হোপের দুর্দান্ত শতকে রেকর্ড গড়া জয় উইন্ডিজের
দুই দলের জন্যই এ সিরিজ একরকম নতুন শুরু। বিশ্বকাপ–বিপর্যয় পেছনে ফেলে আবার নিজেদের খুঁজে পাওয়ার পালা সদ্যই ‘সাবেক’ চ্যাম্পিয়ন হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ডের; ইতিহাসে প্রথমবার বিশ্বকাপে সুযোগ না পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্ষেত্রে ওয়ানডেতে আবার ঠিক পথে হাঁটা। সে সিরিজের প্রথম ম্যাচটি হলো রোমাঞ্চকর, অধিনায়ক শেই হোপের দুর্দান্ত অপরাজিত শতকে সেখানে ৭ বল ও ৪ উইকেট বাকি রেখে জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
অ্যান্টিগায় ইংল্যান্ডের দেওয়া ৩২৬ রানের লক্ষ্য ছুঁতে গেলে নিজেদের রেকর্ড নতুন করে গড়তে হতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে, ক্যারিবীয় মাটিতে এর আগে কখনোই এত রান তাড়া করে জেতেনি তারা। ভালো একটি শুরুর পর মাঝে হোঁচট খেয়ে ২১৩ রানেই ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে তারা, সে সময় এগিয়ে ছিল জস বাটলারের ইংল্যান্ডই। কিন্তু রোমারিও শেফার্ডের সঙ্গে হোপের ৫১ বলে ৮৯ রানের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শেষ দিকে শেফার্ড থামলেও জয় নিশ্চিত করেই মাঠ ছাড়েন হোপ। ৮৩ বলে ১০৯ রানের ইনিংসে তিনি ৪টি চারের সঙ্গে মারেন ৭টি ছক্কা।
অ্যালিক অ্যাথানাজ ও ব্র্যান্ডন কিংয়ের উদ্বোধনী জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ পেরিয়ে যায় ১০০ রান। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের উইকেটে ব্রেকথ্রুর দেখা দ্রুতই পায়নি ইংল্যান্ড। তবে এ উইকেটে স্পিনাররা সহায়তা পেয়েছেন—টার্নের সঙ্গে অসম বাউন্স অস্বস্তিতে ফেলেছে ব্যাটসম্যানদের। লেগ স্পিনার রেহান আহমেদ এনে দেন প্রথম ব্রেকথ্রু, ৬৫ বলে ৬৬ রান করে এলবিডব্লু হন অ্যাথানাজ। ঠিক পরের ওভারে আরেক স্পিনার লিয়াম লিভিংস্টোনের বলে বোল্ড আরেক ওপেনার কিং।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং এরপর এগিয়েছে হোপকে কেন্দ্র করে। কিসি কার্টির সঙ্গে ৩৮, শিমরন হেটমায়ারের সঙ্গে ৫৬ রানের জুটি গড়েন হোপ। শারফেইন রাদারফোর্ডের সঙ্গে জুটিটা বড় না হলেও শেফার্ডকে নিয়ে তাঁর ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে স্মরণীয় জয়ের পথে এগিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২৮ বলে ৪৮ রান করা শেফার্ডকে থামান গাস অ্যাটকিনসন, তবে ক্যারিয়ারের ১৬ তম শতক পাওয়া হোপকে থামাতে পারেনি ইংল্যান্ড।
ইনিংসে স্পিনার ও পেসারদের মধ্যে পার্থক্যটা ফুটে উঠেছে সহজেই। রেহান ও লিভিংস্টোনের ২০ ওভারে এসেছে মাত্র ৯০ রান, সেখানে ৩ পেসার মিলে ২৮.৫ ওভারেই দেন ২৩৩ রান। বড় ঝড়টা গেছে স্যাম কারেন ওপর দিয়ে, ৯.৫ ওভারে ৯৮ রান দেওয়ার পথে এ বাঁহাতি পেসার হয়ে গেছেন ওয়ানডেতে এক ইনিংসে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে খরুচে বোলার। আগের রেকর্ডটি ছিল স্টিভ হার্মিসনের, ২০০৬ সালে হেডিংলিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি দিয়েছিলেন ৯৭ রান।
বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে বারবার হতাশ করেছিল ব্যাটিং, তবে এ ম্যাচে সেটি ঠিকঠাক তাদের ধাঁচেই এগিয়েছে। নতুন উদ্বোধনী জুটি ফিল সল্ট ও উইল জ্যাকস ৮.২ ওভারেই তোলেন ৭৭ রান। দুজন দ্রুত ফেরার পর মিডল অর্ডারে জ্যাক ক্রলির ৬৩ বলে ৪৮, হ্যারি ব্রুকের ৭২ বলে ৭১ রানের শক্ত একটা ভিতই পায় ইংল্যান্ড। মাঝে বাটলার (৩) ও লিভিংস্টোন (১৭) তেমন কিছু করতে না পারলেও লম্বা ব্যাটিং লাইনআপের সুবিধা ঠিকই পায় সফরকারীরা।
২৩৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলার পরও ইনিংসের শেষ বলে গিয়ে অলআউট হওয়ার আগে তারা যায় ৩২৫ রান পর্যন্ত। ২১ বলে ৩১ রানে অপরাজিত থাকেন ব্রাইডন কার্স, তবে ক্যারিবীয়দের মূল ক্ষতিটা করেন ২৬ বলে ৩৮ রান করা কারেন। কিন্তু সেই কারেনই বোলিংয়ে গুবলেট পাকান পরে, তাতেই ফুটে ওঠে দিনটি কেমন ছিল ইংল্যান্ডের।
৬ ডিসেম্বর সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ একই মাঠে।