‘কোনো মিকি মাউস দলের বিপক্ষে তো খেলব না’
আগে কখনো যা পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা, এবার কি তা পারবে?
‘যা পারেনি’ মানে যে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল পেরিয়ে ফাইনাল খেলা, সেটা বোধ হয় ব্যাখ্যা না করলেও চলত। বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার গল্প যেন এক বিয়োগান্তক মহাকাব্যের নতুন নতুন অধ্যায়। কখনো বৃষ্টির ফাঁদে পড়ে, কখনো হিসাবে ভুল করে, কখনো স্নায়ুচাপে পাগলাটে দৌড় দিয়ে থেমেছে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার পথচলা। তাহলে এবার পারবে কি না, এই প্রশ্ন কেন আসছে?
আসছে, কারণ, এই বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকা সত্যিই অসাধারণ খেলছে এবং এবার ওদের সত্যি সত্যি কিছুটা চ্যাম্পিয়ন দলের মতো দেখাচ্ছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা বলে কথা! এ রকম দুর্দান্ত খেলতে খেলতেই তো একসময় একটা ভজঘট পাকায় কিংবা দুর্ভাগ্যের শিকার হয়।
ইডেনে আজ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেমিফাইনাল সামনে রেখে কাল দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক টেম্বা বাভুমার সংবাদ সম্মেলনে তাই আবারও প্রশ্নটা উঠল—এবার কি পারবে দক্ষিণ আফ্রিকা?
উত্তরে বাভুমা খুব আত্মবিশ্বাসী থাকার চেষ্টা করলেন, ‘যেভাবে আমরা এই বিশ্বকাপে খেলে এসেছি এখন পর্যন্ত, একটা ইতিবাচক মানসিকতা তো তৈরি হয়েছেই। প্রত্যাশাও অনেক বেড়েছে। অনেকেই মনে করছেন, এটাই হয়তো সেই বিশ্বকাপ, যেখানে আমরা ফাইনাল খেলব। দলগত ও ব্যক্তিগতভাবে আমিও এর চেয়ে কম কিছু আশা করি না।’
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, প্রতিপক্ষ দলটার নাম অস্ট্রেলিয়া, যারা বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে সফল দল এবং যাদের বিপক্ষে বিশ্বকাপে একটা ভুলে যাওয়ার মতো স্মৃতি আছে দক্ষিণ আফ্রিকার। এজবাস্টনে ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সেই ম্যাচ তো আর ভুলে যাওয়ার নয়!
আত্মবিশ্বাসী বাভুমাও সে কারণেই বেশ সতর্ক, ‘আমরা তো আর কোনো মিকি মাউস দলের বিপক্ষে খেলব না। অস্ট্রেলিয়া অনেক অভিজ্ঞ, এই রকম নক আউট ম্যাচ কী করে জিততে হয়, সেটা ওরা খুব ভালো জানে। তাই ওরাও খুব আত্মবিশ্বাসী থাকবে। আমাদের তাই ওদের পুরো শ্রদ্ধা দেখিয়েই খেলতে হবে।’
একটা জায়গায় অবশ্য দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ভালো ভাবতেই পারে। বিশ্ব ক্রিকেটে দক্ষিণ আফ্রিকাই একমাত্র দল, যারা ওয়ানডের মুখোমুখি লড়াইয়ে অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে এগিয়ে। ওয়ানডেতে ১০৯ ম্যাচে মুখোমুখি হয়ে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে ৫০টি, দক্ষিণ আফ্রিকার জয় ৫৫ ম্যাচে। বাকি চার ম্যাচের তিনটি টাই, একটি পরিত্যক্ত।
তবে দলটা অস্ট্রেলিয়া এবং টুর্নামেন্টটা বিশ্বকাপ বলেই এই পরিসখ্যান খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। বাভুমাও অতীত পরিসংখ্যান বা ইতিহাসে নয়, আজ নিজেদের পারফরম্যান্সের দিকেই বেশি মনযোগী থাকতে চান, ‘এই টুর্নামেন্টে আমরা এখন পর্যন্ত যেভাবে খেলেছি, যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এগিয়েছি, সেমিফাইনালেও সেটাই করে যেতে চাই। আশা করি সেটাই আমাদের ইতিবাচক ফল এনে দেবে।’
বাভুমা নিজে অবশ্য আজকের ম্যাচে খেলবেন কি না, সেটা অনিশ্চিত। হ্যামস্ট্রিংয়ের চোট ভোগাচ্ছে তাঁকে। সিদ্ধান্তটা তিনি নিতে চান আজ সকালে। শেষ পর্যন্ত যদি নিয়মিত অধিনায়ককে একাদশে না পায় দক্ষিণ আফ্রিকা, তাহলে এইডেন মার্করাম নেতৃত্ব দেবেন দলকে।