নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে থাকছে হোবার্টের বাতাসও

হোবার্টে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে আজ প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছে বাংলাদেশছবি: শামসুল হক

বেলেরিভ ওভালে আজ বাংলাদেশ দলের বড় প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে কোনটি? নেদারল্যান্ডস দল নাকি হোবার্টের হাড়কাঁপানো কনকনে ঠান্ডা বাতাস?

প্রথমটি, অর্থাৎ খেলার প্রতিপক্ষকে খাটো করে দেখার নিয়ম নেই। সামনে যে দলই আসুক, অভিনয় করে হলেও বলতে হয় তারা ভালো দল। নিজেদের দিনে পারে যে কাউকে হারিয়ে দিতে।

বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান যেমন গতকাল বললেন, নেদারল্যান্ডস যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই সুপার টুয়েলভে এসেছে। ভারত, পাকিস্তান বা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের যে রকম পরিকল্পনা, ডাচদের বিপক্ষেও তার চেয়ে কম কিছু নয়। তবে তাঁর এই বলাটা অভিনয় করে কি না, তা অবশ্য বোঝা যায়নি।

আরও পড়ুন

আর হোবার্টের আবহাওয়া? পরপর দুই দিন বৃষ্টির পর গতকাল মোটামুটি শুষ্ক দিনই পার করেছে তাসমানিয়ার রাজধানী। কিন্তু বুকে কাঁপন ধরানো কনকনে ঠান্ডার হাত থেকে বাঁচার উপায় কী!

গায়ে সাধারণ জ্যাকেট চাপিয়ে নিচে শর্টস পরা স্থানীয়রা যদিও বলেন, গ্রীষ্মের শুরু বলে এখন ঠান্ডাটা কম, বাংলাদেশ থেকে আসাদের জন্য নাক-কান বরফ করে দেওয়া এই ১১-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও রুম হিটার চালিয়ে ঘরে বসে থাকার মতো।

হোবার্টের ঠাণ্ডায় জ্যাকেট আর হাত মোজা পরে লিটন–আফিফদের অনুশীলন
ছবি: শামসুল হক

বলতে পারেন ক্রাইস্টচার্চ থেকে এসেছেন বলে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের জন্য এই ঠান্ডাতে কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। মাইনাস ১ ডিগ্রি ঠান্ডাও সহ্য করে আসতে হয়েছে সেখান থেকে। কিন্তু হোবার্টের সমস্যা হলো কনকনে বাতাস, ক্রাইস্টচার্চের বাতাসের চেয়েও যেটাকে ‘প্রচণ্ড’ মনে হচ্ছে দলের অনেকের কাছেই। আবার কিংস্টন টুইন ওভালের অনুশীলনে গতকাল ক্রিকেটারদের কাউকে কাউকে এ রকমও বলতে শোনা গেছে, হোবার্টের আবহাওয়া নাকি ক্রাইস্টচার্চের চেয়ে ‘গরম’!

আরও পড়ুন

আবহাওয়ার ওপর যেহেতু কারও হাত নেই আর এটা মেনে নিয়েই সব দলকে খেলতে হয়, তার চেয়ে বরং নেদারল্যান্ডসের প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। সাকিব আল হাসান এই দলটাকে যথেষ্ট সমীহ দেখালেও নেদারল্যান্ডসের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান টম কুপার কাল ম্যাচ–পূর্ব অনলাইন সংবাদ সম্মেলনেই বাংলাদেশকে প্রায় হারিয়ে দিলেন! কুপার সরাসরিই বলেছেন, ম্যাচে বাংলাদেশকে হারাতে না পারার কোনো কারণই নাকি খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি এবং এটা খুবই সম্ভব নেদারল্যান্ডসের পক্ষে।

