ভালো শুরুর পরও বাংলাদেশ ২৫৬
ঊরুর চোটের কারণে ম্যাচটা খেলছেন না সাকিব আল হাসান। তাতে বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার সুযোগ আসে নাজমুল হোসেনের। পুনের ব্যাটিং স্বর্গে টস ভাগ্য গেছে তাঁর পক্ষেই। কিন্তু আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া বাংলাদেশ মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামের ব্যাটিং কন্ডিশনের সুবিধা কতটা কাজে লাগাতে পারল, সে প্রশ্ন থেকেই যায়। উদ্বোধনী জুটিতে ১৪.৪ ওভারে ৯৩ রান পাওয়ার পরও বাংলাদেশ দলের ইনিংস যে যেতে পেরেছে ৮ উইকেটে ২৫৬ রান পর্যন্তই।
তানজিদ হাসান ও লিটন দাসে আজ ওপেনিংয়ে রান খরা কাটিয়েছে বাংলাদেশ। দুজনই ফিফটি করেছেন। তানজিদের ব্যাট থেকে আসে ৪৩ বলে ৫১ রানের ইনিংস। লিটন করেছেন ৮২ বলে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৬ রান। শেষের দিকে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ৩৬ বলে ৪৬ রান।
পাওয়ার প্লের প্রথম ৫ ওভারে মাত্র ১০ রান, বাউন্ডারি মাত্র একটি। বাংলাদেশ দল ইনিংসের শুরুতে এতটাই সতর্ক ছিল। কিন্তু পাওয়ার প্লের পরের ৫ ওভারে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য দ্রুততায় যোগ করে ৫৩ রান। তানজিদ ও লিটনের প্রতি আক্রমণে বাংলাদেশ পেয়ে যায় এবারের বিশ্বকাপে নিজেদের সেরা পাওয়ার প্লে স্কোর। শুধু তাই নয়, ছয় ইনিংস পর আজ উদ্বোধনী জুটির রানও ৫০ ছাড়াল।
পাওয়ার প্লেতে যশপ্রীত বুমরা ও মোহাম্মদ সিরাজরা যখন পথ হারাচ্ছিলেন, তখনই ভারতীয় অধিনায়ক বল তুলে দেন হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে। কিন্তু নিজের প্রথম ওভারে ৩ বল করেই লিটনের স্ট্রেট ড্রাইভ থামাতে গিয়ে অ্যাংকেলের চোটে পড়েন এই অলরাউন্ডার। চোট এতটাই গুরুতর ছিল যে পান্ডিয়াকে মাঠই ছেড়ে যেতে হয়।
একদিকে বাংলাদেশের রান বাড়ছে তরতরিয়ে (রান রেট ওভার প্রতি ছয়ের বেশি), আরেক দিকে পান্ডিয়ার মতো একজন বোলারের অনুপস্থিতি- সব মিলিয়ে রোহিতের কপালে তখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ। তৃতীয় পেসার শার্দুল ঠাকুরের হাতে বল তুলে দেন ভারতীয় অধিনায়ক। তানজিদ হয়তো এই অপেক্ষাতেই ছিলেন। শার্দুলের ২০টি বল খেলেছেন তিনি, করেছেন ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩১ রান। ৪১ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিও তুলে নেন এই বাঁহাতি।
দ্রুত রানের পেছনে ছুটতে থাকা তানজিদকে থামাতে দুই প্রান্ত থেকে স্পিনার আনেন রোহিত। সেটি কাজেও দেয়। ১৫তম ওভারে কুলদীপ যাদবের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান তানজিদ। আউট হওয়ার আগে তাঁর ব্যাট থেকে আসে ৪৩ বলে ৫১ রান। ৫টি চার ও ৩টি ছক্কা ছিল তাঁর ইনিংসে।
ভারত যেন এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল। তানজিদের বিদায়ের পর দুই প্রান্ত থেকেই রানের গতি কমে আসে। ৬২ বলে ফিফটি করে এগোতে থাকা লিটন টিকে থাকার চেষ্টা করছিলেন। তিনে নামা নাজমুল ক্রিজে এসে ১৭ বল খেলে ফেলেন, কিন্তু বাউন্ডারি পাচ্ছিলেন না। শেষ পর্যন্ত ২০তম ওভারে রবীন্দ্র জাদেজার বলে ৮ রান করে এলবিডব্লিউ হন এই বাঁহাতি।
চারে নেমে মিরাজও সুবিধা করতে পারেননি। স্পিন সামলানোর জন্য মিরাজকে চারে পাঠালেও তিনি ক্রিজে আসতেই দুই প্রান্ত থেকে বুমরা ও সিরাজকে ফিরিয়ে আনেন রোহিত। ২৫তম ওভারে সিরাজের শরীর তাক করা বলে ব্যাট ছুঁইয়ে কট বিহাইন্ড মিরাজ। ১৩ বল খেলে মাত্র ৩ রান করেন তিনি।
উইকেট পতন আর রানের গতি কমে আসার চাপ সামালতে পারেননি লিটন। জাদেজাকে ক্রিজ ছেড়ে এক্সট্রা কাভারে মারার চেষ্টা করেন। কিন্তু বল যায় লং অফে। সেখানে শুবমান গিল সহজ ক্যাচ লুফে নেন। লিটনের ব্যাট থেকে আসে ৬৬ রান। কিন্তু বল খেলেছেন ৮২টি। ৭টি বাউন্ডারি ছিল তাঁর ৮০ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে।
রানের চেয়ে বেশি বল খেলে ইনিংস লম্বা করতে পারেননি তাওহিদ হৃদয়ও। ৩৫ বল খেলে কোনো বাউন্ডারিই মারতে পারেননি তিনি। মাত্র ১৬ রান করে শার্দূলকে মারতে গিয়ে আউট হয়ে যান। ব্যাটসম্যানদের একের পর এক ব্যর্থতার মাঝেও ভালো খেলছিলেন মুশফিকুর রহিম। মাঝের ওভারে দেখেশুনে খেলে ইনিংসের শেষ দিকে দ্রুত কিছু রান যোগ করবেন তিনি, এমনই ছিল আশা। কিন্তু ৪৩তম ওভারে বুমরা ও জাদেজা সেটি হতে দেননি। বুমরার অফ কাটারে স্কয়ার কাট করতে গিয়ে জাদেজার দুর্দান্ত ক্যাচে থামে ৪৬ বলে ৩৮ রান করা মুশফিকের ইনিংস।
স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের রান তখন ৬ উইকেটে ২০১। সেখান থেকে মাহমুদউল্লাহ ৩৬ বল খেলে ৪৬ রান যোগ করেন। ৩টি চার ও ৩টি ছক্কা তাঁর ইনিংসে। অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহর সৌজন্যেই বাংলাদেশ শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৫৬ রান করেছে।
পুনের ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে এটা যথেষ্ট হলো কিনা, বিশেষ করে ভারতের মতো ব্যাটিং লাইনআপের বিপক্ষে, তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।