সময় নষ্টের পরিকল্পিত প্রদর্শনী: একটি ধোনি পরিবেশনা
কমিক চরিত্র চাচা চৌধুরীর কথা মনে আছে কি!
সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের লাল পাগড়ি পরা মানুষটির বুদ্ধি নাকি কম্পিউটারের চেয়েও প্রখর। খেলার মাঠে সময় নষ্ট করতে এমনই এক প্রখর মস্তিষ্কের খেল দেখিয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। কেউ কেউ অবশ্য উল্টোভাবেও দেখতে পারেন। প্রশ্ন তুলতে পারেন সাবেক ভারতীয় অধিনায়কের খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা নিয়ে।
যেভাবেই দেখুন না কেন, ঘটনাটা বেশ চমকপ্রদই। মঙ্গলবার এমএ চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে আইপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ারে গুজরাট টাইটানসের মুখোমুখি হয় চেন্নাই সুপার কিংস। চেন্নাইয়ের ১৭২ রান তাড়ায় গুজরাটের ইনিংসে যখন ১৫ ওভার শেষ, ঘটনা তখনকার।
ষোলোতম ওভারটি করতে মাথিশা পাথিরানাকে ডাকেন অধিনায়ক ধোনি। তবে শ্রীলঙ্কান এই পেসারের বোলিংয়ে বাদ সাধেন আম্পায়ার। জানিয়ে দেন, পাথিরানা আট মিনিটের বেশি সময় মাঠের বাইরে ছিলেন বলে এখনই বোলিং করতে পারবেন না। নিয়মানুযায়ী একজন ফিল্ডার যতটুকু সময় বাউন্ডারির বাইরে থাকবেন, ফেরার পর ততটুকু সময় মাঠে থাকার পরই শুধু বোলিং করতে পারেন। পাথিরানা ফেরার পর নির্দিষ্ট সময় শেষ হতে তখনো আরও কয়েক মিনিট বাকি।
ধোনির পরিকল্পনা ছিল ইনিংসের ১৬, ১৮ ও ২০তম ওভার পাথিরানাকে দিয়ে করাবেন। কিন্তু ১৬তম ওভারটি না করাতে পারলে ডেথ ওভারে ৩ ওভার কাজে লাগানোর সুযোগ হবে না। ম্যাচ জিততে মূল অস্ত্রও পাথিরানাই। যে করেই হোক পাথিরানাকে দিয়ে বোলিং করাতে ‘দৃঢ়প্রতিজ্ঞ’ হয়ে ওঠেন ধোনি। কিন্তু নিয়মের বাইরেও তো যাওয়া যাবে না। তাহলে সমাধান?
৪১ বছর বয়সী ধোনির মাথায় খেলে যায় সময়–নষ্টের অঙ্ক। মিনিট চারেক কোনোভাবে কাটিয়ে দিতে পারলেই তো পাথিরানার হাতে বল দেওয়া যাবে।
ব্যস, ভাবনার বাস্তবায়ন শুরু করেন নিজেকে দিয়েই। প্রথমেই ধীর পায়ে হেঁটে এগিয়ে যান স্কয়ার লেগ আম্পায়ার ক্রিস গাফানির দিকে। এরপর এক কথা দুই কথায় সময় নষ্ট শুরু করেন। কিন্তু তা–ও বা কতক্ষণ!
এক এক করে এগিয়ে আসতে থাকেন চেন্নাইয়ের ফিল্ডাররা। এবার সতীর্থদের সঙ্গে আলাপ শুরু করেন ধোনি। যেন ম্যাচের কৌশল ঠিক করছেন। সবার মতামত নিচ্ছেন, কী করা যায়। গুজরাটের দুই ব্যাটসম্যান বিজয় শঙ্কর ও রশিদ খানকে তখন একপাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
মাঠের ভেতরে কী হচ্ছে, প্রথম দিকে সেটা বাইরে থেকে বোঝা যাচ্ছিল না। ধীরে ধীরে ব্যাপারটা ধরে ফেলতে থাকেন অনেকেই—সময় নষ্ট করছে চেন্নাই। একপর্যায়ে ধারাভাষ্য কক্ষে থাকা সুনীল গাভাস্কার বলে ওঠেন, ‘আপনাকে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মানতে হবে। এমনকি আম্পায়ার যদি প্রচণ্ড চাপের পরিস্থিতিতে ভুল সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকেন।’
ধোনি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অমান্য করেননি। তবে নিজের পরিকল্পনায় অটল থাকতে সময় নষ্টের নিপুণ প্রদর্শনী করেছেন। প্রায় চার মিনিটের মতো খেলা বন্ধ থাকার পর পাথিরানার হাতেই বল তুলে দেন ধোনি, ততক্ষণে বোলিং করার মতো যথেষ্ট সময় তাঁর মাঠে কাটানো হয়ে গেছে।
ধোনির সময় নষ্ট করার এই কৌশল অবশ্য ভালোই কাজে লেগেছে। ১৬তম ওভারে ১৩ রান দিলেও ১৮ ও ২০তম ওভারে মাত্র ১৫ রান দেন পাথিরানা, তুলে নেন শঙ্কর আর মোহাম্মদ শামির উইকেট। ১৫ রানে জিতে ফাইনালে জায়গা করে নেয় চেন্নাই।
ম্যাচ শেষে গুজরাটের ব্যাটসম্যান বিজয় শঙ্করকে এ নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় সে (পাথিরানা) কিছুটা সময় মাঠের বাইরে ছিল। বোলিং করার জন্য আরেকটু সময় লাগত। এ কারণেই (ধোনি) ম্যাচটাকে ধীর করে ফেলেছিল।’ মাঠে থাকা চেন্নাইয়ের ঋতুরাজ গায়কোয়াড়কে জিজ্ঞেস করলে তিনি হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমি জানি না, আসলে কী হয়েছিল।’