আরও পড়ুন

কুপারের আত্মবিশ্বাসের বড় কারণ হতে পারে দুই দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের পার্থক্য। প্রথম পর্বে দুই ম্যাচ জিতে সুপার টুয়েলভে এসেছে ডাচরা। অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে জয়ের দেখা না পাওয়া বাংলাদেশ হেরেছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচেও।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অন্য প্রস্তুতি ম্যাচটি হতে পারেনি বৃষ্টির কারণে, একই কারণে গত কয়েক দিনের অনুশীলনও হয়েছে বিঘ্নিত। সব মিলিয়ে বেলেরিভ ওভালে আজ বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টায় নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামার আগে সাকিবের দল যে অবস্থায়, তাতে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির আগের তিন সাক্ষাতে দুবার হারানো নেদারল্যান্ডসকে আরেকবার বলেকয়ে হারানোর জো নেই।

নেদারল্যান্ডস ম্যাচের আগে অনুশীলনে আফিফ
ছবি: শামসুল হক

সুপার টুয়েলভে নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ে দল বাংলাদেশের গ্রুপে পড়ায় যাঁরা দলের মধ্যে স্বস্তির হাওয়া বইতে দেখছেন, তাঁদের জন্য তাই একটা সতর্কবার্তাই দিয়ে রেখেছেন অধিনায়ক সাকিব। সংক্ষেপে সেটা হলো, কথিত এই স্বস্তির আলোচনা আসলে মিডিয়ার সৃষ্টি। তাঁরা মোটেও দল বিশেষকে নিয়ে আলাদা করে স্বস্তিতে নেই। বাংলাদেশের কাছে সব প্রতিপক্ষই সমান।

অবশ্য সাকিবের বলা আরেকটা কথা আশাবাদী হতেও অনুপ্রাণিত করে। ইংল্যান্ডে ২০১৯ সালের মূল বিশ্বকাপে অধিনায়ক না হয়েও বাংলাদেশ দলকে এক হাতে টেনে নিয়ে যাওয়ার নায়ক এবার অধিনায়ক হয়েই দলের সঙ্গে। সেই তিনিই যখন বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এই বিশ্বকাপে আমাদের এমন কিছু করার সামর্থ্য আছে, যেটা আমরা এর আগে কোনো বিশ্বকাপে করিনি’, তখন টি-টোয়েন্টির অন্ধকার গলিতেও আলোর দিশা খুঁজতে মন চায়।

আরও পড়ুন

এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়ে গত এশিয়া কাপ থেকেই নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশ দল, টি-টোয়েন্টির কোচ বদলের পর যে পরীক্ষার অন্যতম অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওপেনিং জুটি। এ নিয়ে সব গবেষণার ফলই ব্যর্থ হওয়ায় লিটন দাসকে ওপেনিংয়ে ফেরানোটা এখন গণদাবির মতো।

যদিও গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে সাকিবের ‘লিটন ওপেন করলেই কি আমরা জিতব’ পাল্টা প্রশ্নে সে দাবি পূরণের সম্ভাবনা অনেকটাই বিলীন মনে হচ্ছে। ইনিংসের শুরুতে আজ তাই সৌম্য সরকারের সঙ্গে নাজমুল হোসেনকেই দেখা যেতে পারে ব্যাট হাতে। পরের ক্রমটা হতে পারে লিটন, সাকিব, আফিফ...।

আরও পড়ুন

বোলিংয়ে মূল প্রশ্ন, আক্রমণ তিন পেসার নিয়েই হবে কি না। প্রতিপক্ষ এবং মাঠ বিবেচনা করলে বাংলাদেশের তিন পেসারের বেশি খেলানোর কথা নয়। একটু ঝুঁকি নিয়ে পেসারদের নামগুলোও বলে দেওয়া যায়—তাসকিন আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমান ও হাসান মাহমুদ। বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালট্যান্ট শ্রীধরন শ্রীরামের আগে থেকেই ধারণা, হোবার্টের উইকেট হবে স্পিননির্ভর। আবার ডাচদেরও স্পিন খেলতেই বেশি সমস্যা। তারপরও বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে শুধু সাকিবেরই খেলার সম্ভাবনা বেশি। অবশ্য মোসাদ্দেক হোসেনকে বাইরে রেখে মেহেদী হাসান মিরাজ বা নাসুম আহমেদের কেউ একাদশে চলে এলে ভিন্ন কথা।