বৈরিতা ভুলে ভারত–পাকিস্তান যখন ‘বন্ধু’
আইসিসির টুইটার, পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) টুইটারসহ নানাজনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভেসে বেড়াচ্ছে—নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ম্যাচ শেষে ভারতের ড্রেসিংরুমে পাকিস্তানের মেয়েরা। সেখানে দুই দলের খেলোয়াড়েরা শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন, ছোট ছোট দলে ভাগে ভাগ হয়ে কথা বলছেন।
একটা পর্যায়ে দুই দলকে মিলেমিশে একাকার হয়ে যেতে দেখা গেছে। হয়েছে জার্সি বিনিময়ও। ছবিতে দেখা গেছে, ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর পাকিস্তানের সহ-অধিনায়ক নিধা দার একে অপরের সঙ্গে জার্সি-বদল করছেন। দুই দলের মেয়েরা দলবদ্ধ হয়ে যে ছবিটা তুলেছেন, সেটিও ভেসে বেড়াচ্ছে অন্তর্জালে।
ভারত ও পাকিস্তানের মেয়েদের গ্রুপ ছবিটি আইসিসি তাদের টুইটারে পোস্ট করে লিখেছে, ‘মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী, মাঠের বাইরে বন্ধু।’ আইসিসি আসলে ক্রিকেট তথা খেলার মর্মার্থটাই বলে দিয়েছে! খেলা তো এমনই। একটু আগে মাঠে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসা খেলোয়াড়েরা হারজিত ভুলে মেতে ওঠেন খোশগল্পে। ভাবটা এমন যে একটু আগে মাঠে যা হয়েছে, সেটা যেন কিছুই নয়!
ভারত-পাকিস্তানের কথাই ধরুন, খেলার বাইরে গিয়ে যদি রাজনীতির কথা বলেন, দুই দেশের সম্পর্ক যেন দা-কুমড়া! প্রতিবেশী দেশ হলেও ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্কটা অনেক আগে থেকেই শীতল। ভারত ডানে চলে তো পাকিস্তান চলে বাঁয়ে।
দুই দেশের রাজনীতির এই বৈরিতার প্রভাব যে খেলায় পড়েনি তা নয়। এক দশক ধরে ভারত ও পাকিস্তান কোনো দ্বিপক্ষীয় ক্রিকেট সিরিজ খেলে না। কোনো খেলাতেই দুই দেশ প্রীতি ম্যাচেও অংশ নেয় না। রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বা প্রীতি ম্যাচের দরজা বন্ধ করে দিয়েছে মূলত ভারতের সরকার।
একটা সময়ে পুরো ক্রিকেট বিশ্বই বুঁদ হয়ে থাকত ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ে। আর এখন সেটা শুধু আইসিসি বা এসিসির কোনো টুর্নামেন্টেই দেখা যায়। সেটাও আবার নিরপেক্ষ ভেন্যুতে। এ বছরের এশিয়া কাপ ওয়ানডে টুর্নামেন্টের কথাই ধরা যাক। টুর্নামেন্টটি হওয়ার কথা পাকিস্তানে। কিন্তু ভারত সরকার পাকিস্তানে দল পাঠাতে অনুমতি দেবে না বলে আয়োজক পরিবর্তনের কথা ভাবা হচ্ছে।
এরই জেরে পিসিবি হুমকি দিয়ে রেখেছে, ভারত যদি এশিয়া কাপের জন্য পাকিস্তানে দল না পাঠায়, তাহলে তারাও ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে যাবে না। এর মধ্যেই আবার মেয়েদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মুখোমুখি হলো ভারত-পাকিস্তান। কাল দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনের সেই ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে ভারত।
রাজনৈতিক বৈরিতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ম্যাচ শেষে ভারতের ড্রেসিংরুমে গিয়েছিলেন পাকিস্তানের খেলোয়াড়েরা। তাঁরা যেন ভুলেই গিয়েছিলেন এর একটু আগে মাঠে কী হয়েছিল অথবা রাজনীতির দিক থেকে দুই দেশের শীতল সম্পর্কের কথা!
এটাই খেলা, এটাই ক্রিকেট, যেখানে রাজনীতিও হার মানে।