২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

দুঃখী হোবার্টে প্রাণ আনবে কি বাংলাদেশ

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভালো করার চ্যালেঞ্জটা কি নিতে পারবে বাংলাদেশছবি: বিসিবি

তাসমানিয়া আলাদা রাজ্য হলে কী হবে, এখানকার লোকেরা বলেন, এটা নাকি আস্ত একটা গ্রাম! অস্ট্রেলিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ। সন্ধ্যা হতে না হতেই সব চলে যায় নীরবতার গ্রাসে। এ রাজ্যে সবকিছুই সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আসে। তাই জিনিসপত্রের দাম দেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় বেশি। তার ওপর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কাও লেগেছে। পেট্রোলের মূল্য দুই ডলার ছুঁই ছুঁই। এসব নিয়ে মানুষের এন্তার অভিযোগ।

তবে অন্দরমহলের খবর না নিয়ে যদি শুধু পর্যটক হয়ে তাসমানিয়ার রাজধানী হোবার্টে ঘুরে বেড়ান, দ্বীপটাকে সুখী নীলগঞ্জের মতোই মনে হবে। ডারওয়েন্ট নদীর শান্ত জলরাশি বয়ে যায় শহরের বুক চিরে। এক পাশে ওয়েলিংটন পাহাড়, যেখানে গাড়িতে বা বাসে চড়ে পুরো হোবার্টটাকেই এক নজরে দেখে নেওয়া যায়। ‘হোবার্ট কেন বিখ্যাত’ খুঁজলে এই ওয়েলিংটন পাহাড়ের কথাই আগে পাবেন নেট দুনিয়ায়। যদিও এটি বিখ্যাত আরও এক কারণে। ১৯৭৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার সর্বপ্রথম ক্যাসিনোটা নাকি হয়েছিল এই শহরেই।

দূরে থাকা মানুষেরা নিজেদের সব সময় সুবিধাবঞ্চিত ভাবে। যে শহর থেকে দূরে, সে ভাবে—আহা, শহরেই সব সুখ! যে গ্রামে যেতে পারে না—তার কাছে গ্রামটাই হলো স্বর্গ। সোজা বাংলায়, নদীর এ কূল কহে ছাড়িয়া নিঃশ্বাস…। তাসমানিয়া আর হোবার্টের মানুষের হয়েছে সেই দশা। তাদের নাকি গর্ব করার মতো কিছুই নেই!

হোবার্টে পরশু টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করবে বাংলাদেশ। তারই প্রস্তুতি
ছবি: বিসিবি

অথচ যেগুলো বলা হলো, তার বাইরেও ঐশ্বর্য আছে হোবার্টের। অস্ট্রেলিয়ার প্রথম নারী নোবেলজয়ী প্রফেসর এলিজাবেথ ব্ল্যাকবার্নের বাড়ি হোবার্টে। ডেনমার্কের ক্রাউন প্রিন্সেস মেরি ডোনাল্ডসন হোবার্টের মানুষ। হলিউড তারকা অ্যারল ফিনের জন্মও এখানেই। ঐতিহ্যগত আর আধুনিক শিল্পকর্মের যুগল প্রদর্শনীর জন্য বিখ্যাত হোবার্টের মোনা মিউজিয়াম। মেঘে ঢাকা পাহাড় আর সমুদ্রের মেলবন্ধনে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আছেই।

এরপরও তাসমানদের ‘কিছু নেই কিছু নেই’ আফসোসটা বোধগম্য নয়। হ্যাঁ, তাঁরা বলতে পারেন, অস্ট্রেলিয়া এত বছর ধরে ক্রিকেট খেলছে, অথচ এ অঞ্চল থেকে এখন পর্যন্ত শুধু রিকি পন্টিংকেই অধিনায়ক করা হয়েছে। কিন্তু তাসমানিয়া থেকে উঠে আসা ক্রিকেটারদের তালিকা হাতে নিলে দেখা যায়, সেটিও কম সমৃদ্ধ নয়।

