রাজকোট টেস্ট: রোহিত-জাদেজার শতক, আক্ষেপের আগে সরফরাজের ঝলক
রোহিত শর্মা হেলমেটটাও খুললেন না, শুধু ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরলেন। এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে ভারত অধিনায়ক দেখেছিলেন, দলের ৩৩ রানে নেই ৩ উইকেট। সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেছেন, তবে শতকের পর তাঁর উদ্যাপন বলছিল—কাজটা যে বাকি তা তিনি জানেন। রবীন্দ্র জাদেজাও হেলমেটটা খুললেন না, তাঁর পরিচিত তলোয়ার ঘুরিয়ে আনার উদ্যাপনটাও হয়ে থাকল ‘করার জন্যই করা’ হয়েই। তাঁর কারণটি অবশ্য ভিন্ন, ঠিক আগের বলেই তাঁর সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে ফিরেছেন আবেগপ্রবণ অভিষেকে ৬৬ বলে ৬২ রানের দারুণ ইনিংস খেলা সরফরাজ খান। জাদেজার উদ্যাপনে ছাপ থাকল সেটিরই। এ দুজনের মাঝে রোদেলা দিনের মতোই উজ্জ্বল এক হাসি এনে ব্যাটটা তুলে ধরেছিলেন অভিষেকের ‘দীর্ঘ’ অপেক্ষায় থাকা সরফরাজ, অর্ধশতকের পর। যদিও তিন অঙ্কে যাওয়ার সুযোগটা পাননি তিনি।
রাজকোটে ভারতীয়দের মাইলফলকের উদ্যাপন যতই ‘সাদামাটা’ হোক না কেন, প্রথম দিনটা তাঁদেরই। রোহিত ও জাদেজার শতকের সঙ্গে সরফরাজের দ্রুতগতির অর্ধশতকে প্রথম দিন ৫ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকেরা তুলেছে ৩২৬ রান। ১৩১ রান করে ফিরে গেছেন রোহিত, জাদেজা অপরাজিত ১১০ রানে। তাঁর সঙ্গী নাইটওয়াচম্যান কুলদীপ যাদব।
যে উইকেট ব্যাটিং সহায়ক হওয়ার কথা, সেখানেই মার্ক উডের তোপের পর টম হার্টলির প্রথম ওভারেই সাফল্যে টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া ভারত ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দ্রুতই। তবে এরপর নিজেদের উইকেটের মূল্যটা ইংল্যান্ডকে বুঝিয়েছেন রোহিত ও জাদেজা। সদা-তৎপর বেন স্টোকস বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে অনেক পরিবর্তন এনেও দ্রুতই ভাঙতে পারেননি সে জুটি। ডানহাতি-বাঁহাতি কম্বিনেশন ধরে রাখতে প্রমোশন দিয়ে পাঁচে পাঠানো হয় জাদেজাকে, সে আস্থার প্রতিদান তিনি দিয়েছেন দারুণভাবেই।
উইকেট বেশ ব্যাটিং সহায়ক হলেও শুরুতে ছিল অসম বাউন্স। উডের বাড়তি বাউন্সের বলে স্লিপে ক্যাচ দেন আগের টেস্টে দ্বিশতক করা যশস্বী জয়সোয়াল, শুবমান গিল বেন ফোকসের হাতে ধরা পড়েন লাইন ধরে রাখা বলে। অফ স্টাম্পের বাইরে থেকে একটু লাফ দেওয়া বলে খেলতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দেন রজত পাতিদারও। প্রথম ঘণ্টাতেই ইংল্যান্ড পেয়ে যায় ৩ উইকেট। রোহিতের উইকেটও পেতে পারত তারা, তবে স্লিপে সুযোগ হারান জো রুট।
তবে পরের প্রায় দুই সেশনে আর কোনো উইকেটের দেখা পায়নি তারা। রোহিত ও জাদেজা দুজনই সময় নিয়েছেন, তবে স্ট্রাইক বদল করে গেছেন নিয়মিত। সিরিজের ভারতের প্রথম ১০০ রানের জুটি গড়েন তাঁরা, দ্বিতীয় সেশনে থাকেন অবিচ্ছিন্ন। এ সিরিজে প্রথম উইকেটশূন্য সেশন সেটিই। ৩ উইকেটে ১৮৫ রান নিয়ে চা-বিরতিতে যায় ভারত। শতক থেকে ৩ রান দূরে ছিলেন রোহিত।
বিরতির পর রোহিত শতক পান ১৫৭ বলে, রেহান আহমেদের বলে ডাবলস নিয়ে। বেশ কিছুক্ষণ ধরেই শর্ট বল করে রোহিতকে নড়বড়ে করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন মার্ক উড, অবশেষে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিডউইকেটে থাকা স্টোকসের হাতে ধরা পড়েন তিনি। তাতে ভাঙে ২০৪ রানের জুটি। অভিষিক্ত সরফরাজকেও প্রথম বলেই বাউন্সারে স্বাগত জানান উড।
তবে স্পিন পেয়ে নিজেকে মেলে ধরেন সরফরাজ। কেন তাঁকে নিয়ে অভিষেকের আগেই আলোচনা এত, সেটি বুঝিয়ে দেন দ্রুতই। ৪৮ বলেই পেয়ে যান অর্ধশতক, অভিষেকে ভারত ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা দ্বিতীয় দ্রুততম। শতক পেয়ে যাবেন এবং সেটি পেতে পারেন আজই—মনে হচ্ছিল এমনও। তবে মাইলফলকের সামনে গিয়ে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থাকা জাদেজার ডাকে সাড়া দিয়ে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে ভুলটা করেন। জাদেজা ফিরিয়ে দেন তাঁকে, তবে ক্রিজে পৌঁছানোর আগেই মিড অন থেকে উডের সরাসরি থ্রো ভাঙে স্টাম্প। সরফরাজের রানআউটের পর ড্রেসিংরুমে রোহিতের হতাশা ছিল স্পষ্ট, মাথার ক্যাপটা খুলেই ছুড়ে মারেন তিনি। সরফরাজের ইনিংসে ছিল ৯টি চারের সঙ্গে ১টি ছক্কা।
কুলদীপকে নিয়ে দিনের বাকিটা সময় নিরাপদে পার করে অধিনায়ককে স্বস্তিই দেন জাদেজা। ৩ ওভার পর দ্বিতীয় নতুন বল নেয় ইংল্যান্ড, তবে তাতেও সাফল্য পায়নি তারা। সিরিজে প্রথমবার দুই পেসার নিয়ে নামা ইংল্যান্ড দিনে ৮৬ ওভারের বেশি করতে পারেনি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (১ম দিনশেষে)
ভারত ১ম ইনিংস: ৮৬ ওভারে ৩২৬/৫ (রোহিত ১৩১, জাদেজা ১১০*, সরফরাজ ৬২; উড ৩/৬৯, হার্টলি ১/৮১)