দলের প্রয়োজনেই ‘যাযাবর’ মিরাজ
কয়েক মাস ধরেই বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে মেহেদী হাসান মিরাজ একটা রহস্য। তিনি কখন, কোন ম্যাচে কোন পজিশনে ব্যাটিংয়ে নামবেন—এটা অনুমান করা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন কাজ। ৩ থেকে শুরু করে ৮, মাঝে শুধু ৬ নম্বরেই ব্যাটিং করেননি তিনি। এই পরীক্ষা–নিরীক্ষা যে খুব কাজে এসেছে, এটা কেউ বলবে না। ব্যাপারটা নিয়ে সমালোচনা হয়েছে প্রচুর। আজ মিরাজ আবার ফিরে গেলেন নিজের পুরোনো জায়গায় ৮ নম্বরে। এ ব্যাপারটি নিয়ে মিরাজ নিজে কী ভাবছেন? কলকাতায় পাকিস্তানের বিপক্ষে হারের পর সংবাদ সম্মেলনেও এ নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে হলো বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডারকে। মিরাজ সোজাসাপটাই বললেন, দলের প্রয়োজনে, টিম কম্বিনেশনের কারণেই তাঁর এই ‘যাযাবর’ অবস্থা।
তাই বলে নিজের কোনো পছন্দের জায়গা নেই মিরাজের। মিরাজের কথা শুনলে তেমনটিই মনে হতে পারে, ‘এই যে পজিশন বদল, সেটি দলের সমন্বয় তৈরি করতেই হচ্ছে। প্রতি ম্যাচেই ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেয়, কে কোথায় ব্যাটিং করবে। এটা দলের জন্যই। যে ভালো খেলতে পারে, তাকেই সুযোগ দেওয়া হয়।’
কিন্তু এই পরীক্ষা–নিরীক্ষাতেও তো কাজ হয়নি। কারও পারফরম্যান্সই ভালো নয়। মিরাজ সেটা স্বীকারও করলেন, ‘আমরা কেউই ক্লিক করছি না। কাউকে দোষ দিতে চাই না। আমরা সবাই খারাপ করেছি। আলাদা করে বলতে চাই না যে দু–একজন খারাপ খেলেছি। আমরা সবাই খারাপ খেলেছি, মেনে নিচ্ছি।’
আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে ৮ নম্বরে ব্যাটিং করে করেছেন ২৫। আগের ম্যাচগুলোতে নিচের দিকে (৭/৮ নম্বর পজিশন) ব্যাটিং করে মাহমুদউল্লাহই একমাত্র ছিলেন মোটামুটি ধারাবাহিক। আজ তাঁকে ওপরে ওঠানোর কারণ সেটিই, জানিয়েছেন মিরাজ, ‘রিয়াদ ভাইকে (মাহমুদউল্লাহ) ওপরে ব্যাটিং করানো হয়েছে। কারণ, তিনি খুব ভালো খেলছেন, ভালো শেপে আছেন। আর তিনি আত্মবিশ্বাসীও এই মুহূর্তে। এটি বিবেচনা করেই তাঁকে ওপরে পাঠানো হয়েছে। মুশফিক ভাইকেও (মুশফিকুর রহিম।’
একটা বাজে বিশ্বকাপই কাটাচ্ছে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচেই হেরেছে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে। এমন একটা সময়ে ড্রেসিং রুমের আবহ সহজেই অনুমেয়। মিরাজও জানালেন ক্রিকেটপ্রেমীরা যেমন হতাশ, ক্রিকেটাররাও সেই হতাশার বাইরে নন, ‘হারলে তো স্বাভাবিকভাবেই সবার খারাপ লাগে। দিন শেষে ক্রিকেটে এসব মেনেই নিতে হবে। হারজিত তো থাকবেই।’
খারাপ সময় শেষেই ভালো সময় আসে, এটা বিশ্বাস করেন মিরাজ। তিনি আশাবাদী শিগগির ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ, ‘আমরা সবাই হতাশ। খুব চেষ্টা করে যাচ্ছি ভালো করার। বাংলাদেশের দর্শকেরা সব সময় আমাদের সমর্থন দিয়ে যান। নেদারল্যান্ডসের কাছে হারের পরও এই ম্যাচে অনেক দর্শক হয়েছে। তাঁরা কখনো আশা ছেড়ে দেন না। বিশ্বাস করেন, বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াবে। আমাদের বিশ্বাসও তা–ই।’
২০২৫ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলা হচ্ছে না বাংলাদেশের। বিশ্বকাপে অন্তত ৮ নম্বরে থাকলেও সেটি খেলা যেত। তাই ২০১৩ সালের পর এই প্রথম চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দর্শক হয়েই থাকতে হবে সাকিব–মিরাজ–লিটনদের। মিরাজের কাছে ব্যাপারটি দুর্ভাগ্যই, ‘চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলব না, খারাপ লাগবে। আমরা কেউই খারাপ খেলতে চাই না। সবাই চেষ্টা করছি। কিন্তু এবার কোনো কিছুই পক্ষে থাকছে না। ভাগ্য সহায় হচ্ছে না। ব্যাটসম্যানরা যেখানেই শট খেলছে, ফিল্ডারের হাতে চলে যাচ্ছে। বোলিংয়ে কিছু না কিছু হচ্ছে। এ রকম কখনো হয়নি। গত তিন বছরে তো ওয়ানডে খেলেছি। ভাগ্য কম কাজ করছে।’