‘বার্নলি যেন প্রতি সপ্তাহে অ্যানফিল্ড যাচ্ছে’, মনে হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা কোচের
এমন অনভিজ্ঞ দল নিয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাটিতে লড়াইটা সহজ হবে না দক্ষিণ আফ্রিকার, জানতেন সেটি। মাউন্ট মঙ্গানুইতে কিউইদের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার পর নিজেদের অবস্থা নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রধান কোচ শুকরি কনরাডের মনে হচ্ছে, ‘বার্নলি যেন প্রতি সপ্তাহে অ্যানফিল্ডে যাচ্ছে।’
প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব বার্নলির লিভারপুলের মাঠ অ্যানফিল্ডে যাওয়ার মানেটা কী, সেটি হয়তো বোঝা যায় দুই দলের অবস্থানেই। পয়েন্ট তালিকায় বার্নলি এখন আছে ১৯ নম্বরে, লিভারপুল শীর্ষে। আগামীকাল অ্যানফিল্ডে খেলতে যাবে বার্নলি। দুই দলের শক্তির তারতম্যটা আরেকটু বুঝিয়ে দেওয়া যায় একটি পরিসংখ্যানে। বার্নলির বিপক্ষে প্রিমিয়ার লিগে সর্বশেষ ১০ ম্যাচের মধ্যে ৮ ম্যাচেই জিতেছে লিভারপুল। বাকি ২ ম্যাচের ফল থেকে খানিকটা আশা খুঁজে নিতে পারেন দক্ষিণ আফ্রিকা কোচ কনরাড। এক ড্র এবং অন্য ম্যাচে হেরেছে লিভারপুল।
এসএটোয়েন্টিতে খেলার সুযোগ করে দিতে নিউজিল্যান্ড সফরে শীর্ষ সারির খেলোয়াড়দের নিয়ে যায়নি দক্ষিণ আফ্রিকা। প্রথম টেস্টে অধিনায়ক নিল ব্রান্ডসহ অভিষেক হয়েছে তাদের ছয়জনের। এ সফরে প্রথম সারির দলকে পাবেন না, কনরাড প্রায় সাত মাস ধরে এটি জানলেও প্রথম টেস্টের পর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে পার্থক্যটা বুঝেছেন আরও বেশি করে।
২৮১ রানে হারের পর কনরাড বলেছেন, ‘এটি আসলে ঠিক নয়। সবার জন্যই কঠিন। এটি যেন বার্নলির প্রতি সপ্তাহে অ্যানফিল্ডে যাওয়া। যদি টি-টোয়েন্টি হতো, তাহলে একটা পারফরম্যান্সেই ম্যাচ জেতা যেত। (কিন্তু টেস্ট) পাঁচ দিন ক্রমাগত প্রচেষ্টা বেশ চাপের। নিউজিল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে আপনাকে সব সময়ই নিজের সেরা খেলাটি খেলতে হবে।’
এ সফরে দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য প্রথম শ্রেণির অভিজ্ঞদেরই নিয়ে গেছে। স্কোয়াডে থাকা খেলোয়াড়েরা গড়ে খেলেছেন ৯৬টি করে ম্যাচ। তবে প্রথম শ্রেণির সঙ্গে টেস্ট ক্রিকেটের পার্থক্যটা কেমন, সেটি তাঁরা টের পেয়েছেন বলেই মনে করেন কনরাড, ‘টেস্ট ক্রিকেটের কঠোর বাস্তবতাটা কয়েকজনকে আঘাত করেছে, তারা হয়তো বুঝেছে আরও কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে। আবার কেউ কেউ বুঝেছে তারা এখন যতটা ভাবছে, তার চেয়েও বেশি কাছে দাঁড়িয়ে। তারা গত কয়েক দিন যার মধ্য দিয়ে গেছে, এমন হলে আসলে আঘাতটা বোঝা যায়, জেগে উঠতে হয়।’
দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য ফিল্ডিংয়ে সুযোগ নিলে চিত্রটা ভিন্নও হতে পারত। ফিল্ডিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের উন্নতির কথাও আলাদা করে বলেছেন কনরাড, ‘আমরা যদি প্রথম দিন সুযোগ নিতাম…যখনই সুযোগ আসবে, আপনাকে দুই হাতে লুফে নিতে হবে। আমরা তা নিইনি। প্রথম দিনটা ভিন্ন হতে পারত। আর এরপর যদি ব্যাটিংটা ঠিকঠাক করতাম…।’
ম্যাচে দুই ম্যাচ মিলিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ফিফটি একটিই। দ্বিতীয় ইনিংসে সেটি করেছেন ডেভিড বেডিংহাম। তবে কিগান পিটারসেন ও জুবায়ের হামজা শুরু পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। নিউজিল্যান্ডের সফরের আগে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার এই তিন ব্যাটসম্যানেরই।
তাঁদের কাছ থেকে কনরাডের প্রত্যাশাটা তাই বেশিই ছিল, ‘চাপ আসলে অনেক প্রভাবই ফেলে। অনেকেই এ পর্যায়ে এসে ভাবে তার জাদুর কাঠির দরকার। আদতে আপনার সবকিছু সরলীকরণ করতে হবে। গিয়ে নিজেকে মেলে ধরো, এমন বলা সহজ। তবে আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ সূক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, টেলিভিশন আর সব জায়গায় টেকনিক নিয়ে কাটাছেঁড়া করা হচ্ছে। টেস্ট ক্রিকেটের নিষ্ঠুর বাস্তবতাটা এমনই। খেলোয়াড়দের এসব মানিয়ে নিতে হবে।’
অবশ্য আশপাশে অভিজ্ঞ কারও না থাকাটাও পার্থক্য গড়েছে বলে মনে করেন দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ, ‘টনি জর্জি যখন অভিষেক করতে নামল, সে এইডেন মার্করাম ও ডিন এলগারের পরে নেমেছিল। এরপর টেম্বা বাভুমা চারে নেমেছিল। টেস্ট পর্যায়ে অনেক অভিজ্ঞতা ছিল। সে যদি এদিন নামত, তাহলে এমন কারও সঙ্গে খেলতে হতো, যার নিজেরও অভিষেক হচ্ছে। সবাই এ পর্যায়ে অনভিজ্ঞ। প্রথম শ্রেণিতে অনেক অভিজ্ঞতা আছে, কিন্তু টেস্টে নেই। আর এটি শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, সবখানেই (টেস্টের সঙ্গে প্রথম শ্রেণির) বিশাল পার্থক্য।’
১৩ ফেব্রুয়ারি হ্যামিল্টনে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে।