খারাপ সময়েও পাশে ছিলেন নির্বাচকেরা, নাজমুলের ধন্যবাদ
চেমসফোর্ডে কাল বাংলাদেশ দল ব্যাটিংয়ের সময় নাজমুল হোসেনের ব্যাটিং গড় দেখে বিষ্ময় প্রকাশ করেন ধারাভাষ্যকার অ্যালান উইলকিনস। এত ভালো ব্যাটিং করছে, অথচ ছেলেটির ব্যাটিং গড় ২২/২৩–এর আশপাশে—এটাই ছিল উইলকিনসের বিস্ময়ের কারণ।
বাংলাদেশ দলের জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন নাজমুল। তাঁকে করা শেষ প্রশ্নটির সঙ্গে উইলকিনসের মন্তব্যের যোগসূত্র আছে। শেষ প্রশ্নটি ছিল, খারাপ দিন পেছনে ফেলে এসেছেন, সেসব দিনের কথা চিন্তা করে প্রধান নির্বাচক ও প্রধান কোচ ধন্যবাদ পাবেন কি না?
নাজমুলের উত্তরে পরে আসা যাবে। আগে যোগসূত্রটা বুঝিয়ে বলা যাক। ২০১৭ সালে টেস্ট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক নাজমুলের। পরের বছর ওয়ানডেতে এবং তার পরের বছর অভিষেক টি–টোয়েন্টিতে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে তাঁর গত পাঁচ বছরের ব্যাটিং গড়টা দেখে নেওয়া যাক। ২০১৭ সালে ১ ম্যাচ খেলে ১৫.০০, পরের বছর ৪ ম্যাচ খেলে ৭.৬০, ২০১৯ সালে ২ ম্যাচ খেলে ৮.০০, ২০২০ সালে ৪ ম্যাচ খেলে ৩৭.৬০।
পরিবর্তনের হাওয়া খানিকটা লাগতে শুরু করে ২০২১ সাল থেকে। সে বছর টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি পান, কিন্তু ব্যাটিং গড় অতটা ভালো ছিল না। ১৪ ম্যাচে ২৪.৮০। গত বছর সেটা আরেকটু কমে, ২৮ ম্যাচে ২৩.১৯। এ পর্যন্ত পড়ে মনে হতে পারে যে ব্যাটসম্যান এমন ধারাবাহিকভাবে অধারাবাহিক তাঁকে খেলানোর কি দরকার!
ঠিক এখানেই হয়তো নির্বাচকদের সঙ্গে দর্শক–সমর্থকের খেলোয়াড় চেনা–বোঝার পার্থক্য। তিন সংস্করণ মিলিয়ে নাজমুল এ বছর এখন পর্যন্ত খেলেছেন ১৫ ম্যাচ। ৪৪.৮৩ ব্যাটিং গড়ে তুলেছেন ৫৩৮ রান। এর মধ্যে কাল আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ৯৩ বলে ১১৭ রানের ইনিংসটি কারও কারও কাছে তাঁর ক্যারিয়ার–সেরা ইনিংস মনে হতে পারে। ৩২০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৯.১ ওভারের মধ্যে ৪০ রানে ২ উইকেট হারানোর পর নাজমুল এক প্রান্তে কিছু টের পেতে দেননি।
৩৭তম ওভারে যখন আউট হয়ে ফিরছিলেন, বাংলাদেশ দল জয় থেকে ৪৯ বলে ৬৩ রানের দূরত্বে। তখন মনে হয়েছিল নাজমুল ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারতেন। এই যে এমন মনে হওয়া, সেটা ব্যাটিংয়ে নাজমুলের পাল্টে যাওয়ার জন্য। আর সুযোগটা তিনি পেতেন না, যদি একটা দীর্ঘ সময় ধরে ধারাবাহিকভাবে অধারাবাহিক হওয়ার পরও নির্বাচকেরা তাঁর ওপর ভরসা না রাখতেন।
একটা দীর্ঘ সময় ধরে নাজমুলকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রসিকতা হয়েছে। নির্মম ঠাট্টার কশাঘাতে জর্জরিত হতে হয়েছে। এ বছর তার প্রকোপ কি একটু কম মনে হচ্ছে না? এর কারণও আছে। এ বছর ওয়ানডেতে ৮ ম্যাচে নাজমুলের ব্যাটিং গড় ৫২.৮৫। ৭ ইনিংসে ব্যাট করে ৩৭০ রান তোলার পথে আছে ৩টি ফিফটি ও ১টি সেঞ্চুরি, যা কাল তুলে নিয়েছেন ওয়ানডেতে নিজের প্রথম হিসাবে।
টি–টোয়েন্টিতেও বেশ ভালো। ৬ ম্যাচে ৫৪.৬৬ গড়ে ১৬৪ রান তুলেছেন ১২১.৪৮ স্ট্রাইক রেটে। টেস্টে এ বছর এখন পর্যন্ত নাজমুল ১ ম্যাচই খেলেছেন ২.০০, ব্যাটিং গড় তাঁর সঙ্গে বেমানান হলেও অন্য দুটি সংস্করণের ব্যাটিং আভাস দিচ্ছে, সাদাপোশাকেও সুদিন সামনেই।
কিন্তু নাজমুল এই সুদিনের দেখা পেতেন না, যদি নির্বাচক ও কোচ থেকে শুরু করে ম্যানেজমেন্ট তাঁর ওপর ভরসা না রাখতেন। কাল সংবাদ সম্মেলনে শেষ প্রশ্নের উত্তরে সে কথা স্বীকার করেই সবাইকে ধন্যবাদ দিলেন নাজমুল, ‘অবশ্যই। নির্বাচক, বোর্ড ও আগের কোচিং স্টাফ (ধন্যবাদ) পাবেন। অনেকগুলো ম্যাচ খেলার সুযোগ কিন্তু আমি পেয়েছি। এটা আমাকে সাহায্য করছে। তাঁদের প্রতি অনেক ধন্যবাদ, কারণ বিশ্বাসটা আমার ওপর ছিল। তবে এখনো অনেক দূর যেতে হবে। কয়েকটা ইনিংস ভালো হয়েছে। এটা যদি ধরে রাখতে পারি, আমার জন্য ভালো, দলের জন্যও ভালো।’