দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সিরিজ জয়
আগের টি-টোয়েন্টিতে ২৫৮ রান করেও হেরে গিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিশ্ব রেকর্ড গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা জিতে নিয়েছিল সেই ম্যাচ। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা ২২০ রান তুলল আজ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও। এ দিন আর পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা। আশা জাগিয়েও ম্যাচ হেরে গেল ৭ রানে।
জোহানেসবার্গে এই ম্যাচ জিতে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজটাও ২-১ ব্যবধানে জিতে নিল রভম্যান পাওয়েলের ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা হয়েছিল প্রায় আগের ম্যাচের মতোই। ২৬ মার্চ সেঞ্চুরিয়নে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আগে ব্যাট করতে নেমে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৬২ রান তুলেছিল ক্যারিবীয়রা, উইকেট হারিয়েছিল ১টি। আজও পাওয়ার প্লেতে রান এলো ৬১, ওয়েস্ট ইন্ডিজ উইকেট হারাল ২টি।
একই রকম শুরু দেখে টুইটারেও ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়ে গেল, তবে কি আজ আগের দিনের স্কোরও ছাড়িয়ে যাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ? ৩০০ রানের লক্ষ্যে কি ছুটছে রভম্যান পাওয়েলের দল!
আগের দিন অবশ্য ইনিংস যত এগিয়েছিল, বেড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান তোলার গতি। কিন্তু এদিন মাঝের ওভারে কিছুটা ছন্দপতন হলো। কাইল মেয়ার্স ও আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জনসন চার্লস ফিরে গিয়েছিলেন ৪ ওভারের মধ্যেই। চার্লস তো এদিন প্রথম বলেই বোল্ড! পরপর দুই বলে দুজনকে ফিরিয়ে কাগিসো রাবাদা জাগিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও। নিকোলাস পুরান অবশ্য সেটি হতে দেননি। ব্রান্ডন কিংয়ের সংগে মিলে গড়েছেন ৩০ বলে ৫৫ রানের জুটি। ২৫ বলে ৩৬ রান করে কিং ফেরার পর কিছুটা পথ হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস। অধিনায়ক পাওয়েল ফেরেন ৪ বলে ১১ রান করে, কিছুক্ষণ পর তাঁর পথ ধরেন পুরানও। তাঁর ১৯ বলে ৪১ রানের ইনিংসে ২ চার ও ৪ ছক্কা।
৬ষ্ঠ উইকেটে জেসন হোল্ডারের সঙ্গে রায়মন রেইফার গড়েন ১৭ বলে ৩১ রানের জুটি, যেখানে রেইফারই মূলত খেলেছেন। ১৮ বলে করেন ২৭ রান। মাঝের ওভারে একের পর এক উইকেট হারানোয় কমে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের রানের গতি। ১৭ ওভার শেষে ক্যারিবীয়দের রান ছিল ১৬৮, উইকেট চলে গেছে ৮টি।
সেখান থেকে দলের রানটা ২২০ পর্যন্ত গেছে আসলে নবম উইকেটে রোমারিও শেফার্ড ও আলজারি জোসেফের মধ্যে ২৬ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৯ রানের অসাধারণ এক জুটিতে। মাত্র ২২ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৪৪ রান করেন শেফার্ড। তাঁকে দারুণ সঙ্গ দেওয়া জোসেফ করেন ৯ বলে ১৪ রান। এ দুজনের ঝড়ে শেষ ৩ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তোলে ৫২ রান, শেষ ২ ওভারে ৪৩!
কোনো ফিফটি না থাকার পরেও তাই ২০০ পেরিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে যা দ্বিতীয় ঘটনা। ২০০৭ সালে সিডনিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে ২২১ রান করেছিল কোনো ফিফটি ছাড়া।
তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম ২ ওভারে এলো মাত্র ৭ রান। পঞ্চম ওভারে ফিরে গেলেন আগের ম্যাচের অবিশ্বাস্য সেই জয়ের অন্যতম নায়ক কুইন্টন ডি কক। ২১ বলে ২১ রান করা ডি ককের এদিন ব্যাটে বলে হচ্ছিল না কেন জানি। তবে অন্যপ্রাণে রিজা হেনড্রিকস ছিলেন আগের দিনের মতোই দুর্দান্ত ছন্দে। যা মারছিলেন, তাই লাগছিল।
২৬ বলেই তাই ফিফটি হয়ে গেল হেনড্রিকসের। ৫০ করার পরের বলটাতেই তাঁকে জীবন দিলেন ব্রান্ডন কিং, ডিপ কাভার বাউন্ডারিতে ক্যাচ ফেলে।
ওপাশ থেকে রাইলি রুশো দারুণ সঙ্গ দিচ্ছিলেন হেনড্রিকসকে। কিন্তু ২১ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ চারে ৪২ রান করে রুশো ফিরে গেলেন ১১তম ওভারে জেসন হোল্ডারের শিকার হয়ে। ডেভিড মিলারও এসে ১১ রানের বেশি করতে পারলেন না। তবে হেনড্রিকস ছিলেন বলেই হাল ছাড়েনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
শেষ ৩ ওভারে ৪৮ রান দরকার ছিল প্রোটিয়াদের। ১৮তম ওভারে ১৩ রান নিয়ে হিসেবটাকে ১২ বলে ৩৫ রানে নামিয়ে আনেন হেনড্রিকস-এইডেন মার্করাম জুটি।
কিন্তু ১৯তম ওভারের প্রথম বলেই হেনড্রিকস আলজারি জোসেফকে ছক্কা মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়লেন রভম্যান পাওয়েলের হাতে। শেষ হয়ে গেল ৪৪ বলে ২ ছক্কা ও ১১ চারে ৮৩ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস।
ওই ওভারেই তৃতীয় বলে হেনরিখ ক্লাসেন ক্যাচ দিলেন শেলডন কটরেলের হাতে, পঞ্চম বলে বোল্ড হয়ে গেলেন ওয়েইন পারনেল। ম্যাচ ঘুরে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকে। শেষ ওভারে ২৬ রানের হিসাব আর মেলাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। রায়মন রেইফারের ওই ওভার থেকে ১৮ রান নিয়েও থেমে যেতে হয় ৬ উইকেটে ২১৩ রানেই।