‘মিস্টার বিন’ নিয়ে কী ঝামেলা পাকিস্তান–জিম্বাবুয়ের
সবার আগে দুটো টুইট দিয়ে শুরু করা যাক।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কাল পাকিস্তানকে শেষ বলে ১ রানে হারায় জিম্বাবুয়ে। এরপরই টুইটটি করেন জিম্বাবুয়ে প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাগওয়া, ‘জিম্বাবুয়ের কী দুর্দান্ত জয়! শেভরনসরা (জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট দলের তকমা), তোমাদের অভিনন্দন। পরেরবার আসল মিস্টার বিনকে পাঠিয়ো...।’
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফও চুপ থাকেননি। জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট মুখ খোলার পর তিনিও টুইট করেন, ‘আমাদের আসল মিস্টার বিন না থাকতে পারে, কিন্তু সত্যিকারের ক্রিকেটীয় চেতনা আছে...এবং আমরা পাকিস্তানিরা ঘুরে দাঁড়াতে অভ্যস্ত। জনাব প্রেসিডেন্ট, অভিনন্দন, আপনার দল আজ সত্যিই ভালো খেলেছে।’
দুই দেশের দল খেলল মাঠে আর ওদিকে দুটি দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে কথার লড়াই! সেটিও অক্রিকেটীয়—মিস্টার বিনকে নিয়ে। ঘটনা কী? কাল পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ে যখন মাঠের লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই এমন পোস্ট দেখেছেন। পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ভক্তরা ‘মিস্টার বিন’ নিয়ে পাল্টাপাল্টি ট্রল এবং কথার লড়াইয়ে ব্যস্ত। অথচ টিভি কমেডি সিরিয়াল ‘মিস্টার বিন’ ইংল্যান্ডের অনুষ্ঠান আর এই চরিত্রের অভিনেতাও একজন ব্রিটিশ—রোয়ান অ্যাটকিনসন। অন্য দেশের একটি টিভি সিরিয়ালের চরিত্র নিয়ে এই দুই দেশের ক্রিকেট–ভক্তদের কথার লড়াইয়ের কী কারণ থাকতে পারে?
ঘটনার শুরু কিছুদিন আগে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ সামনে রেখে ২৫ অক্টোবর পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) টুইটার হ্যান্ডল থেকে পাকিস্তান খেলোয়াড়দের অনুশীলনের ছবি টুইট করা হয়। সেখানে জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের এক ভক্ত মন্তব্য করেন, ‘আমরা জিম্বাবুইয়ানরা তোমাদের কখনো ক্ষমা করব না...তোমরা একবার আসল মিস্টার বিন রোয়ানকে হাজির না করে ভুয়া পাকিস্তানি বিনকে নিয়ে এসেছিলে। কাল এটার সুরাহা হবে, প্রার্থনা করো যেন বৃষ্টি নামে।’
সুরাহা ও বৃষ্টি—এ দুটি শব্দ থেকেই বোঝা যায়, জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের সেই ভক্ত কালকের ম্যাচে প্রতিশোধ নেওয়ার কথা বলেছিলেন। সিকান্দার রাজা-ক্রেগ আরভিনরা সেই ভক্তের আশা পূরণ করলেন কী দুর্দান্তভাবে! মাত্র ১৩০ রানের পুঁজি নিয়ে শেষ বলে জয় তুলে নেয় জিম্বাবুয়ে। এই হারে এখন তো পাকিস্তানের সেমিফাইনালে ওঠার স্বপ্নও ধূলিসাৎ হওয়ার দশা!
জিম্বাবুয়ের সেই ভক্তের টুইটেও অবশ্য ঘটনাটা পরিষ্কার নয়। আসল মিস্টার বিন ও পাকিস্তানি ভুয়া মিস্টার বিন নিয়ে ঝামেলাটা সেই ২০১৬ সালের। অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ফক্স স্পোর্টস ও পাকিস্তানের ‘ডন’ জানিয়েছে, ২০১৬ সালে পাকিস্তানের কমেডিয়ান আসিফ মোহাম্মদ হারারে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে একটি শো করেছিলেন। আসিফ মোহাম্মদ দেখতে মিস্টার বিন চরিত্রের অভিনেতা রোয়ান অ্যাটকিনসনের মতো। চেহারায় বেশ মিল দুজনের।
সেই অনুষ্ঠানে টিকিটের দাম ছিল ১০ ডলার করে, জিম্বাবুইয়ানরা এই টাকায় টিকিট কিনলেও অনুষ্ঠান জমেনি। ‘ফ্লপ শো’ বলতে যা বোঝায়, ঠিক তা–ই। মঞ্চে আসিফ মোহাম্মদের কোনো একক পরিবেশনা ছিল না। তিনি স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে পারফরম্যান্স করেন; সংবাদমাধ্যমের মতে, তাতে হাসির উপকরণ ছিল সামান্যই।
‘ডন’-এর প্রতিবেদনে এই ম্যাচের আগে লেখা হয়, ‘সেই ঘটনার পর আমরা অজান্তেই একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জড়িয়ে পড়ি। আসল (মিস্টার বিন) না পাঠিয়ে তার নকল কপি পাঠানোয় জিম্বাবুইয়ানরা আমাদের ওপর রাগ পুষে রেখেছিল। তবে তাদের ধন্যবাদ যে মামলা না করে তারা শুধু টুইটে আমাদের জালিয়াত বলেছে। এখন তারা মাঠে আমাদের সতর্কবার্তা দিয়েছে। কারণ, এটা কোনো সাধারণ ম্যাচ হতে যাচ্ছে না—জিম্বাবুয়ের খেলোয়াড়েরা প্রতিশোধ নেবে।’
সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনের শেষ দিকে মজা করে জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের জানিয়েও দেওয়া হয়, ‘জিম্বাবুয়ে—এটা মোটেও তোমাদের ভুল নয়। সে (আসিফ মোহাম্মদ) নিজেকে মিস্টার বিন দাবি করলেও কেউ তা বিশ্বাস করে না।’
তবে ম্যাচ শুরুর পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে। এ ঘটনা নিয়ে প্রচুর টুইট হয় এবং পাকিস্তান-জিম্বাবুয়ে ম্যাচকে ‘মিস্টার বিন ডার্বি’ও নাম দেওয়া হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ম্যাচ শেষে এক ক্রিকেটপ্রেমীর মজার টুইট, ‘জিম্বাবুয়ে যখন মিস্টার বিনকে চাইবে, তখন তাদের মিস্টার বিনকেই দিতে হবে। পাকিস্তানি বিনের ওপর প্রতিশোধ নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। অভিনন্দন।’
ভারতের সাবেক ওপেনার বীরেন্দর শেবাগও এ নিয়ে টুইট করেন। জিম্বাবুয়ে প্রেসিডেন্টের টুইটকে রিটুইট করে শেবাগ লিখেছেন, ‘হা হা হা...প্রেসিডেন্টও মজা করছেন। প্রতিবেশীদের দুর্বল জায়গায় আঘাত।’