ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে সুপার এইট শুরু ইংল্যান্ডের

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটে হারিয়ে সুপার এইট শুরু করেছে ইংল্যান্ডএএফপি

গ্রুপ পর্বে চার ম্যাচ জিতেই সুপার এইটে উঠে এসেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অন্যদিকে ইংল্যান্ডকে অপেক্ষা করতে হয়েছে একেবারে শেষ পর্যন্ত, তাকিয়ে থাকতে হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকেই গুঁড়িয়ে সুপার এইট শুরু করে অন্যদের যেন একটা বার্তাও দিল বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। ফিল সল্টের ৪৭ বলে ৮৭ রানের সঙ্গে জনি বেয়ারস্টোর ২৬ বলে ৪৮ রানের ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেওয়া ১৮১ রানের লক্ষ্য ইংল্যান্ড পেরিয়ে গেছে ৮ উইকেট ও ১৫ বল বাকি রেখেই।

রান তাড়ায় জস বাটলারের সঙ্গে সল্টের উদ্বোধনী জুটিতে পাওয়ারপ্লেতে ৫৮ রানসহ ওঠে মোট ৬৭ রান। পাওয়ারপ্লেতে মূল হুমকি বাঁহাতি স্পিনার আকিল হোসেনকে নিরাপদে পার করেন দুজন। শেষ পর্যন্ত সে জুটি ভাঙে অফ স্পিনার রোস্টন চেজের বলে বাটলার সামনে এসে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লু হলে। ডানহাতিদের বিপক্ষেও অফ স্পিনার চেজ দারুণ করেছেন। তবে উইকেট দরকার ছিল তাদের, সেটির দেখাই খুব একটা পায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

বাঁহাতি স্পিনার গুড়াকেশ মোতি ও মাঠের বাতাসকে সামনে রেখে বাঁহাতি মঈন আলীকে তিনে পাঠায় ইংল্যান্ড। আন্দ্রে রাসেলের শর্ট বলে মিডউইকেটে ধরা পড়া মঈন বেশি দূর এগোতে পারেননি। মাঝে চেজ চাপ তৈরি করলেও এরপর আর উইকেট হারায়নি ইংল্যান্ড। গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজে টানা দুটি সেঞ্চুরি পাওয়া সল্ট ফিফটি পূর্ণ করেন ৩৮ বলে।

সল্ট ও বেয়ারস্টোর ৪৪ বলে ৯৭ রানের জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকেই নিশ্চিত করে জয়
এএফপি

বেয়ারস্টো ছিলেন শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক, এমন রানতাড়ায় যেটি প্রত্যাশিতও। ১৫তম ওভারে নিজের শেষটি করতে আসা আকিলের ওপর চড়াও হন তিনি, ওই ওভারে আসে ১৬ রান। সল্ট এরপর সময় নেননি একেবারেই। রোমারিও শেফার্ডের করা ১৬তম ওভারে সল্টের স্কোরিং শটের ক্রম ছিল এমন—চার, ছয়, চার, ছয়, ছয়, চার। ৩০ রানের ওই ওভারটিই বিশ্বকাপে কোনো ক্যারিবীয় বোলারের সবচেয়ে খরুচে ওভার। সল্ট ও বেয়ারস্টোর ৪৪ বলে ৯৭ রানের জুটি অবিচ্ছিন্ন থেকেই নিশ্চিত করে জয়।

আরও পড়ুন

এর আগে টসে জিতে অনুমিতভাবেই ফিল্ডিং নেন জস বাটলার, রোভম্যান পাওয়েলও সেটিই করতেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের শুরুর চার ব্যাটসম্যানের রানই ছিল ২৩ থেকে ৩৮-এর মধ্যে, যদিও কেউই এর বড় করতে পারেননি ইনিংস। ওপেনার ব্র্যান্ডন কিং শুরুটা দ্রুতগতির করেন, কিন্তু ১৩ বলে ২৩ রান করে আহত অবসরে যেতে হয় তাঁকে চোট পেয়ে। জনসন চার্লস কিংবা সর্বশেষ ম্যাচে আফগানিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেওয়া নিকোলাস পুরান—দুজনই সময় নিলেও পরে গিয়ে গতি বাড়াতে পারেননি আর। দুজন মিলে ৬৬ বল খেলে করেন ৭৪ রান। পাওয়ারপ্লেতে ৫৪ রান এলেও পরের ৮ ওভারে ৬৩ রানের বেশি আসেনি। উইকেট না মিললেও আদিল রশিদকে নবম ওভারের আগে আনেননি বাটলার।

শুরুর চার ব্যাটসম্যানের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি ওয়েস্ট ইন্ডিজের
এএফপি

১৫তম ওভারে লিয়াম লিভিংস্টোনকে তিন ছক্কা মেরে স্বাগতিকদের মোমেন্টাম এনে দিয়েছিলেন অধিনায়ক রোভম্যান পাওয়েল। কিন্তু পাওয়েলকে থামানোর গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ২০ রানের খরচায় করেন ইংলিশ স্পিনার। পরের ২ ওভারে নিকোলাস পুরান ও আন্দ্রে রাসেলের উইকেট ক্যারিবীয়দের গতি টেনে ধরে আরও। আর্চারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে কট বিহাইন্ড পুরান, রশিদের বলে ডিপ মিডউইকেটে ধরা পড়েন রাসেল।

আরও পড়ুন

শেষ দিকে ১৫ বলে ২৮ রানের ইনিংস খেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজকে নিউজিল্যান্ডের হাত থেকে উদ্ধার করা শেরফান রাদারফোর্ড, এরপরও ১৮০ রানের বেশি তুলতে পারেনি তারা। ১৯তম ওভারে স্যাম কারেন দেন মাত্র ৬ রান। এমন উইকেটে ১৮০ রানের স্কোর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের জন্য যথেষ্ট কি না, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য সে প্রশ্ন ছিল তখন থেকেই। যথেষ্ট যে নয়, সল্টরা প্রমাণ করেছেন সেটিই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসে ডট বল ছিল ৫১টি, ইংল্যান্ড ইনিংসে সেখানে মাত্র ২৯টি। এ ম্যাচে দুদলের পার্থক্যটা ফুটে ওঠে এখানেও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২০ ওভারে ১৮০/৪ (চার্লস ৩৮, পাওয়েল ৩৬, পুরান ৩৬, রাদারফোর্ড ২৮, কিং ২৩; মঈন ১/১৫, লিভিংস্টোন ১/২০, রশিদ ১/২১, আর্চার ১/৩৪)

ইংল্যান্ড: ১৮১/২ (সল্ট ৮৭*, বেয়ারস্টো ৪৮*, বাটলার ২৫, মঈন ১৩; চেজ ১/১৯, রাসেল ১/২১)

ফল: ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: ফিল সল্ট (ইংল্যান্ড)