পন্টিংদের আগের প্রজন্মের ডেভিড বুনই বলুন বা পরের টিম পেইন-জর্জ বেইলি-ম্যাথু ওয়েড—তাসমানিয়া থেকে উঠে আসা ক্রিকেটের বড় মুখও কম নেই। এঁদের মধ্যে শেষের তিনজন তো রাজধানী হোবার্টেরই মানুষ।

অস্ট্রেলিয়ায় একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা
ছবি: সংগৃহীত

সে তুলনায় বরং হোবার্টের মানুষের লোকজনের মধ্যেই ক্রিকেট নিয়ে মাতামাতিটা কম মনে হচ্ছে। শহরের বেলেরিভ ওভালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ছয়টি ম্যাচ হচ্ছে, অথচ কাল এমন দু-চারজনও পাওয়া গেল, যাঁদের এ নিয়ে কোনো ধারণাই নেই। অবশ্য সেটা হতে পারে হোবার্টে অস্ট্রেলিয়ার কোনো ম্যাচ পড়েনি বলে।

শুধু অস্ট্রেলিয়া কেন, বিশ্ব ক্রিকেটের সব প্রান্তেই যে দুই দেশের দর্শকেরা গ্যালারি কাঁপিয়ে বেড়ান, সেই ভারত বা পাকিস্তান দলও আসবে না হোবার্টে খেলতে। বলতে পারেন, হোবার্টে বাংলাদেশের তো খেলা আছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পরশু বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচ সাকিব-লিটনরা খেলবেন বেলেরিভ ওভালে। প্রতিপক্ষ যেহেতু সহজ, বিশ্বকাপ শুরুর উৎসবটা নিশ্চয়ই জয় দিয়ে করতে চাইবে বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ার বৃহৎ বাংলাদেশি সমাজ তো ঠিকই সেদিন হোবার্টের বিশ্বকাপে নিজেদের উপস্থিতি জনিয়ে দেবে!

টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মাঠে নামার আগে প্রস্তুতি সেরে নিচ্ছে বাংলাদেশ দল
ছবি: সংগৃহীত

অবশ্য বাংলাদেশের জয়ের মতোই এটা একটা আশামাত্র, নিশ্চিত কিছু নয়। কারণ, সিডনি-মেলবোর্নে যে রকম প্রচুর বাংলাদেশি আছেন, সেটা হোবার্টে নেই। বলতে গেলে নেই-ই। পরশু রাতে বাংলাদেশ দলকে সমর্থন দিতে যাঁরা আসবেন, তাঁদের বেশির ভাগই আসবেন অন্য শহর থেকে হোবার্টের অতিথি হয়ে।

কে জানে, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ প্রাণ সঞ্চার করতে পারছে না বলেও হোবার্টের মন খারাপ কি না। গত কয়েক দিন ঠান্ডায় জবুথবু হোবার্ট কাল ২০ ডিগ্রির উষ্ণতা পেয়েও যেন ঠিক হাস্যোজ্জ্বল নয়। তার ওপর গতকাল রাত থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। ওদিকে ব্রিসবেন থেকেও বৃষ্টি মাথায় নিয়েই আজ এই শহরে আসবে বাংলাদেশ দল। ‘বৃষ্টি মাথায়’ বলার কারণ, ব্রিসবেনে বৃষ্টির কারণে অনুশীলন করতে না পারা বাংলাদেশ দলের পরশুর ম্যাচেও আছে বৃষ্টির শঙ্কা।

তাতে যদি ম্যাচটা বিঘ্নিতই হয়ে যায়, হোবার্টের চেয় কম মন খারাপ হবে না বাংলাদেশের। এবারের বিশ্বকাপে এই প্রথম ম্যাচটাই তো শুধু আছে, যেটি নিয়ে আগে থেকে জয়ের কল্পনা করতে পারে বাংলাদেশ। নইলে বাংলাদেশের অবস্থা তো অনেকটা তাসমানিয়া আর হোবার্টের মতোই। খালি নেই আর নেই।

দুটির পার্থক্য হলো তাসমানিয়ার থেকেও নেই, বাংলাদেশের আসলেই নেই।