আইপিএলে রাজ্জাক, মাশরাফি, আশরাফুল ও লিটনের গল্প একই
কারণটা ‘পারিবারিক’, সেই সঙ্গে ‘জরুরি’। যে কারণে আইপিএল ছেড়ে শুক্রবার দেশে ফিরে এসেছেন লিটন দাস। এমনিতেও খুব বেশি দিন তাঁর ভারতে থাকার কথা ছিল না। আজকের পর কলকাতা নাইট রাইডার্সের সঙ্গে আর একটি ম্যাচেই থাকতে পারতেন লিটন। আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য ইংল্যান্ডে রওনা দিতে ফিরতে হতো মে মাসের প্রথম দিকে। জরুরি পারিবারিক কারণে সেটা আরেকটু আগেভাগেই হয়ে গেল।
সব মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে, এবার লিটনের আইপিএল–যাত্রা কার্যত শেষ। এবারই প্রথম ভারতের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগটিতে খেলতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশের এই তারকা ব্যাটসম্যান। দেশের মাটিতে আয়ারল্যান্ড সিরিজে ব্যস্ত থাকায় কলকাতায় যোগ দিয়েছিলেন দেরিতে, গত ৯ এপ্রিল। ১৯ দিন পর দেশে ফিরলেন আইপিএলে ১ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে।
লিটন থাকতে ৫ ম্যাচ খেলেছে কলকাতা। টিম কম্বিনেশন আর ফর্ম মিলিয়ে লিটন সুযোগ পাননি প্রথম ও শেষ দুই ম্যাচে। এর মধ্যে খেলেছেন ২০ এপ্রিল দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে। সে ম্যাচে ওপেনিংয়ে নেমে প্রথম বলেই চার মেরেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৪ বল খেলে আউট হয়েছেন ওই ৪ রানেই। পরে উইকেটকিপিংয়ে নষ্ট করেন স্টাম্পিংয়ের সহজ সুযোগ। দিল্লির কাছে কলকাতার ৪ উইকেটে হারের ম্যাচটিই লিটনের একমাত্র আইপিএল–অভিজ্ঞতা।
লিটনের জন্য এবারের আইপিএল যেমন, অনেকটা তেমন অভিজ্ঞতা নিয়েই আইপিএল থেকে দেশে ফিরেছিলেন বাংলাদেশের আরও তিন ক্রিকেটার—মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ আশরাফুল আর আবদুর রাজ্জাক। লিটনের আইপিএল–ক্যারিয়ার শেষ পর্যন্ত কেমন দাঁড়াবে, তা আপাতত ভবিষ্যতের প্রশ্ন।
তবে বিপুল প্রত্যাশা নিয়ে আইপিএলে যাওয়া, ম্যাচের পর ম্যাচ বসে থাকা, মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে কিছু করতে না পারা এবং মাত্র ১ ম্যাচ খেলার আক্ষেপ নিয়ে ফিরে আসা—রাজ্জাক, আশরাফুল, মাশরাফি থেকে শুরু করে লিটন পর্যন্ত সবার গল্প একই।
আবদুর রাজ্জাক
আইপিএলে ডাক পাওয়া প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার আবদুর রাজ্জাক। ২০০৮ সালে প্রথম আসরেই সাবেক এ বাঁহাতি স্পিনারকে নিয়েছিল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। দাম ছিল ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। শুরু থেকে বেঞ্চে বসে থাকা রাজ্জাক প্রথম মাঠে নামেন বেঙ্গালুরুর ১০তম ম্যাচে, রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে। বল হাতে রাজ্জাকের শুরুটা ছিল ভীতিজাগানিয়া।
প্রথম ডেলিভারিই ছিল নো বল, যেটিতে চার মারেন গ্রায়েম স্মিথ। পরে ফ্রি হিটের বলে ৬। সব মিলিয়ে এক বলেই ১১ রান। পরের দিকে অবশ্য লাগাম টেনেছিলেন। সব মিলিয়ে ২ ওভারে দিয়েছিলেন ২৯ রান, উইকেট নেই।
ওই ম্যাচের পর বেঙ্গালুরুর একাদশে আর সুযোগ মেলেনি রাজ্জাকের। বেঙ্গালুরু–রাজস্থান ম্যাচই একমাত্র স্মৃতি হয়ে আছে বর্তমান বাংলাদেশ নির্বাচকের।
মাশরাফি বিন মুর্তজা
২০০৯ আইপিএলে বেশ আলোড়ন তুলেই মাশরাফিকে দলে নেয় কলকাতা নাইট রাইডার্স। নিলামে দাম ওঠে ৬ লাখ মার্কিন ডলার, যা এখন পর্যন্ত আইপিএলে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ।
তবে শুরুতে ‘যতটা গর্জেছে’ পরে ‘ততটা বর্ষেনি’। মাঠে নামতে দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে হয়েছিল মাশরাফিকে। একের পর এক ম্যাচে উপেক্ষিত হওয়ার পর প্রথমবার যে ম্যাচে সুযোগ পান, মৌসুমে কলকাতার সেটি ১৩তম ম্যাচ। মাঠেও জেরবার ছিল ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বাধীন দলটি।
ডেকান চার্জার্সের বিপক্ষে মাশরাফির অভিষেকের ম্যাচটির আগে টানা সাত ম্যাচে হেরে বসে কলকাতা। প্রথমে ব্যাট করা কলকাতার হয়ে মাশরাফিকে নামানো হয় ৬ নম্বরে, ২ বল খেলে নেন ২ রান। তবে বল হাতেই বেশি আক্ষেপে পুড়িয়েছেন মাশরাফি।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে ২১ রান দরকার ছিল ডেকানের। মাশরাফির করা ওভারটি থেকে ২টি ছয় ও ২টি চার মেরে ২৬ রান তুলে ডেকানকে জিতিয়ে দেন রোহিত শর্মা। মাশরাফি ম্যাচ শেষ করেন ৪ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে। অমন পারফরম্যান্সের পর শেষ ম্যাচে আর সুযোগ মেলেনি মাশরাফির।
মোহাম্মদ আশরাফুল
আশরাফুলের আইপিএল ক্যারিয়ারও এক ম্যাচের। ২০০৯ সালে ডাক পেয়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকারের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ানসে। দাম উঠেছিল ৭৫ হাজার মার্কিন ডলার। ওই আসরে কলকাতায় মাশরাফি সুযোগ পেয়েছিলেন দলের ১৩তম ম্যাচে।
মুম্বাই আশরাফুলকে খেলায় ১৪তম ম্যাচে, দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে। তত দিনে প্লে–অফের দৌঁড় থেকে ছিটকে যাওয়ায় ম্যাচটা ছিল মুম্বাইয়ের জন্য আনুষ্ঠানিকতার। ব্যাটিংয়ে আশরাফুলকে নামানো হয় ৪ নম্বরে। কিন্তু ডার্ক ন্যানেস, আভিস্কার সালভিদের বলে হিমশিম খেয়ে তিনি একের পর এক বল নষ্ট করেন। শেষ পর্যন্ত প্রদীপ সানওয়ানের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় অস্বস্তির ইনিংসটি। ফেরেন ১০ বলে দুই রান করে।
আশরাফুল, মাশরাফি, রাজ্জাকদের তুলনায় তামিম ইকবালের অভিজ্ঞতা অবশ্য আরও খারাপ। ২০১২ সালে পুনে ওয়ারিয়র্স তাঁকে ৫০ হাজার ডলারে দলে ভিড়িয়েছিল। কিন্তু একটি ম্যাচেও মাঠে নামার সুযোগ পাননি।