খবরটা বিদ্যুৎ–গতিতে ছড়িয়ে পড়ল। লিটন দাস অনুশীলনে আসেননি! ভারতের বিপক্ষে আগের ম্যাচ শেষে দুই কারণে আলোচনায় ছিলেন বাংলাদেশ ওপেনার। দারুণ ব্যাটিংয়ের পর বিরাট কোহলির কাছ থেকে ব্যাট ‘উপহার’ পেয়েছেন। এরপর গতকাল তিনি খবরের শিরোনাম হলেন অনুশীলনে না এসে।
ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে লিটন বাঁ পায়ের হ্যামস্ট্রিংয়ে হালকা চোট পেয়েছেন, যেটাকে দলের চিকিৎসক দেবাশিস চৌধুরী ‘ইনজুরি’র মর্যাদা দিতেও রাজি নন। কারণ, লিটনের সমস্যা গুরুতর নয়। সামান্য ব্যথা থাকলেও হাঁটাচলায় সমস্যা হচ্ছে না। দেবাশিসের আশা, আগামীকাল পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর খেলায় কোনো বাধা হবে না হ্যামস্ট্রিংয়ের সমস্যা।
অ্যাডিলেডের কারেন রোল্টন ওভালে গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ঘণ্টা তিনেক অনুশীলন করেছে বাংলাদেশ দল। সেখানে লিটন না থাকলেও ছিলেন বাকি সবাই। খোলামেলা মাঠটার মাঝ উইকেটেই হয়েছে অনুশীলনের মূল পর্ব।
বোলারদের বোলিংয়ের পাশাপাশি থ্রোয়ার দিয়ে বল ছুড়েছেন দলের সঙ্গে থাকা সহকারীরা। অন্য প্রান্তে যাঁরা ব্যাটিংয়ে এসেছেন, বড় শট খেলাতেই সবার মনোযোগ ছিল বেশি। কে কতবার বল মাঠ ছাড়া করতে পারেন এবং কত দূরে নিতে পারেন, যেন সেই প্রতিযোগিতাতেই মেতেছিলেন ব্যাটসম্যানরা!
টি–টোয়েন্টির ব্যাটিং অনুশীলনটা এখন এ রকমই হয় সাধারণত। তবে গতকালের ‘বিগ হিটিং’ অনুশীলনের একটা আলাদা তাৎপর্য তো আছেই। সেমিফাইনাল খেলতে অন্য অনেক হিসাবের পাশাপাশি আগামীকাল বাংলাদেশকে পাকিস্তানের বিপক্ষে জিততেই হবে এবং সেটা বড় ব্যবধানে। চার–ছক্কা মারার প্রস্তুতিটা তাই একটু বেশিই ভালো হওয়া চাই। আজ ম্যাচের আগের দিনের অনুশীলনটা যেহেতু ঐচ্ছিক রাখা হয়েছে, ঝোড়ো ব্যাটিংয়ের সেই প্রস্তুতি গতকালই সেরে রাখলেন সবাই।
মাঝ উইকেটের অনুশীলন পর্বে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ব্যাটিং আলাদা করেই চোখে পড়েছে। পড়তে বাধ্যও। অন্য ব্যাটসম্যানদের ফাঁকে ফাঁকে তিনিই যে সবচেয়ে বেশি সময় নেটে কাটিয়েছেন, সবচেয়ে বেশিবার বল মাঠ ছাড়া করেছেন।
কিছুক্ষণ ব্যাট করে নেটের বাইরে এসে দাঁড়িয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন, নেটে ঢুকছেন অন্য কোনো ব্যাটসম্যান। এরপর আবার সাকিব যাচ্ছেন নেটে।
এভাবে তিন–চার দফা ব্যাটিং করে তবেই মাঠ ছেড়েছেন অধিনায়ক। বড় শট খেলার চেষ্টা করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই হয়েছেন সফল। সেই বল কুড়িয়ে আনতে মাঠের বাইরে ‘ফিল্ডারের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ সাংবাদিক ও প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সাকিবের ব্যাটিং দেখে সে রকমই এক প্রবাসীর রসিকতা, ‘আজ (গতকাল) সাকিব যে রকম ব্যাটিং করছে, পাকিস্তানের বিপক্ষে এর অর্ধেক করলেও হবে...।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের প্রত্যাশার সমান্তরালে আরেকটা প্রত্যাশা, সাকিব ব্যাট হাতে জ্বলে উঠবেন। বিশ্বকাপের গত চার ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে বোলিংটা একেবারে খারাপ করেননি। কিন্তু ব্যাটিংয়ে ৭, ১, ২৩ ও ১৩ রান নিয়ে সাকিবও খুশি নন। বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের যে অবস্থায় ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন, সাকিবই পারতেন বাংলাদেশকে বড় কিছুর দিকে নিয়ে যেতে।
তাসকিনের কাছে অবশ্য উইকেটের চেয়ে বড় প্রক্রিয়া ঠিক রেখে খেলা। তাঁর বিশ্বাস সেটি তিনি করছেনও, ‘উইকেট অনেক সময় পাব, অনেক সময় পাব না। কিন্তু আমি আমার প্রক্রিয়া মেনে এগোচ্ছি। আমার লক্ষ্য প্রতিটি ম্যাচে, প্রতিটি দিন আরও উন্নতি করা। সব দিক থেকে উন্নতি করে নিজেকে আরও ছাড়িয়ে যেতে চাই, এটাই লক্ষ্য।’
তাসকিন তো প্রতি পদক্ষেপেই লক্ষ্য পূরণের দিকে এগোচ্ছেন। সাকিবের ‘বিগ হিটিং’ অনুশীলনের লক্ষ্যটা পূরণ হবে তো?