিগা ও বারবুডা ফ্যালকনসের হয়ে ৩০ বলে অপরাজিত ৫০ রানের সেই ইনিংস দিয়ে বড় মাপের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন জুয়েল। তখন তাঁর বয়স ১৭ বছর ২৬৬ দিন। ১৭ বছর ১৭৫ দিন বয়সে আইপিএলে ফিফটি রয়েছে ভারতের রিয়ান পরাগের। সে যাহোক, এ বছরের শুরুতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে সর্বোচ্চ রানও (৪ ইনিংসে ৬৯.০০ গড়ে ২০৭, এক সেঞ্চুরি ও এক ফিফটি) তাঁর। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আগে অ্যান্টিগা ও বারবুডায় অনুষ্ঠিত কুল অ্যান্ড স্মুথ টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ (৯ ইনিংসে ৪০.৩৮ গড়ে ৩২৩) রান করেন জুয়েল।

অ্যান্টিগার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে স্কুলের লিগে টানা পাঁচ সেঞ্চুরি আছে জুয়েলের। লিওয়ার্ড আইল্যান্ডসের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের অধিনায়কত্বও করেছে। ব্যাটিংয়ে জুয়েলের আদর্শ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ব্যাটসম্যান শাই হোপ।

সিপিএলে ফ্র্যাঞ্চাইজি দল অ্যান্টিগা ও বারবুডা ফ্যালকনসের কোচিং স্টাফের সদস্য ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি পেসার কার্টলি অ্যামব্রোসও জুয়েলকে নিয়ে আশাবাদী। গত সেপ্টেম্বরে সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘তার বয়স মাত্র ১৭ বছর। এ অবস্থায় আমরা তাকে চাপে ফেলতে চাই না। তার বিষয়ে একটি ব্যাপার হলো, সে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী। ইতিবাচক এক তরুণ। কোচ এবং খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হলো তার মনোযোগ ধরে রাখা এবং দেখাশোনা করা।’

মা ভেরোনিক হিলের সঙ্গে জুয়েল
ভেরোনিক হিল

জুয়েলকে আরও ছোটবেলায় দেখাশোনার দায়িত্বটি পালন করেছেন তাঁর মা ভেরোনিক হিল। তাঁর ভাই হিলরয় অ্যান্টিগায় ইয়ং মাস্টার্স স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে যখন ৬ বছর বয়সীদের দলে খেলত, জুয়েল তখন থেকেই ক্রিকেটানুরাগী।

৪ বছর বয়সী জুয়েল সে সময় মাঠের বাইরে বসে ভাইয়ের খেলা দেখত। বাবার সঙ্গে সাদা-কালো টিভিতে ক্রিকেট দেখে বড় হয়ে ওঠা ভেরোনিকও চাইতেন ছেলে ক্রিকেটার হোক। কিন্তু টানাটানির সংসারে দুই ছেলের ক্রিকেট খেলার সরঞ্জাম কিনে দিতে ভেরোনিকের বেশ কষ্ট হয়েছে। সামান্য দোকানের আয় থেকে সংসার চালানোর পর অন্য কাজে ব্যয় করার মতো অর্থ তাঁর ছিল না। তাই শুভাকাঙ্ক্ষীদের সাহায্যের অপেক্ষায়ও থাকতে হয়েছে। কিংবা স্পোর্টস ক্লাবের সাবেক খেলোয়াড়দের সহায়তা।

আরও পড়ুন

চার বছর বয়সের সেই জুয়েল ধীরে ধীরে ব্যাটিং ও উইকেটকিপিংয়ে ডুবে যায়। অ্যান্টিগার বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে স্কুলের লিগে টানা পাঁচ সেঞ্চুরি আছে জুয়েলের। লিওয়ার্ড আইল্যান্ডসের অনূর্ধ্ব-১৫ দলের অধিনায়কত্বও করেছে। ব্যাটিংয়ে জুয়েলের আদর্শ ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ব্যাটসম্যান শাই হোপ। এ নিয়ে তাঁর মা ভেরোনিক এ বছর জানুয়ারিতে ইএসপিএনক্রিকইনফোকে বলেছিলেন, ‘সে শাই হোপের ভিডিও দেখে প্রতিটি শট অনুকরণ করার চেষ্টা করে। আমিও একটু একটু করে ছেলের মধ্যে শাই হোপের অস্তিত্ব দেখতে শুরু করলাম।’

ডাম্বুলায় ১৩ অক্টোবর টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু হয়ে শেষ হবে ১৭ অক্টোবর। এরপর ২০ অক্টোবর পাল্লেকেল্লেতে শুরু হবে ওয়ানডে সিরিজ। ৫০ ওভার সংস্করণের এ সিরিজে জুয়েল অধিনায়ক হিসেবে পাচ্ছেন শাই হোপকে। এখন আর টিভি দেখে নয়, একদম সামনাসামনিই আদর্শকে দেখার ও দেখানোর সুযোগ পাবেন জুয়েল।

আরও পড়ুন