দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে কাল বড় ব্যবধানে হেরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা। প্রথমে ব্যাটিং করে মাত্র ৭৭ রানে অলআউট হয় লঙ্কানরা। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়নদের নিউইয়র্কের সেই ম্যাচে তড়িঘড়ি করেই সারতে হয়েছে সংবাদ সম্মেলন। দ্রুত হোটেলে ফিরে বিমানবন্দরে যাওয়ার তাড়া ছিল যে দলটির। নিউইয়র্কে ম্যাচ খেলেই ডালাসের পথে উড়াল দিতে হয়েছে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার দলকে, যেখানে বাংলাদেশ সময় ৮ জুন সকালে বাংলাদেশের সঙ্গে ম্যাচ খেলবে দলটি।
শুধু ম্যাচ শেষের এই তাড়াহুড়োই নয়, শ্রীলঙ্কা ভুগেছে ম্যাচের আগেও। মায়ামি থেকে নিউইয়র্কে যাওয়ার পথে মায়ামি বিমানবন্দরে ফ্লাইট বিপর্যয়ের কারণে সাত ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছিল দলটিকে। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ও স্পিনার মহীশ তিকশানা তো সরাসরিই বললেন, অন্যায্য সূচি ও লজিস্টিকাল অব্যবস্থাপনার শিকার হয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া দলটির ম্যানেজার মাহিন্দ হালানগোদা বলেছেন, আইসিসির কাছে এ নিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছে শ্রীলঙ্কা দল।
তবে শ্রীলঙ্কার ম্যানেজার এটাও বলেছেন, অভিযোগ করতে বড্ড দেরি করে ফেলেছেন। এ নিয়ে এখন আর কিছু করার নেই বলেই মনে করছেন হালানগোদা।
এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম পর্বে ২০ দলের মধ্যে মাত্র দুটি দল চারটি ম্যাচ খেলবে চার ভেন্যুতে। সেই দুই দলের একটি শ্রীলঙ্কা, অন্যটি নেদারল্যান্ডস। এ দুই দলই আছে গ্রুপ ‘ডি’তে, যে গ্রুপে অন্য তিনটি দল বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নেপাল।
শ্রীলঙ্কা ও নেদারল্যান্ডসকে যেখানে চার ভেন্যুতে খেলতে হচ্ছে চার ম্যাচ, সেখানে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিউইয়র্কেই খেলবে তিনটি করে ম্যাচ। ওই দুই দল স্টেডিয়ামের কাছেই হোটেল পেয়েছে। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কাকে নিউইয়র্কে উঠতে হয়েছিল মাঠ থেকে দেড় ঘণ্টার দূরত্বের এক হোটেলে। সকালে ম্যাচ হওয়ায় ব্রুকলিনের সেই হোটেল থেকে মাঠে যেতে ও মাঠ থেকে ফিরতে ভালোই ঝামেলা হয়েছে শ্রীলঙ্কার।
আমাদের জন্য এটা অন্যায্য হয়ে গেছে। প্রতিটি ম্যাচের পরই আমাদের দৌড়াতে হবে। কারণ, চারটি ভিন্ন ভেন্যুতে খেলা পড়েছে আমাদের। এটা অন্যায়।
কাল শ্রীলঙ্কাকে সকাল সাতটায় নাশতা না করেই হোটেল ছাড়তে হয়েছিল। তবে হাসারাঙ্গা, তিকশানা ও হালানগোদাদের কেউই দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হারের জন্য যাতায়াতের এই সমস্যাকে কারণ দেখাতে রাজি হননি।
তিকশানা ম্যাচের পর নিজেদের কষ্টের কথা বলেন, ‘আমাদের জন্য এটা অন্যায্য হয়ে গেছে। প্রতিটি ম্যাচের পরই আমাদের দৌড়াতে হবে। কারণ, চারটি ভিন্ন ভেন্যুতে খেলা পড়েছে আমাদের। এটা অন্যায়। ফ্লোরিডার মায়ামি থেকে ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরে আট ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হলো। রাত ৮টার ফ্লাইট পেলাম ভোর ৫টায়। এটা অন্যায্য, তবে খেলায় এর প্রভাব পড়েনি।’
মায়ামিতে দেরি হওয়াতেই ম্যাচের আগের অনুশীলন বাতিল করে শ্রীলঙ্কা। কেন, তিকশানা সেই ব্যাখ্যায় বলেন, ‘হোটেল থেকে অনুশীলনের ভেন্যু ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের পথ। আজ ম্যাচের দিনে তো ভোর ৫টায় উঠতে হয়েছে এখানে আসার জন্য।’
চার ভেন্যুতে চার ম্যাচ। এটা কঠিনই। এখানকার কন্ডিশন আমাদের জানা ছিল না। নিউইয়র্কে তো এটাই আমাদের প্রথম ম্যাচ ছিল। পরের ম্যাচ ডালাসে, সেখানকার কিছুও জানা নেই আমাদের।
দুটি দল যে মাঠের কাছেই হোটেল পেয়েছে, সেটিও বললেন তিকশানা, ‘মাঠ থেকে মাত্র ১৪ মিনিটের দূরত্বে যে দুটি দল হোটেল পেয়েছে, তাদের নাম নাই–বা বললাম। আমাদের দূরত্ব ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিটের। ওই দুটি দল একই ভেন্যুতে খেলবে, তাই কন্ডিশনও ওদের জানা থাকবে। একই ভেন্যুতে তারা অনুশীলন ম্যাচও খেলেছে। আর কেউ এমন সুবিধা পায়নি। আমরা ফ্লোরিডায় অনুশীলন ম্যাচ খেলেছি, আবার সেখানে খেলব তৃতীয় ম্যাচটি। পরেরবার সবাই এ নিয়ে চিন্তা করবে বলে আশা করছি। এ বছর তো আর কিছু বদলানোর সুযোগ নেই।’
হাসারাঙ্গাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, লজিস্টিকস সমস্যার কারণেই শ্রীলঙ্কার এমন পারফরম্যান্স কি না। উত্তরে হাসারাঙ্গা এটাকেই বড় কারণ হিসেবে দেখাতে রাজি হলেন না, ‘আমরা এমনটা বলতে পারি না। কয়েকটা দিন খুব কঠিন ছিল। চার ভেন্যুতে চার ম্যাচ। এটা কঠিনই। এখানকার কন্ডিশন আমাদের জানা ছিল না। নিউইয়র্কে তো এটাই আমাদের প্রথম ম্যাচ ছিল। পরের ম্যাচ ডালাসে, সেখানকার কিছুও জানা নেই আমাদের। পরের ম্যাচটা ফ্লোরিডায়, সেখানে আমরা দুটি ম্যাচ খেলেছি। আমাদের জন্য একমাত্র ভালো খবর এটিই।’