কোহলি ‘সবাইকে চুপ করিয়ে দিল’
মেলবোর্নে ভারত–পাকিস্তান ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে গত পরশু। জমজমাট সেই ম্যাচের রেশ কি কেটেছে? সম্ভবত না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখনো চলছে বিরাট কোহলির জয়গান। ভারতের ৪ উইকেটের জয়ে ৫৩ বলে ৮২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন বিরাট কোহলি। কেউ কেউ এটিকে তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংসও বলছেন।
কোহলির ব্যাটে রান নেই, এমন অভিযোগ ছিল বহুদিন ধরেই। যদিও গত মাসেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছেন, এরপর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬৩ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অপরাজিত ৪৯ রানের ইনিংসও আছে। সবই টি–টোয়েন্টি সংস্করণে। তবে সেই সেঞ্চুরির আগে রানখরা চলেছে কোহলির। তখন সংবাদমাধ্যম থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোহলির সমালোচনা ও ঠাট্টা–মশকরা কম হয়নি।
সেসব স্মরণ করে এবং কোহলির প্রশংসা করে ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’–এ লিখেছেন রবি শাস্ত্রী। ভারতের সাবেক এই কোচ কোহলির ইনিংসটিকে তার ক্যারিয়ারের ‘সেরা টি–টোয়েন্টি ইনিংস’ বলেছেন।
শাস্ত্রী ভারতের কোচ থাকতে সেরাদের কাতারে নিজেকে তুলে আনেন কোহলি। তাঁর খোলনলচে জানেন বলেই শাস্ত্রী লিখেছেন, ‘আমি এটা ঘটার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম। জানতাম এটা অস্ট্রেলিয়াতেই হবে। সেখানে তার রেকর্ড দেখুন—পিচ তার (ব্যাটিংয়ের) সঙ্গে মানানসই, আর দর্শকদের সামনে সে সেখানকার মাঠে খেলতে পছন্দ করে। পাকিস্তানের বিপক্ষে তার রেকর্ডও সব সময় ভালো, পরিস্থিতিও ছিল গুরুত্বপূর্ণ ; একদম সময়মতো জ্বলে উঠেছে।’
পাকিস্তানের ৮ উইকেটে ১৫৯ রান তাড়া করতে নেমে ৭ম ওভারে ভারত ৩১ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর জুটি বাঁধেন কোহলি ও হার্দিক পান্ডিয়া। কোহলি বড় ইনিংস খেলবেন, এটা বুঝতে পারার পরই শাস্ত্রী আবেগাক্রান্ত হয়ে পড়ছিলেন। গত কয়েক বছর কোহলি কীসের মধ্যে দিয়ে গেছেন ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার তা জানেন।
হারিস রউফের বলে কোহলির মারা দুটি ছক্কাকে ‘ভারত–পাকিস্তান ম্যাচে কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের খেলা অন্যতম সেরা দুটি শট’ বলে মনে করেন শাস্ত্রী। একটা তুলনাও টেনেছেন তিনি, ‘২০০৩ বিশ্বকাপে সেঞ্চুরিয়নে শোয়েব আখতারের বলে শচীন টেন্ডুলকারের মারা ছক্কার সঙ্গে তুলনা হতে পারে। দুজনেই আমাদের সময়ের সেরা। ওয়াসিম, ওয়াকার ও শোয়েবের বিপক্ষে নিজের ইনিংসে দারুণ কিছু শট খেলেছিলেন টেন্ডুলকার। এরপর কোহলির ইনিংসটি, এই দুটি ইনিংস দুর্দান্ত ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে আমার দেখা সেরা।’
বিরাট কোহলির পরবর্তী লক্ষ্য কি? অন্তত শাস্ত্রীর কোনো প্রত্যাশা নেই তাঁর কাছে, ‘তাকে জীবনটা উপভোগ করতে দিন। তার মতো আকাট হীরকখন্ডের ওপর প্রচুর চাপ সৃষ্টি করেছিল সংবাদমাধ্যম ও সমালোচকেরা। সেও দেখিয়ে দিয়েছে কোন ধাতে গড়া মানুষ। সবাইকে চুপ করিয়ে দিল!’
পঞ্চম উইকেটে কোহলির সঙ্গে ৭৮ বলে ১১৩ রানের জুটি গড়েন পান্ডিয়া। এই জুটিই ভারতের জয়ের ভিত। ৩৭ বলে ৪০ রান করা পান্ডিয়ারও প্রশংসা করেন শাস্ত্রী, ‘হার্দিক দুর্দান্ত একটা কাজ করেছে। সে চ্যাম্পিয়নকে জাগিয়ে তুলেছে। অমন মঞ্চে (এমসিজি), ম্যাচের অমন পরিস্থিতিতে এমন কাউকে প্রয়োজন হয়, যে সব সময় সাধারণ কথায় উজ্জীবিত রাখবে। আমি জানি হার্দিক চুপ করে থাকার ছেলে নয়। সতীর্থকে যা বলা দরকার সে সেটাই বলবে। কথাটা বিরাটের ক্ষেত্রেও সত্য।’