জয় থেকে মাত্র ২ বলের দূরত্বে ছিল পাকিস্তান। দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ দুটি উইকেট তুলে নিলেই তো অবিশ্বাস্য এক জয় পেয়ে যেত দলটি। মার্কো ইয়ানসেন আর কাগিসো রাবাদা সেটি হতে দেননি। ১৪৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৯৯ রানে ৮ উইকেট খোয়ানো দলকে অবিশ্বাস্যভাবে ২ উইকেটে জিতিয়েছেন দুজন। আর এই জয়টিই বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে তুলে দিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আগামী জুনের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়া অথবা ভারতের বিপক্ষে খেলবে প্রোটিয়ারা।
জিতলেই ফাইনালে, এমন ম্যাচটা রুদ্ধশ্বাস অপেক্ষার পর জেতাতেই উদ্যাপনের মাত্রাটা একটু চড়াই ছিল দক্ষিণ আফ্রিকানদের। ‘এত কাছে তবু দূর’—এমন অনুভূতির সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় থাকায় একটু ভয়েই ছিল প্রোটিয়ারা। ৯৬/৪ থেকে হঠাৎই ৯৯/৮ হয়ে যাওয়ার পর ভয়টা বেশ জাঁকিয়ে বসেছিল। যাঁর আউটে এমন অবস্থার শুরু, সেই টেম্বা বাভুমা নাকি টেনশনে ম্যাচের শেষটা ঠিকমতো দেখেননি। ম্যাচ জেতার পর পুরস্কার-বিতরণী অনুষ্ঠানেই নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন দক্ষিণ আফ্রিকা অধিনায়ক।
মোহাম্মদ আব্বাসের বলে বাজে শট খেলতে গিয়ে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছিলেন বাভুমা। পরে টিভি রিপ্লে দেখায় আলট্রা এজ প্রযুক্তিতে ব্যাট-বলের কোনো সংযোগ ধরা পড়েনি। বাভুমা অবশ্য আম্পায়ার আঙুল তুলতেই ফিরে যান ড্রেসিং রুমে, রিভিউ-টিভিউ কিছু নেননি।
আমি তো টয়লেটে চুপচাপ বসে ছিলাম। মার্করাম তখন ছেলেদের ইতিবাচক রাখার কাজটা করছিল। তখনো আমাদের আশা ছিল। ১৫ রানের মতো যখন দরকার তখন আমি বেরোলাম।টেম্বা বাভুমা, অধিনায়ক, দক্ষিণ আফ্রিকা
বাভুমার ফেরার কিছু সময় পরেই ৮ উইকেটে ১১৬ রান নিয়ে লাঞ্চে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। বাভুমা জানালেন লাঞ্চের বেশির ভাগ সময়ই টয়লেটে কাটিয়েছেন তিনি। সেখান থেকে বেরোন যখন জয় থেকে ১৫ রানের দূরত্বে দল। এরপর কী করছেন সেটি শুনুন বাভুমার কথাতেই, ‘আমি তো টয়লেটে চুপচাপ বসে ছিলাম। মার্করাম তখন ছেলেদের ইতিবাচক রাখার কাজটা করছিল। তখনো আমাদের আশা ছিল। ১৫ রানের মতো যখন দরকার তখন আমি বেরোলাম। তবে তখনো যেখান থেকে খেলা দেখা যায় সেখানে যাইনি। খুব কঠিন ছিল সময়টা।’
দল প্রথমবার বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে উঠেছে। সেটিও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাওয়া এক জয়ে। বাভুমা একটু আবেগীই ছিলেন, ‘আমার জন্য খুব আবেগী একটা ব্যাপার। টেস্ট ক্রিকেটের ভালো বিজ্ঞাপনও হলো। আমাদের দলের জন্য খুব আনন্দের উপলক্ষ, কী চড়াই-উতরাই পেরিয়ে না এসেছে এই জয়।’
দল তো শেষ পর্যন্ত জিতেছে, তবে হেরে গেলে দায়টা বেশি পড়ত বাভুমার ভাগেই। ব্যাটে বল না লাগলেও যে আউট হয়ে রিভিউ নেননি। কেন নেননি, এমন প্রশ্ন শুনে একটু অবাকই হলেন বাভুমা, ‘কী বলছেন, ব্যাটের কানায় লাগেনি? আমি ঠিক নিশ্চিত নই, একেবারেই নিশ্চিত নই।’
রাবাদা-ইয়ানসেনের ব্যাটে জয় পেলেও ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন এইডেন মার্করাম। প্রথম ইনিংসে ৮৯ রান করা ওপেনার দ্বিতীয় ইনিংসে করেছেন ৩৭ রান। জয়ের পর সেই মার্করাম বললেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচার কথা, ‘হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম। কী স্নায়ুক্ষয়ীই না ছিল। শেষ পর্যন্ত যে সঠিক পাশে থাকতে পারলাম, সেটি অনেক বড় ব্যাপার’।
পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ সুযোগ হারানোর আক্ষেপ করেননি। বরং দল যে ১৪৮ রানের পুঁজি নিয়েও জয়ের জন্য লড়েছে তাতেই খুশি, ‘আমার ওদের ৮ উইকেট তুলে নিয়েছিলাম। ব্যাট হাতে (প্রথম ইনিংসে ) আরও কিছু রান যোগ করতে পারলে লক্ষ্যটা আরেকটু বড় দিতে পারতাম।’